১৯ তম অধ্যায় : জিহাদ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ

জিহাদের মর্মার্থ

জিহাদ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। সাধারণ অর্থে একে ন্যায় প্রতিষ্ঠাকল্পে অন্যায়ের বিরূদ্ধে লড়াই বুঝায়। বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ফেতনা–ফ্যাসাদ দূরীভূত করার জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত যুদ্ধই জিহাদ নামে পরিচিত। আল্লাহর দ্বীন এবং ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করাই জিহাদের মূল লক্ষ্য। সার্বিক অর্থে আল্লাহর পথে সব চেষ্টা, সাধনা, পরিশ্রম ও সংগ্রাম জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। যারা কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে সৎ চিন্তা ও কর্মের চেষ্টা ও সাধনায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে তাদেরকে আল্লাহ্ সৎ পথের দিশা দেন।

নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ: নফসকে অর্থাৎ নিজ ব্যক্তিসত্তাকে নিয়ন্ত্রণ, পরিশুদ্ধ ও কলুষমুক্ত রাখার জন্য মু’মিনের অন্তরে যে নিরন্তর সংগ্রাম ও চেষ্টা–সাধনা চলতে থাকে তাই হলো ‘নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ’। প্রবৃত্তি দলনে  নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে হাদীস শরীফে ‘বড় জিহাদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তিরমিজী ও ইবনে মাজা হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন, ‘মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে সর্বশক্তিমান মহামহিম আল্লাহর আনুগত্য পালনে নিজ নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে’। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওতি জীবনের মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে তিনি সার্বক্ষণিক নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে নিয়োজিত ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ লাভ করেন অপরিসীম ধৈর্য, সংযম ও ঈমানী দৃঢ়তা।

 

জিহাদ কখনোই জঙ্গীবাদ নয়

ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং মুসলমানগণ একটি মধ্যমপন্থী জাতি। উগ্রবাদ বা চরমপন্থ ইসলামের নীতি নয়। তাই ইসলাম কখনোই ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ ও অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে না। ইসলামের সশস্ত্র জিহাদ শুধু আত্মরক্ষার্থে জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাকল্পে। ইসলামের বিরুদ্ধবাদীগণ তাদের হীন স্বার্থে জিহাদকে উগ্রবাদ বা জঙ্গীবাদ বলে আখ্যায়িত করার প্রয়াস চালায়। পশ্চিমা শক্তি বিভিন্ন দেশে  নিজেদের সন্ত্রাসী ও মানববিধ্বংসী কার্যক্রমকে যৌক্তিক করার জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ায়। আর এর বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ায় তাদেরকে তারা জঙ্গী বলে আখ্যায়িত করে। এটা তাদের এক জঘন্য ভন্ডামী। ইসরাইল কর্তৃক প্যালেস্টাইনের মুসলিমদরে উপর অব্যাহত নৃশংসতা ও গণহত্যা এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। পশ্চিমা শক্তি কর্তৃক ইসরাইলের এ ধরণের কুখ্যাত কর্মকান্ডের প্রতি সমর্থন তাদের দ্বিচারী নীতির আরেক উদাহরণ।

অধিকন্তু তারা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অজুহাত সৃষ্টি করে মুসলিম দেশগুলোতে আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্যে  কূটকৌশলে কিছুসংখ্যক বিভ্রান্ত মুসলিম নামধারী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে উগ্রবাদী গোষ্টি তৈরী করে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটায়। আল-কায়েদা ও আইএসআইএস, ইত্যাদি সন্ত্রাসীগোষ্টি তাদেরই পৃষ্টপোষকতা ও মদদপুষ্ট। এর প্রমাণ আমরা পাই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তাদের আগ্রাসী কার্যকলাপের মধ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে আগ্রাসন চালিয়ে থাকে।  বিগত কয়েক দশক ধরে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও আফগানিস্তানে তারা তাদের দুরভিসন্ধিমূলক আগ্রাসী তান্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের কুকর্ম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত একটি আয়াতে মুসলমানদেরকে সাবধান করে আল্লাহ্ বলেন:

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ ۝ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـٰكِن لَّا يَشْعُرُونَ ۝
“আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা–হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।” (২:১১–১২)
ইসলাম শান্তির ধর্ম, জঙ্গীবাদ ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। বরং ইসলামের শত্রুরাই এ ধরনের কর্মকান্ডে উসকানিদাতা। পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো এ কথাই প্রমাণ করে যে, ইসলামে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই:

مَنْ قَتَلَ نَفْسًۢا بِغَیْرِ نَفْسٍ اَوْ فَسَادٍ فِی الْاَرْضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیْعًا ؕ وَمَنْ اَحْیَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحْیَا النَّاسَ جَمِیْعًا ؕ ۝

“……. যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। …..” (৫:৩২)

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ ۖ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ ۖ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللَّهِ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ ۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَـٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
“সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে–হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” (২:২১৭)

وَ قَاتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ الَّذِیْنَ یُقَاتِلُوْنَکُمْ وَلَا تَعْتَدُوْا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الْمُعْتَدِیْنَ ۝

“আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (২:১৯০).

لَا اِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ

“ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য–বাধকতা নেই। …” (২:২৫৬)

وَ لَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالْحَقِّ ؕ

“সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত।” (১৭:৩৩)

 وَلَا تَقْتُلُوْۤا اَنْفُسَکُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِکُمْ رَحِیْمًا ۝ وَمَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِیْهِ نَارًا ؕ وَكَانَ ذٰلِكَ عَلَی اللّٰهِ یَسِیْرًا ۝

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।” (৪:২৯ – ৩০)

 

ইসলামে কখনও যুদ্ধাপরাধ সমর্থন করে না

ইসলাম শান্তিপূর্ণ ও মধ্যমপন্থী ধর্ম। কোন বাড়াবাড়ি ও প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। নির্বিচারে গণহত্যা, যুদ্ধে নিহত মৃতদেহের বিকৃতি ও অবমাননা, যুদ্ধ বন্দীদের সাথে প্রতিহিংসাপরায়ণ ও অন্যায় আচরণ, সন্ধির আহ্বান সত্ত্বেও আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া, শিশু, নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, ধর্মযাজক ও যারা যুদ্ধের সাথে সরাসরি যুক্ত নয় এমন ধরনের মানুষকে হত্যা করা এবং বাগান, বৃক্ষ, ফসল ও প্রাণী সম্পদের ধ্বংস সাধন, ইত্যাদি ইসলামে নিষিদ্ধ। যুদ্ধবন্ধীদের সাথে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ ইসলামের এক বিশেষ সৌন্দর্য। অথচ আজকের বিশ্বে পশ্চিমা শক্তি বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের নামে যে বর্বরতা, নৃশংসতা, গণহত্যা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তা মানবতার বিরুদ্ধে এক জঘণ্য অপরাধ।  প্রথম মহাযুদ্ধ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, প্যালেস্টাইন, ভিয়েতনাম, বসনিয়া, ইরাক ও আফগান এবং অতিসম্প্রতি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের চিত্র এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এসব যুদ্ধে তারা এমন সব মরণাস্ত্র ব্যবহার করেছে যা মানব সভ্যতা বিধ্বংসী।

পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে উল্লেখিত আয়াতসমূহ নিম্নে পেশ করা হলো:

وَ قَاتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ الَّذِیْنَ یُقَاتِلُوْنَکُمْ وَ لَا تَعْتَدُوْا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الْمُعْتَدِیْنَ ۝

“আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (২:১৯০)

یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الشَّہْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِیْهِ ؕ قُلْ قِتَالٌ فِیْهِ كَبِیْرٌ ؕ وَ صَدٌّ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ کُفْرٌۢ بِہٖ وَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ٭ وَ اِخْرَاجُ اَهْلِہٖ مِنْهُ اَکْبَرُ عِنْدَ اللّٰهِ ۚ وَ الْفِتْنَۃُ اَکْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ
“সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। ….” (২:২১৭)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর — এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।” (৫:৮)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ۚ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَىٰ بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَىٰ أَن تَعْدِلُوا ۚ وَإِن تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا۝
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা–মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা–বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত।” (৪:১৩৫)
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَـٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا۝ الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا۝
“আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” (৪:৭৫–৭৬)
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ۝
“আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতে সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য?” (১০:৯৯)
الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ۝
“(বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ পাক যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত।” (৪:২৭)
وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ۝ وَإِذَا قِيلَ لَهُ اتَّقِ اللَّهَ أَخَذَتْهُ الْعِزَّةُ بِالْإِثْمِ ۚ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمُ ۚ وَلَبِئْسَ الْمِهَادُ۝
“যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা–হাঙ্গামা পছন্দ করেন না। আর যখন তাকে বলা হয় যে, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার পাপ তাকে অহঙ্কারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং তার জন্যে দোযখই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে তা হলো নিকৃষ্টতর ঠিকানা।” (২:২০৫–২০৬)
فَإِنِ اعْتَزَلُوكُمْ فَلَمْ يُقَاتِلُوكُمْ وَأَلْقَوْا إِلَيْكُمُ السَّلَمَ فَمَا جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ عَلَيْهِمْ سَبِيلًا
“….. অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদের কে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি।” (৪:৯০)

জিহাদের অনুমতি সংক্রান্ত আয়াতসমূহ 

হিজরতের পর মাদীনায় যখন একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ইসলাম এক ত্রিমুখী ষড়যন্ত্র ও আক্রমণের শিকার হয়। মক্কার কোরাইশগণ মদীনার মোনাফিক ও পার্শ্ববির্তী ইহুদীগণের সহায়তায় ইসলামকে মদীনা থেকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করে। ইসলাম-বিদ্বেষী ইহুদীগণ স্বতঃ-প্রণোদিত হয়ে কুরাইশদেরকে সর্বাত্মক সমর্থন জানায়। এ বিরূপ পরিস্থিতিতে আল্লাহ্  তাঁর নবী (সা) কে সশস্ত্র জিহাদের অনুমতি প্রদান করেন।

اُذِنَ لِلَّذِیْنَ یُقٰتَلُوْنَ بِاَنَّهُمْ ظُلِمُوْا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی نَصْرِهِمْ لَقَدِیْرُۨ ۝ الَّذِیْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ بِغَیْرِ حَقٍّ اِلَّاۤ اَنْ یَّقُوْلُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ؕ وَ لَوْ لَا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَ بِیَعٌ وَّ صَلَوٰتٌ وَّ مَسٰجِدُ یُذْكَرُ فِیْهَا اسْمُ اللّٰهِ كَثِیْرًا ؕ وَ لَیَنْصُرَنَّ اللّٰهُ مَنْ یَّنْصُرُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَقَوِیٌّ عَزِیْزٌ ۝

“যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্জন গির্জা, ইবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।” (২২:৩৯ – ৪০)

وَ مَا لَکُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الْمُسْتَضْعَفِیْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الْوِلْدَانِ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْیَۃِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا ۚ وَ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّا ۚۙ وَّاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِیْرًا ۝ اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ۚ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِیَآءَ الشَّیْطٰنِ ۚ اِنَّ كَیْدَ الشَّیْطٰنِ كَانَ ضَعِیْفًا۝

“আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। যারা ঈমানদার তারা যে জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে। সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” (৪:৭৫ – ৭৬)

وَ جَاهِدُوْا فِی اللّٰهِ حَقَّ جِهَادِہٖ ؕ هُوَ اجْتَبٰىکُمْ ….

“….. এবং তোমরা আল্লাহর জন্যে সংগ্রাম কর যেভাবে সংগ্রাম করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন।” (২২:৭৮)

وَ الَّذِیْنَ جَاهَدُوْا فِیْنَا لَنَہْدِیَنَّهُمْ سُبُلَنَا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِیْنَ

“যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।” (২৯:৬৯)

یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُسَارِعُوْنَ فِی الْخَیْرٰتِ ؕ وَ اُولٰٓئِكَ مِنَ الصّٰلِحِیْنَ ۝

“তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল।” (৩:১১৪)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَ صَابِرُوْا وَ رَابِطُوْا ۟ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمْ تُفْلِحُوْنَ۝

“হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।” (৩:২০০)

فَقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ۚ لَا تُكَلَّفُ اِلَّا نَفْسَكَ وَ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِیْنَ ۚ عَسَی اللّٰهُ اَنْ یَّکُفَّ بَاْسَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا ؕ وَ اللّٰهُ اَشَدُّ بَاْسًا وَّ اَشَدُّ تَنْكِیْلًا۝

“আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি–সামর্থ্য খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি–সামর্থ্যরে দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা।” (৪:৮৪)

وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ ؕ اِلَّا تَفْعَلُوْهُ تَکُنْ فِتْنَۃٌ فِی الْاَرْضِ وَ فَسَادٌ كَبِیْرٌ ۝

“আর যারা কাফের তারা পারস্পরিক সহযোগী, বন্ধু। তোমরা যদি এমন ব্যবস্থা না কর, তবে দাঙ্গা–হাঙ্গামা বিস্তুার লাভ করবে এবং দেশময় বড়ই অকল্যাণ হবে।” (৮:৭৩)

 

জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্

‘যে লড়ে যায় আল্লাহর কালামকে বিজয়ী করার জন্যে সেই আল্লাহর পথে (জিহাদ করে)।’ (সহীহ বুখারী)।

মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য আল্লাহর পথে যে লড়াই তাকেই বলা হয় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ।  এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা গোটা পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের চেয়ে উত্তম।’ (সহীহ বুখারী)।  বৃহদার্থে সমাজিক কল্যাণে সৎ কাজের নির্দেশ  ও অসৎ কাজে বাধা দানও এর অন্তর্ভুক্ত। এতদসংক্রান্ত আয়াতগুলো নীচে পেশ করা হলো:

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ ثُمَّ لَمْ یَرْتَابُوْا وَ جٰهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصّٰدِقُوْنَ ۝

“তারাই মু’মিন , যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন–সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” (৪৯:১৫)

وَ قَاتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ ۝

“আল্লাহর পথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু শুনেন।” (২:২৪৪)

وَ لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ قُتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ اَمْوَاتًا ؕ بَلْ اَحْیَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ یُرْزَقُوْنَ۝

“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।” (৩:১৬৯)

وَ قَاتِلُوْهُمْ حَتّٰی لَا تَکُوْنَ فِتْنَۃٌ وَّ یَکُوْنَ الدِّیْنُ کُلُّہٗ لِلّٰهِ ۚ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللّٰهَ بِمَا یَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ ۝ وَ اِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ مَوْلٰىکُمْ ؕ نِعْمَ الْمَوْلٰی وَ نِعْمَ النَّصِیْرُ ۝

“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। আর তারা যদি না মানে, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের সমর্থক; এবং কতই না চমৎকার সাহায্যকারী।” (৮:৩৯ – ৪০)

وَ لَا یُنْفِقُوْنَ نَفَقَۃً صَغِیْرَۃً وَّ لَا كَبِیْرَۃً وَّ لَا یَقْطَعُوْنَ وَادِیًا اِلَّا کُتِبَ لَهُمْ لِیَجْزِیَهُمُ اللّٰهُ اَحْسَنَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ ۝

“আর তারা অল্প–বিস্তুর যা কিছু ব্যয় করে, (আল্লাহর পথে) যত প্রান্তর তারা অতিক্রম করে, তা সবই তাদের নামে লেখা হয়, যেন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মসমূহের উত্তম বিনিময় প্রদান করেন।” (৯:১২১)

اَلَمْ تَرَ اِلَی الَّذِیْنَ قِیْلَ لَهُمْ کُفُّوْۤا اَیْدِیَکُمْ وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ ۚ فَلَمَّا کُتِبَ عَلَیْهِمُ الْقِتَالُ اِذَا فَرِیْقٌ مِّنْهُمْ یَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْیَۃِ اللّٰهِ اَوْ اَشَدَّ خَشْیَۃً ۚ وَ قَالُوْا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَیْنَا الْقِتَالَ ۚ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنَاۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیْبٍ ؕ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْیَا قَلِیْلٌ ۚ وَ الْاٰخِرَۃُ خَیْرٌ لِّمَنِ اتَّقٰی ۟ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ فَتِیْلًا ۝ اَیْنَ مَا تَکُوْنُوْا یُدْرِکْکُّمُ الْمَوْتُ وَ لَوْ کُنْتُمْ فِیْ بُرُوْجٍ مُّشَیَّدَۃٍ ؕ وَ اِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَۃٌ یَّقُوْلُوْا هٰذِہٖ مِنْ عِنْدِ اللّٰهِ ۚ وَ اِنْ تُصِبْهُمْ سَیِّئَۃٌ یَّقُوْلُوْا هٰذِہٖ مِنْ عِنْدِكَ ؕ قُلْ کُلٌّ مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ ؕ فَمَالِ هٰۤؤُلَآءِ الْقَوْمِ لَا یَكَادُوْنَ یَفْقَهُوْنَ حَدِیْثًا ۝

“তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি জেহাদের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। (হে রাসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সুতা পরিমানও খর্ব করা হবে না। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুত তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।” (৪:৭৭ – ৭৮)

 وَ اقْتُلُوْهُمْ حَیْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَ اَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَیْثُ اَخْرَجُوْکُمْ وَ الْفِتْنَۃُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ۚ وَلَا تُقٰتِلُوْهُمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتّٰی یُقٰتِلُوْکُمْ فِیْهِ ۚ فَاِنْ قٰتَلُوْکُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ ؕ كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْکٰفِرِیْنَ ۝

“আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুত ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা–হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।” (২:১৯১)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا لَقِیْتُمْ فِئَۃً فَاثْبُتُوْا وَ اذْکُرُوا اللّٰهَ كَثِیْرًا لَّعَلَّکُمْ تُفْلِحُوْنَ ۝ وَ اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ وَ لَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَ تَذْهَبَ رِیْحُکُمْ وَ اصْبِرُوْا ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ ۝ وَ لَا تَکُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ بَطَرًا وَّ رِئَآءَ النَّاسِ وَ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا یَعْمَلُوْنَ مُحِیْطٌ ۝

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার। আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। আর তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বেরিয়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে গর্বিতভাবে এবং লোকদেরকে দেখাবার উদ্দেশে। আর আল্লাহর পথে তারা বাধা দান করত। বস্তুত আল্লাহর আয়ত্বে রয়েছে সে সমস্ত বিষয় যা তারা করে।” (৮:৪৫ – ৪৭)

کُتِبَ عَلَیْکُمُ الْقِتَالُ وَ هُوَ کُرْہٌ لَّکُمْ ۚ وَ عَسٰۤی اَنْ تَکْرَهُوْا شَیْئًا وَّ هُوَ خَیْرٌ لَّکُمْ ۚ وَ عَسٰۤی اَنْ تُحِبُّوْا شَیْئًا وَّ هُوَ شَرٌّ لَّکُمْ ؕ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ وَ اَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ ۝ یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الشَّہْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِیْهِ ؕ قُلْ قِتَالٌ فِیْهِ كَبِیْرٌ ؕ وَ صَدٌّ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ کُفْرٌۢ بِہٖ وَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ٭ وَ اِخْرَاجُ اَهْلِہٖ مِنْهُ اَکْبَرُ عِنْدَ اللّٰهِ ۚ وَ الْفِتْنَۃُ اَکْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ ؕ وَ لَا یَزَالُوْنَ یُقَاتِلُوْنَکُمْ حَتّٰی یَرُدُّوْکُمْ عَنْ دِیْنِکُمْ اِنِ اسْتَطَاعُوْا ؕ وَ مَنْ یَّرْتَدِدْ مِنْکُمْ عَنْ دِیْنِہٖ فَیَمُتْ وَ هُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِی الدُّنْیَا وَ الْاٰخِرَۃِ ۚ وَ اُولٰٓئِكَ اَصْحٰبُ النَّارِ ۚ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ ۝ اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ الَّذِیْنَ هَاجَرُوْا وَ جٰهَدُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ۙ اُولٰٓئِكَ یَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝

“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে–হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুত তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে। আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী করুণাময়।” (২:২১৬ – ২১৮)

قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُکُمْ وَ اَبْنَآؤُکُمْ وَ اِخْوَانُکُمْ وَ اَزْوَاجُکُمْ وَ عَشِیْرَتُکُمْ وَ اَمْوَالُۨ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَ تِجَارَۃٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَ مَسٰكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَیْکُمْ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ وَ جِهَادٍ فِیْ سَبِیْلِہٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰی یَاْتِیَ اللّٰهُ بِاَمْرِہٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَہْدِی الْقَوْمَ الْفٰسِقِیْنَ۝

“(হে নবী) বলুন, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা ও তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই ও তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন–সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান – যাকে তোমরা পছন্দ কর, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (৯:২৪)

لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مُعْجِزِیْنَ فِی الْاَرْضِ ۚ وَ مَاْوٰىهُمُ النَّارُ ؕ وَ لَبِئْسَ الْمَصِیْرُ ۝

“তোমরা কাফেরদেরকে পৃথিবীতে পরাক্রমশালী মনে করো না। তাদের ঠিকানা অগ্নি। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তনস্থল।” (২৪:৫৭)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَا لَکُمْ اِذَا قِیْلَ لَکُمُ انْفِرُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ اثَّاقَلْتُمْ اِلَی الْاَرْضِ ؕ اَرَضِیْتُمْ بِالْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا مِنَ الْاٰخِرَۃِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا فِی الْاٰخِرَۃِ اِلَّا قَلِیْلٌ ۝ اِلَّا تَنْفِرُوْا یُعَذِّبْکُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا ۬ۙ وَّ یَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَیْرَکُمْ وَ لَا تَضُرُّوْهُ شَیْئًا ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ۝

“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” (৯:৩৮ – ৩৯)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَکُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِیْعًا ۝ وَ اِنَّ مِنْکُمْ لَمَنْ لَّیُبَطِّئَنَّ ۚ فَاِنْ اَصَابَتْکُمْ مُّصِیْبَۃٌ قَالَ قَدْ اَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیَّ اِذْ لَمْ اَکُنْ مَّعَهُمْ شَهِیْدًا ۝ وَ لَئِنْ اَصَابَکُمْ فَضْلٌ مِّنَ اللّٰهِ لَیَقُوْلَنَّ كَاَنْ لَّمْ تَکُنْۢ بَیْنَکُمْ وَ بَیْنَہٗ مَوَدَّۃٌ یّٰلَیْتَنِیْ کُنْتُ مَعَهُمْ فَاَفُوْزَ فَوْزًا عَظِیْمًا ۝ فَلْیُقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ الَّذِیْنَ یَشْرُوْنَ الْحَیٰوۃَ الدُّنْیَا بِالْاٰخِرَۃِ ؕ وَ مَنْ یُّقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیُقْتَلْ اَوْ یَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِیْهِ اَجْرًا عَظِیْمًا ۝

“হে ঈমানদারগণ! নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড়। আর তোমাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবশ্য বিলম্ব করবে এবং তোমাদের উপর কোন বিপদ উপস্থিত হলে বলবে, আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে যাইনি। পক্ষান্তরে তোমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ আসলে তারা এমন ভাবে বলতে শুরু করবে যেন তোমাদের মধ্যে এবং তাদের মধ্যে কোন মিত্রতাই ছিল না। (বলবে) হায়, আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে আমিও যে সফলতা লাভ করতাম। কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুত যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।” (৪:৭১ – ৭৪)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ جَاهِدِ الْکُفَّارَ وَ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ اغْلُظْ عَلَیْهِمْ ؕ وَ مَاْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ۝

“হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।” (৬৬:৯)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ جَاهِدِ الْکُفَّارَ وَ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ اغْلُظْ عَلَیْهِمْ ؕ وَ مَاْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ۝

“হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের ঠিকানা হলো দোযখ এবং তা হলো নিকৃষ্ট ঠিকানা।” (৯:৭৩)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا لَقِیْتُمُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ ۝ وَ مَنْ یُّوَلِّهِمْ یَوْمَئِذٍ دُبُرَہٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَیِّزًا اِلٰی فِئَۃٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ مَاْوٰىهُ جَهَنَّمُ ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ۝

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাদপসরণ করবে, অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের নিকট আশ্রয় নিতে আসে সে ব্যতীত অন্যরা আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হল জাহান্নাম। বস্তুত সেটা হল নিকৃষ্ট অবস্থান।” (৮:১৫ – ১৬)

قَاتِلُوا الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ لَا بِالْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ لَا یُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗ وَ لَا یَدِیْنُوْنَ دِیْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ حَتّٰی یُعْطُوا الْجِزْیَۃَ عَنْ یَّدٍ وَّ هُمْ صٰغِرُوْنَ ۝

“তোমরা যুদ্ধ কর আহলে–কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।” (৯:২৯)

لَا یَسْتَوِی الْقٰعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ غَیْرُ اُولِی الضَّرَرِ وَالْمُجٰهِدُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ ؕ فَضَّلَ اللّٰهُ الْمُجٰهِدِیْنَ بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ عَلَی الْقٰعِدِیْنَ دَرَجَۃً ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰهُ الْحُسْنٰی ؕ وَ فَضَّلَ اللّٰهُ الْمُجٰهِدِیْنَ عَلَی الْقٰعِدِیْنَ اَجْرًا عَظِیْمًا ۝ دَرَجٰتٍ مِّنْهُ وَ مَغْفِرَۃً وَّ رَحْمَۃً ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا ۝

“সমান নয় – ঘরে বসে থাকা মুসলমান যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন। এগুলো তাঁর পক্ষ থেকে পদমর্যাদা, ক্ষমা ও করুণা; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” (৪:৯৫ – ৯৬)

وَ اَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّۃٍ وَّ مِنْ رِّبَاطِ الْخَیْلِ تُرْهِبُوْنَ بِہٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمْ وَ اٰخَرِیْنَ مِنْ دُوْنِهِمْ ۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمْ ۚ اَللّٰهُ یَعْلَمُهُمْ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَیْءٍ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیْکُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ ۝

“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” (৮:৬০)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ حَسْبُكَ اللّٰهُ وَ مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ ۝ یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِیْنَ عَلَی الْقِتَالِ ؕ اِنْ یَّکُنْ مِّنْکُمْ عِشْرُوْنَ صٰبِرُوْنَ یَغْلِبُوْا مِائَتَیْنِ ۚ وَ اِنْ یَّکُنْ مِّنْکُمْ مِّائَۃٌ یَّغْلِبُوْۤا اَلْفًا مِّنَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا یَفْقَهُوْنَ ۝

“হে নবী, আপনার জন্য এবং যেসব মুসলমান আপনার সাথে রয়েছে তাদের সবার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।” (৮:৬৪ – ৬৫)

اَلْـٰٔنَ خَفَّفَ اللّٰهُ عَنْکُمْ وَ عَلِمَ اَنَّ فِیْکُمْ ضَعْفًا ؕ فَاِنْ یَّکُنْ مِّنْکُمْ مِّائَۃٌ صَابِرَۃٌ یَّغْلِبُوْا مِائَتَیْنِ ۚ وَ اِنْ یَّکُنْ مِّنْکُمْ اَلْفٌ یَّغْلِبُوْۤا اَلْفَیْنِ بِاِذْنِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ ۝

“আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন এবং তিনি জেনে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু’হাজারের উপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত ধৈর্য্যশীল লোকদের সাথে।” (৮:৬৬)

مَا كَانَ لِنَبِیٍّ اَنْ یَّکُوْنَ لَہٗۤ اَسْرٰی حَتّٰی یُثْخِنَ فِی الْاَرْضِ ؕ تُرِیْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْیَا ٭ۖ وَاللّٰهُ یُرِیْدُ الْاٰخِرَۃَ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ ۝ لَوْ لَا كِتٰبٌ مِّنَ اللّٰهِ سَبَقَ لَمَسَّکُمْ فِیْمَاۤ اَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِیْمٌ ۝

“নবীর পক্ষে উচিত নয় বন্দীদিগকে নিজের কাছে রাখা, যতক্ষণ না দেশময় প্রচুর রক্তপাত ঘটাবে। তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর, অথচ আল্লাহ চান আখেরাত। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। যদি একটি বিষয় না হত যা পূর্ব থেকেই আল্লাহ লিখে রেখেছেন, তাহলে তোমরা যা গ্রহণ করছ সেজন্য বিরাট আযাব এসে পৌঁছাত।” (৮:৬৭ – ৬৮)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّمَنْ فِیْۤ اَیْدِیْکُمْ مِّنَ الْاَسْرٰۤی ۙ اِنْ یَّعْلَمِ اللّٰهُ فِیْ قُلُوْبِکُمْ خَیْرًا یُّؤْتِکُمْ خَیْرًا مِّمَّاۤ اُخِذَ مِنْکُمْ وَ یَغْفِرْ لَکُمْ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝ وَ اِنْ یُّرِیْدُوْا خِیَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللّٰهَ مِنْ قَبْلُ فَاَمْكَنَ مِنْهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ ۝

“হে নবী, তাদেরকে বলে দাও, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে যে, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে কোন রকম মঙ্গলচিন্তা রয়েছে বলে জানেন, তবে তোমাদেরকে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী দান করবেন যা তোমাদের কাছ থেকে বিনিময়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। আর যদি তারা তোমার সাথে প্রতারণা করতে চায় – বস্তুত তারা আল্লাহর সাথেও ইতিপূর্বে প্রতারণা করেছে, অতঃপর তিনি তাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত, সুকৌশলী।” (৮:৭০ – ৭১)

اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ هَاجَرُوْا وَ جٰهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الَّذِیْنَ اٰوَوْا وَّ نَصَرُوْۤا اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ۝

“এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক …..।” (৮:৭২)

وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ هَاجَرُوْا وَ جٰهَدُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الَّذِیْنَ اٰوَوْا وَّ نَصَرُوْۤا اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا ؕ لَهُمْ مَّغْفِرَۃٌ وَّرِزْقٌ كَرِیْمٌ ۝ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْۢ بَعْدُ وَ هَاجَرُوْا وَ جٰهَدُوْا مَعَکُمْ فَاُولٰٓئِكَ مِنْکُمْ ؕ وَ اُولُوا الْاَرْحَامِ بَعْضُهُمْ اَوْلٰی بِبَعْضٍ فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِکُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ ۝

“আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর–বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযেক। আর যারা ঈমান এনেছে পরবর্তী পর্যায়ে এবং ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং তোমাদের সাথে সম্মিলিত হয়ে জেহাদ করেছে, তারাও তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত যারা আত্মীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশী হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ে সক্ষম ও অবগত।” (৮:৭৪ – ৭৫)

اِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ ۟ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىۃِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ ؕ وَ مَنْ اَوْفٰی بِعَہْدِہٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِہٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ ۝

“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে: অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন–দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।” (৯:১১১)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِیْنَ یَلُوْنَکُمْ مِّنَ الْکُفَّارِ وَ لْیَجِدُوْا فِیْکُمْ غِلْظَۃً ؕ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِیْنَ ۝

“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।” (৯:১২৩)

اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْکُمْ وَ یَعْلَمَ الصّٰبِرِیْنَ۝

“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।” (৩:১৪২)

وَ لَنَبْلُوَنَّکُمْ حَتّٰی نَعْلَمَ الْمُجٰهِدِیْنَ مِنْکُمْ وَ الصّٰبِرِیْنَ ۙ وَ نَبْلُوَا۠ اَخْبَارَکُمْ۝

“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না প্রকাশ পায় তোমাদের জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থানসমূহ যাচাই করি।” (৪৭:৩১)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّکُمْ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنْجِیْکُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِیْمٍ ۝ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ وَ تُجَاهِدُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ بِاَمْوَالِکُمْ وَ اَنْفُسِکُمْ ؕ ذٰلِکُمْ خَیْرٌ لَّکُمْ اِنْ کُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ۝ یَغْفِرْ لَکُمْ ذُنُوْبَکُمْ وَ یُدْخِلْکُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ وَ مَسٰكِنَ طَیِّبَۃً فِیْ جَنّٰتِ عَدْنٍ ؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ ۝

“মু’মিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন–সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।” (৬১:১০ – ১২)

اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تُتْرَکُوْا وَ لَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْکُمْ وَ لَمْ یَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَ لَا رَسُوْلِہٖ وَ لَا الْمُؤْمِنِیْنَ وَلِیْجَۃً ؕ وَ اللّٰهُ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ۝

“তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি-এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” (৯:১৬)

فَکُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝

“সুতরাং তোমরা যে পরিচ্ছন্ন ও হালাল বস্তু অর্জন করেছ গনীমত হিসাবে তা থেকে তোমরা খাও। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।” (৮:৬৯)

وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَیْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَہٗ وَ لِلرَّسُوْلِ وَ لِذِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ ۙ اِنْ کُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰی عَبْدِنَا یَوْمَ الْفُرْقَانِ یَوْمَ الْتَقَی الْجَمْعٰنِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ۝

“আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু–সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম–অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল।” (৮:৪১)

 

 

যুদ্ধ-বিরতি ও সন্ধি-চুক্তি

وَ اِنْ جَنَحُوْا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَ تَوَكَلْ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّہٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ ۝ وَ اِنْ یُّرِیْدُوْۤا اَنْ یَّخْدَعُوْكَ فَاِنَّ حَسْبَكَ اللّٰهُ ؕ هُوَ الَّذِیْۤ اَیَّدَكَ بِنَصْرِہٖ وَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ ۝

“আর যদি তারা সন্ধি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে তুমিও সে দিকেই আগ্রহী হও এবং আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিঃসন্দেহে তিনি শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত। পক্ষান্তরে তারা যদি তোমাকে প্রতারণা করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে শক্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুসলমানদের মাধ্যমে।” (৮:৬১ – ৬২)

فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝ وَ قٰتِلُوْهُمْ حَتّٰی لَا تَکُوْنَ فِتْنَۃٌ وَّ یَکُوْنَ الدِّیْنُ لِلّٰهِ ؕ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ اِلَّا عَلَی الظّٰلِمِیْنَ ۝ اَلشَّہْرُ الْحَرَامُ بِالشَّہْرِ الْحَرَامِ وَ الْحُرُمٰتُ قِصَاصٌ ؕ فَمَنِ اعْتَدٰی عَلَیْکُمْ فَاعْتَدُوْا عَلَیْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدٰی عَلَیْکُمْ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِیْنَ ۝

“আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু। আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)। সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুত যারা তোমাদের উপর জবরদস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।” (২:১৯২ – ১৯৪)

اِلَّا الَّذِیْنَ یَصِلُوْنَ اِلٰی قَوْمٍۭ بَیْنَکُمْ وَ بَیْنَهُمْ مِّیْثَاقٌ اَوْ جَآءُوْکُمْ حَصِرَتْ صُدُوْرُهُمْ اَنْ یُّقَاتِلُوْکُمْ اَوْ یُقَاتِلُوْا قَوْمَهُمْ ؕ وَ لَوْ شَآءَ اللّٰهُ لَسَلَّطَهُمْ عَلَیْکُمْ فَلَقٰتَلُوْکُمْ ۚ فَاِنِ اعْتَزَلُوْکُمْ فَلَمْ یُقَاتِلُوْکُمْ وَ اَلْقَوْا اِلَیْکُمُ السَّلَمَ ۙ فَمَا جَعَلَ اللّٰهُ لَکُمْ عَلَیْهِمْ سَبِیْلًا ۝ سَتَجِدُوْنَ اٰخَرِیْنَ یُرِیْدُوْنَ اَنْ یَّاْمَنُوْکُمْ وَ یَاْمَنُوْا قَوْمَهُمْ ؕ کُلَّمَا رُدُّوْۤا اِلَی الْفِتْنَۃِ اُرْكِسُوْا فِیْهَا ۚ فَاِنْ لَّمْ یَعْتَزِلُوْکُمْ وَ یُلْقُوْۤا اِلَیْکُمُ السَّلَمَ وَ یَکُفُّوْۤا اَیْدِیَهُمْ فَخُذُوْهُمْ وَ اقْتُلُوْهُمْ حَیْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ ؕ وَ اُولٰٓئِکُمْ جَعَلْنَا لَکُمْ عَلَیْهِمْ سُلْطٰنًا مُّبِیْنًا ۝

“কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে এবং স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি। এখন তুমি আরও এক সম্প্রদায়কে পাবে। তারা তোমাদের কাছেও স্বজাতির কাছেও এবং নির্বিঘ্ন হয়ে থাকতে চায়। যখন তাদেরকে ফ্যাসাদের প্রতি মনোনিবেশ করানো হয়, তখন তারা তাতে নিপতিত হয়, অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়, তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্তসমূহকে বিরত না রাখে, তবে তোমরা তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি।” (৪:৯০ – ৯১)

اَلَّذِیْنَ عٰهَدْتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَہْدَهُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّۃٍ وَّ هُمْ لَا یَتَّقُوْنَ ۝ فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِی الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ یَذَّكَرُوْنَ ۝ وَ اِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِیَانَۃً فَانْۢبِذْ اِلَیْهِمْ عَلٰی سَوَآءٍ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الْخَآئِنِیْنَ ۝

“যাদের সাথে তুমি চুক্তি করেছ তাদের মধ্য থেকে অতঃপর প্রতিবার তারা নিজেদের কৃতচুক্তি লংঘন করে এবং ভয় করে না। সুতরাং যদি কখনো তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তাই দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয়। তবে কোন সম্প্রদায়ের ধোঁকা দেয়ার ব্যাপারে যদি তোমাদের ভয় থাকে, তবে তাদের চুক্তি তাদের দিকেই ছুঁড়ে ফেলে দাও এমনভাবে যেন হয়ে যাও তোমরাও তারা সমান। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধোঁকাবাজ, প্রতারককে পছন্দ করেন না।” (৮:৫৬ – ৫৮)

وَ اِنْ نَّكَثُوْۤا اَیْمَانَهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ عَہْدِهِمْ وَ طَعَنُوْا فِیْ دِیْنِکُمْ فَقَاتِلُوْۤا اَئِمَّۃَ الْکُفْرِ ۙ اِنَّهُمْ لَاۤ اَیْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ یَنْتَهُوْنَ ۝ اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْۤا اَیْمَانَهُمْ وَ هَمُّوْا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَ هُمْ بَدَءُوْکُمْ اَوَّلَ مَرَّۃٍ ؕ اَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللّٰهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ کُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ ۝ قَاتِلُوْهُمْ یُعَذِّبْهُمُ اللّٰهُ بِاَیْدِیْکُمْ وَ یُخْزِهِمْ وَ یَنْصُرْکُمْ عَلَیْهِمْ وَ یَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِیْنَ ۝

“আর যদি ভঙ্গ করে তারা তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রূপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তবে কুফর প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর। কারণ, এদের কোন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে। তোমরা কি সেই দলের সাথে যুদ্ধ করবে না; যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রসূলকে বহিস্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মু’মিন হও। যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।” (৯:১২ – ১৪)

وَ اِذَا جَآءَهُمْ اَمْرٌ مِّنَ الْاَمْنِ اَوِ الْخَوْفِ اَذَاعُوْا بِہٖ ؕ وَ لَوْ رَدُّوْهُ اِلَی الرَّسُوْلِ وَ اِلٰۤی اُولِی الْاَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِیْنَ یَسْتَنْۢبِطُوْنَہٗ مِنْهُمْ ؕ وَ لَوْ لَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَیْکُمْ وَ رَحْمَتُہٗ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّیْطٰنَ اِلَّا قَلِیْلًا ۝

“আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রাসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। বস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত।” (৪:৮৩)

وَ اِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِیْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰی یَسْمَعَ كَلٰمَ اللّٰهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَاْمَنَہٗ ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا یَعْلَمُوْنَ ۝ كَیْفَ یَکُوْنُ لِلْمُشْرِكِیْنَ عَہْدٌ عِنْدَ اللّٰهِ وَ عِنْدَ رَسُوْلِہٖۤ اِلَّا الَّذِیْنَ عٰهَدْتُّمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ فَمَا اسْتَقَامُوْا لَکُمْ فَاسْتَقِیْمُوْا لَهُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَّقِیْنَ ۝ كَیْفَ وَ اِنْ یَّظْهَرُوْا عَلَیْکُمْ لَا یَرْقُبُوْا فِیْکُمْ اِلًّا وَّ لَا ذِمَّۃً ؕ یُرْضُوْنَکُمْ بِاَفْوَاهِهِمْ وَ تَاْبٰی قُلُوْبُهُمْ ۚ وَ اَکْثَرُهُمْ فٰسِقُوْنَ ۝

“আর মুশরেকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শোনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না। মুশরেকদের চুক্তি আল্লাহর নিকট ও তাঁর রসূলের নিকট কিরূপে বলবৎ থাকবে। তবে যাদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পাদন করেছ মসজিদুল-হারামের নিকট। অতএব, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের জন্যে সরল থাকে, তোমরাও তাদের জন্য সরল থাক। নিঃসন্দেহের আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। কিরূপে? তারা তোমাদের উপর জয়ী হলে তোমাদের আত্মীয়তার ও অঙ্গীকারের কোন মর্যাদা দেবে না। তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট করে, কিন্তু তাদের অন্তরসমূহ তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।” (৯:৬ – ৮)

 

যুদ্ধবন্দীদের সাথে ন্যায্য ব্যবহার

যুদ্ধবন্দীদের সাথে আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর সদাচারণ মানবেতিহাসে অতুলনীয়। ইসলামের প্রথম যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বদর প্রান্তরে তা বদরের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে অল্পসংখ্যক মুসলমান বিশাল কুরাইশ বাহিনীর সাথে বিপুল জয়লাভ করেছিল। কোরাইশ বাহিনীর সত্তরজন মুসলিমদের হাতে বন্দী হয়েয়েছিল। এদের সাথে নবী (সা) এর ব্যবহার ছিল উদার, ন্যায্য ও মহৎ দৃষ্টান্তের নিদর্শন। তিনি তাদেরকে দু’টি বিকল্প দিয়েছিলেন — ‘হয় ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করো, নয় মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হও। আর যদি মুক্তিপণ দানে অপারগ হও তবে দশজন মদীনাবাসীকে সাক্ষরতা দান করে মুক্তি লাভ করো’ – যা ছিল মানবেতিহাসে অভূতপূর্ব নজীর। পশ্চিমা ইতিহাসবিদ উইলিয়াম মুয়ীর তাঁর রচিত ‘মুহাম্মদের জীবনী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন:

“মুহাম্মদের নির্দেশে মদীনাবাসী ও মুহাজিরদের মধ্যে যাদের বাসস্থান ছিল তারা যুদ্ধবন্দীদেরকে গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের সাথে সুবিবেচনাপ্রসূত আচরণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসব যুদ্ধবন্দীদের একজন বলেছিলেন, মদীনাবাসীদের উপর আশীর্বাদ! তাঁরা আমাদেরকে সওয়ারিতে বহন করিয়েছে আর নিজেরা হেঁটে চলেছে, তাঁরা আমাদেরকে আটার রুটি খাইয়েছে যখন এর স্বল্পতা ছিল, আর নিজেরা খেজুর খেয়ে সন্তুষ্ট থেকেছে।”

পবিত্র কুরআন যুদ্ধবন্দীদের সাথে সদয় আচরণের কথা বলেছে। এতদ্সংক্রান্ত আয়াতসমূহ নিম্নে পেশ করা হলো:

وَیُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّہٖ مِسْكِیْنًا وَ یَتِیْمًا وَ اَسِیْرًا ۝ اِنَّمَا نُطْعِمُکُمْ لِوَجْهِ اللّٰهِ لَا نُرِیْدُ مِنْکُمْ جَزَآءً وَلَا شُکُوْرًا۝ا

“তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’.” (৭৬:৮ – ৯)

وَاعْبُدُوا اللّٰهَ وَلَا تُشْرِکُوْا بِہٖ شَیْئًا وَبِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَبِذِی الْقُرْبٰی وَالْیَتٰمٰی وَالْمَسٰكِیْنِ وَالْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَابْنِ السَّبِیْلِ ۙ وَمَا مَلَكَتْ اَیْمَانُکُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا ۝

“আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা–মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম–মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস–দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক–গর্বিতজনকে।” (৪:৩৬)

 

 

যুদ্ধলব্ধ মালামালের বন্টন নীতি

যুদ্ধলব্ধ মালামালকে ’গণিমতের মাল’ বলা হয়। যুদ্ধে শত্রুপক্ষ যেসব মালামাল নিয়োজিত করে সেগুলো যখন মুসলমানদের হস্তগত হয় তখন তা হালালরূপে গণ্য হয়। গণিমতের মালামালের বিলিবন্টনের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট বিধি–বিধান জারী করেছেন। এসব মালামালের এক–পঞ্চমাংশ আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর (সা) হিস্যা – যা বন্টন হবে নবী (সা) ও তাঁর পরিবারবর্গের মধ্যে এবং এতীম, গরীব ও মুসাফিরগণের মধ্যে। বাকী চার–পঞ্চমাংশ বন্টন হবে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। আবু হুরাইরাহ (রা) বর্ণিত এক সহীহ হাদীসে আল্লাহর রসূল (সা) বলেন,  ‘গণিমতের মাল লাভের নিয়তে জিহাদে অংশগ্রহণ করার কোন সাওয়াব নেই।’ (মুসনাদ আহমদ ৭৮৪০)। কারণ গণিমতের মাল লাভ জিহাদের মূল লক্ষ্য নয়, এটা একটা গৌণ প্রাপ্তি।

এতদ্সংক্রান্ত আয়াতগুলো নিম্নে পেশকরা হলো:

یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْاَنْفَالِ ؕ قُلِ الْاَنْفَالُ لِلّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ۝

“তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।” (৮:১)

فَکُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَاتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝

“সুতরাং তোমরা খাও গনীমত হিসাবে তোমরা যে পরিচ্ছন্ন ও হালাল বস্তু অর্জন করেছ তা থেকে। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।” (৮:৬৯)

وَاعْلَمُوْۤا اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَیْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَہٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِی الْقُرْبٰی وَالْیَتٰمٰی وَالْمَسٰكِیْنِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ ۙ اِنْ کُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللّٰهِ وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰی عَبْدِنَا یَوْمَ الْفُرْقَانِ یَوْمَ الْتَقَی الْجَمْعٰنِ ؕ وَاللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ۝

“আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্নীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল।” (৮:৪১)

رَسُوْلِہٖ مِنْهُمْ فَمَاۤ اَوْجَفْتُمْ عَلَیْهِ مِنْ خَیْلٍ وَلَا رِكَابٍ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ یُسَلِّطُ رُسُلَہٗ عَلٰی مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَاللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ۝مَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ ۚ وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ۝

“আল্লাহ বনু-কনুযায়রের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যে ধন–সম্পদ দিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। ল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” (৫৯:৬–৭)

 

 

পূর্ববর্তী নবীদের জিহাদ

وَ كَاَیِّنْ مِّنْ نَّبِیٍّ قٰتَلَ ۙ مَعَہٗ رِبِّیُّوْنَ كَثِیْرٌ ۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ مَا ضَعُفُوْا وَ مَا اسْتَكَانُوْا ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیْنَ ۝ وَ مَا كَانَ قَوْلَهُمْ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ اِسْرَافَنَا فِیْۤ اَمْرِنَا وَ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَی الْقَوْمِ الْکٰفِرِیْنَ ۝ فَاٰتٰىهُمُ اللّٰهُ ثَوَابَ الدُّنْیَا وَ حُسْنَ ثَوَابِ الْاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ ۝ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تُطِیْعُوا الَّذِیْنَ كَفَرُوْا یَرُدُّوْکُمْ عَلٰۤی اَعْقَابِکُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خٰسِرِیْنَ ۝ بَلِ اللّٰهُ مَوْلٰىکُمْ ۚ وَ هُوَ خَیْرُ النّٰصِرِیْنَ ۝

“আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী–সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। তারা আর কিছুই বলেনি – শুধু বলেছে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করে দাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদিগকে দৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের উপর আমাদিগকে সাহায্য কর।’ অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার সওয়াব দান করেছেন এবং যথার্থ আখেরাতের সওয়াব। আর যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। বরং আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী, আর তাঁর সাহায্যই হচ্ছে উত্তম সাহায্য।” (৩:১৪৬ – ১৫০)

فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوْتُ بِالْجُنُوْدِ ۙ قَالَ اِنَّ اللّٰهَ مُبْتَلِیْکُمْ بِنَهَرٍ ۚ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَیْسَ مِنِّیْ ۚ وَ مَنْ لَّمْ یَطْعَمْهُ فَاِنَّہٗ مِنِّیْۤ اِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَۃًۢ بِیَدِہٖ ۚ فَشَرِبُوْا مِنْهُ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْهُمْ ؕ فَلَمَّا جَاوَزَہٗ هُوَ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَہٗ ۙ قَالُوْا لَا طَاقَۃَ لَنَا الْیَوْمَ بِجَالُوْتَ وَ جُنُوْدِہٖ ؕ قَالَ الَّذِیْنَ یَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلٰقُوا اللّٰهِ ۙ كَمْ مِّنْ فِئَۃٍ قَلِیْلَۃٍ غَلَبَتْ فِئَۃً كَثِیْرَۃًۢ بِاِذْنِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ ۝

“অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তু যে লোক হাতের আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষ অবশ্য তেমন গুরুতর হবে না।’ অতঃপর সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন ছাড়া। পরে তালূত যখন তা পার হলো এবং তার সাথে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত এবং তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যাদের উপলব্ধী ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।” (২:২৪৯)

وَ لَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَ جُنُوْدِہٖ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَیْنَا صَبْرًا وَّ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَی الْقَوْمِ الْکٰفِرِیْنَ ۝ فَهَزَمُوْهُمْ بِاِذْنِ اللّٰهِ ۟ۙ وَ قَتَلَ دَاوٗدُ جَالُوْتَ وَ اٰتٰىهُ اللّٰهُ الْمُلْكَ وَ الْحِکْمَۃَ وَ عَلَّمَہٗ مِمَّا یَشَآءُ ؕ وَ لَوْ لَا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ ۙ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ ذُوْ فَضْلٍ عَلَی الْعٰلَمِیْنَ ۝

“আর যখন তারা জালূত ও তার সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হল, তখন বলল, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ – আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে।’ তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে (আ) দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।” (২:২৫০ – ২৫১)

 

 

নবী করীম (সা) পরিচালিত জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ:

মক্কার মুশরেকদের প্রচন্ড বিরোধিতা, হুমকি, নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মুখে নবী করীম (সা) ও তাঁর সহচরবৃন্দ মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হলেন। সেখানেও তাঁরা মক্কার মুশরেকদের সহযোগিতাকারী কাফের–মুনাফেকদের ষড়যন্ত্র ও হুমকির সম্মুখীন হলেন। মদীনায় প্রতিষ্ঠিত নব্য ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম সমাজ ত্রিমুখী হুমকির সম্মুখীন হলে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীর (সা) প্রতি জিহাদের নির্দেশ জারী করেন। সর্বোচ্চ সতর্কতা, ধৈর্য্য, সংযম ও ন্যায়নীতি বজায় রেখে এসব জিহাদ পরিচালিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এসব জিহাদ সংক্রান্ত আয়াতসমূহের উদ্ধৃতি নীচে পেশ করা হলো:

বদরের যুদ্ধ

قَدْ كَانَ لَکُمْ اٰیَۃٌ فِیْ فِئَتَیْنِ الْتَقَتَا ؕ فِئَۃٌ تُقَاتِلُ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ اُخْرٰی كَافِرَۃٌ یَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَیْهِمْ رَاْیَ الْعَیْنِ ؕ وَ اللّٰهُ یُؤَیِّدُ بِنَصْرِہٖ مَنْ یَّشَآءُ ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَعِبْرَۃً لِّاُولِی الْاَبْصَارِ ۝

“নিশ্চয়ই দুটো দলের মোকাবিলার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে। আর অপর দল ছিল কাফেরদের এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুণ দেখছিল। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন। এরই মধ্যে শিক্ষণীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য।” (৩:১৩)

وَ اِذْ یَعِدُکُمُ اللّٰهُ اِحْدَی الطَّآئِفَتَیْنِ اَنَّهَا لَکُمْ وَ تَوَدُّوْنَ اَنَّ غَیْرَ ذَاتِ الشَّوْكَۃِ تَکُوْنُ لَکُمْ وَ یُرِیْدُ اللّٰهُ اَنْ یُّحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمٰتِہٖ وَ یَقْطَعَ دَابِرَ الْکٰفِرِیْنَ ۝ لِیُحِقَّ الْحَقَّ وَ یُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَ لَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ ۝ اِذْ تَسْتَغِیْثُوْنَ رَبَّکُمْ فَاسْتَجَابَ لَکُمْ اَنِّیْ مُمِدُّکُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلٰٓئِكَۃِ مُرْدِفِیْنَ ۝ وَ مَا جَعَلَهُ اللّٰهُ اِلَّا بُشْرٰی وَ لِتَطْمَئِنَّ بِہٖ قُلُوْبُکُمْ ۚ وَ مَا النَّصْرُ اِلَّا مِنْ عِنْدِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ ۝

“আর যখন আল্লাহ দু’টি দলের একটির ব্যাপারে তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, সেটি তোমাদের হস্তগত হবে, আর তোমরা কামনা করছিলে যাতে কোন রকম কন্টক নেই, তাই তোমাদের ভাগে আসুক; অথচ আল্লাহ চাইতেন সত্যকে স্বীয় কালামের মাধ্যমে সত্যে পরিণত করতে এবং কাফেরদের মূল কর্তন করে দিতে, যাতে করে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে দেন, যদিও পাপীরা অসন্তুষ্ট হয়। তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে। আর আল্লাহ তো শুধু সুসংবাদ দান করলেন যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে। আর সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তির অধিকারী হেকমতওয়ালা।” (৮:৭ – ১০)

اِذْ اَنْتُمْ بِالْعُدْوَۃِ الدُّنْیَا وَ هُمْ بِالْعُدْوَۃِ الْقُصْوٰی وَ الرَّکْبُ اَسْفَلَ مِنْکُمْ ؕ وَ لَوْ تَوَاعَدْتُّمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِی الْمِیْعٰدِ ۙ وَ لٰكِنْ لِّیَقْضِیَ اللّٰهُ اَمْرًا كَانَ مَفْعُوْلًا ۬ۙ لِّیَہْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْۢ بَیِّنَۃٍ وَّ یَحْیٰی مَنْ حَیَّ عَنْۢ بَیِّنَۃٍ ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَسَمِیْعٌ عَلِیْمٌ ۝ اِذْ یُرِیْكَهُمُ اللّٰهُ فِیْ مَنَامِكَ قَلِیْلًا ؕ وَ لَوْ اَرٰىكَهُمْ كَثِیْرًا لَّفَشِلْتُمْ وَ لَتَنَازَعْتُمْ فِی الْاَمْرِ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ سَلَّمَ ؕ اِنَّہٗ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ ۝ وَ اِذْ یُرِیْکُمُوْهُمْ اِذِ الْتَقَیْتُمْ فِیْۤ اَعْیُنِکُمْ قَلِیْلًا وَّ یُقَلِّلُکُمْ فِیْۤ اَعْیُنِهِمْ لِیَقْضِیَ اللّٰهُ اَمْرًا كَانَ مَفْعُوْلًا ؕ وَ اِلَی اللّٰهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ ۝

“আর যখন তোমরা ছিলে সমরাঙ্গনের এ প্রান্তে আর তারা ছিল সে প্রান্তে অথচ কাফেলা তোমাদের থেকে নীচে নেমে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় যদি তোমরা পারস্পরিক অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে, তবে তোমরা এক সঙ্গে সে ওয়াদা পালন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা এমন এক কাজ করতে চেয়েছিলেন, যা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল যাতে যে সব লোক নিহত হওয়ার ছিল, প্রমাণ প্রতিষ্ঠার পর এবং যাদের বাঁচার ছিল, তারা বেঁচে থাকে প্রমাণ প্রতিষ্ঠার পর। আর নিশ্চিতই আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ। আল্লাহ যখন তোমাকে স্বপ্নে সেসব কাফেরের পরিমাণ অল্প করে দেখালেন; বেশী করে দেখালে তোমরা কাপুরুষতা অবলম্বন করতে এবং কাজের বেলায় বিপদ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তিনি অতি উত্তমভাবেই জানেন; যা কিছু অন্তরে রয়েছে। আর যখন তোমাদেরকে দেখালেন সে সৈন্যদল মোকাবেলার সময় তোমাদের চোখে অল্প এবং তোমাদেরকে দেখালেন তাদের চোখে বেশী, যাতে আল্লাহ সে কাজ করে নিতে পারেন যা ছিল নির্ধারিত। আর সব কাজই আল্লাহর নিকট গিয়ে পৌঁছায়।” (৮:৪২ – ৪৪)

وَ اِذْ زَیَّنَ لَهُمُ الشَّیْطٰنُ اَعْمَالَهُمْ وَ قَالَ لَا غَالِبَ لَکُمُ الْیَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَ اِنِّیْ جَارٌ لَّکُمْ ۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتٰنِ نَكَصَ عَلٰی عَقِبَیْهِ وَ قَالَ اِنِّیْ بَرِیْٓءٌ مِّنْکُمْ اِنِّیْۤ اَرٰی مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّیْۤ اَخَافُ اللّٰهَ ؕ وَ اللّٰهُ شَدِیْدُ الْعِقَابِ ۝

“আর যখন শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে সুদৃশ্য করে দিল এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনাসামনি হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পেছনে দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, আমি তোমাদের সাথে নাই – আমি দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন।” (৮:৪৮)

وَ اِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّیُٔ الْمُؤْمِنِیْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ ۝ اِذْ هَمَّتْ طَّآئِفَتٰنِ مِنْکُمْ اَنْ تَفْشَلَا ۙ وَ اللّٰهُ وَلِیُّهُمَا ؕ وَ عَلَی اللّٰهِ فَلْیَتَوَكَلِ الْمُؤْمِنُوْنَ ۝ وَ لَقَدْ نَصَرَکُمُ اللّٰهُ بِبَدْرٍ وَّ اَنْتُمْ اَذِلَّۃٌ ۚ فَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمْ تَشْکُرُوْنَ ۝

“আর আপনি যখন পরিজনদের কাছ থেকে সকাল বেলা বেরিয়ে গিয়ে মু’মিনগণকে যুদ্ধের অবস্থানে বিন্যস্ত করলেন, আর আল্লাহ সব বিষয়েই শুনেন এবং জানেন। যখন তোমাদের দুটি দল সাহস হারাবার উপক্রম হলো, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ছিলেন, আর আল্লাহর উপরই ভরসা করা মু’মিনদের উচিত। বস্তুত আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।” (৩:১২১ – ১২৩)

اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِیْنَ اَلَنْ یَّکْفِیَکُمْ اَنْ یُّمِدَّکُمْ رَبُّکُمْ بِثَلٰثَۃِ اٰلٰفٍ مِّنَ الْمَلٰٓئِكَۃِ مُنْزَلِیْنَ ۝ بَلٰۤی ۙ اِنْ تَصْبِرُوْا وَ تَتَّقُوْا وَ یَاْتُوْکُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا یُمْدِدْکُمْ رَبُّکُمْ بِخَمْسَۃِ اٰلٰفٍ مِّنَ الْمَلٰٓئِكَۃِ مُسَوِّمِیْنَ ۝ وَ مَا جَعَلَهُ اللّٰهُ اِلَّا بُشْرٰی لَکُمْ وَ لِتَطْمَئِنَّ قُلُوْبُکُمْ بِہٖ ؕ وَ مَا النَّصْرُ اِلَّا مِنْ عِنْدِ اللّٰهِ الْعَزِیْزِ الْحَكِیْمِ ۝ لِیَقْطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَوْ یَکْبِتَهُمْ فَیَنْقَلِبُوْا خَآئِبِیْنَ ۝

“আপনি যখন বলতে লাগলেন মু’মিনগণকে – তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন। অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি অতর্কিতে তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন। বস্তুত এটা তো আল্লাহ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্ত্বনা আসতে পারে। আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে, যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন -যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়।” (৩:১২৪ – ১২৭)

ওহুদের যুদ্ধ

وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ کُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ ۝ اِنْ یَّمْسَسْکُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُہٗ ؕ وَ تِلْكَ الْاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیْنَ النَّاسِ ۚ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَتَّخِذَ مِنْکُمْ شُهَدَآءَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَ ۝ وَ لِیُمَحِّصَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ یَمْحَقَ الْکٰفِرِیْنَ ۝ اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعْلَمِ اللّٰهُ الَّذِیْنَ جٰهَدُوْا مِنْکُمْ وَ یَعْلَمَ الصّٰبِرِیْنَ ۝

“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মু’মিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধবংস করে দিতে চান। তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।” (৩:১৩৯ – ১৪২)

وَ لَقَدْ صَدَقَکُمُ اللّٰهُ وَعْدَہٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِہٖ ۚ حَتّٰۤی اِذَا فَشِلْتُمْ وَ تَنَازَعْتُمْ فِی الْاَمْرِ وَ عَصَیْتُمْ مِّنْۢ بَعْدِ مَاۤ اَرٰىکُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ ؕ مِنْکُمْ مَّنْ یُّرِیْدُ الدُّنْیَا وَ مِنْکُمْ مَّنْ یُّرِیْدُ الْاٰخِرَۃَ ۚ ثُمَّ صَرَفَکُمْ عَنْهُمْ لِیَبْتَلِیَکُمْ ۚ وَ لَقَدْ عَفَا عَنْکُمْ ؕ وَ اللّٰهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ ۝ اِذْ تُصْعِدُوْنَ وَ لَا تَلْوٗنَ عَلٰۤی اَحَدٍ وَّ الرَّسُوْلُ یَدْعُوْکُمْ فِیْۤ اُخْرٰىکُمْ فَاَثَابَکُمْ غَمًّۢا بِغَمٍّ لِّكَیْلَا تَحْزَنُوْا عَلٰی مَا فَاتَکُمْ وَ لَا مَاۤ اَصَابَکُمْ ؕ وَ اللّٰهُ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ۝

“আর আল্লাহ সে ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছেন, যখন তোমরা তাঁরই নির্দেশে ওদের খতম করছিলে। এমনকি যখন তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছ ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছ। আর যা তোমরা চাইতে তা দেখার পর কৃতঘ্নতা প্রদর্শন করেছ, তাতে তোমাদের কারো কাম্য ছিল দুনিয়া আর কারো বা কাম্য ছিল আখেরাত। অতঃপর তোমাদিগকে সরিয়ে দিলেন ওদের উপর থেকে যাতে তোমাদিগকে পরীক্ষা করেন। বস্তুত তিনি তোমাদিগকে ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহর মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল। আর তোমরা উপরে উঠে যাচ্ছিলে এবং পেছন দিকে ফিরে তাকাচ্ছিলে না কারো প্রতি, অথচ রসূল ডাকছিলেন তোমাদিগকে তোমাদের পেছন দিক থেকে। অতঃপর তোমাদের উপর এলো শোকের ওপরে শোক, যাতে তোমরা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া বস্তুর জন্য দুঃখ না কর এবং যার সম্মুখীন হচ্ছ সেজন্য বিমর্ষ না হও। আর আল্লাহ তোমাদের কাজের ব্যাপারে অবহিত রয়েছেন।” (৩:১৫২ – ১৫৩)

ثُمَّ اَنْزَلَ عَلَیْکُمْ مِّنْۢ بَعْدِ الْغَمِّ اَمَنَۃً نُّعَاسًا یَّغْشٰی طَآئِفَۃً مِّنْکُمْ ۙ وَ طَآئِفَۃٌ قَدْ اَهَمَّتْهُمْ اَنْفُسُهُمْ یَظُنُّوْنَ بِاللّٰهِ غَیْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِیَّۃِ ؕ یَقُوْلُوْنَ هَلْ لَّنَا مِنَ الْاَمْرِ مِنْ شَیْءٍ ؕ قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ کُلَّہٗ لِلّٰهِ ؕ یُخْفُوْنَ فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ مَّا لَا یُبْدُوْنَ لَكَ ؕ یَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْاَمْرِ شَیْءٌ مَّا قُتِلْنَا هٰهُنَا ؕ قُلْ لَّوْ کُنْتُمْ فِیْ بُیُوْتِکُمْ لَبَرَزَ الَّذِیْنَ کُتِبَ عَلَیْهِمُ الْقَتْلُ اِلٰی مَضَاجِعِهِمْ ۚ وَ لِیَبْتَلِیَ اللّٰهُ مَا فِیْ صُدُوْرِکُمْ وَ لِیُمَحِّصَ مَا فِیْ قُلُوْبِکُمْ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ ۝ اِنَّ الَّذِیْنَ تَوَلَّوْا مِنْکُمْ یَوْمَ الْتَقَی الْجَمْعٰنِ ۙ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّیْطٰنُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا ۚ وَ لَقَدْ عَفَا اللّٰهُ عَنْهُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ حَلِیْمٌ ۝

“অতঃপর তোমাদের উপর শোকের পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মত। সে তন্দ্রায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঝিমোচ্ছিল আর কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে ভাবছিল। আল্লাহ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা ধারণা হচ্ছিল মুর্খদের মত। তারা বলছিল, আমাদের হাতে কি কিছুই করার নেই? তুমি বল, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তারা যা কিছু মনে লুকিয়ে রাখে – তোমার নিকট প্রকাশ করে না সে সবও। তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন। তোমাদের যে দুটি দল লড়াইয়ের দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, তাদেরই পাপের দরুন। অবশ্য আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করেছেন। আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ ও পরম সহনশীল।” (৩:১৫৪ – ১৫৫)

اَوَ لَمَّاۤ اَصَابَتْکُمْ مُّصِیْبَۃٌ قَدْ اَصَبْتُمْ مِّثْلَیْهَا ۙ قُلْتُمْ اَنّٰی هٰذَا ؕ قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اَنْفُسِکُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ۝ وَ مَاۤ اَصَابَکُمْ یَوْمَ الْتَقَی الْجَمْعٰنِ فَبِاِذْنِ اللّٰهِ وَ لِیَعْلَمَ الْمُؤْمِنِیْنَ ۝ وَ لِیَعْلَمَ الَّذِیْنَ نَافَقُوْا ۚۖ وَ قِیْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ اَوِ ادْفَعُوْا ؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّا تَّبَعْنٰکُمْ ؕ هُمْ لِلْکُفْرِ یَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِیْمَانِ ۚ یَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَیْسَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ ؕ وَ اللّٰهُ اَعْلَمُ بِمَا یَکْتُمُوْنَ ۝ اَلَّذِیْنَ قَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ وَ قَعَدُوْا لَوْ اَطَاعُوْنَا مَا قُتِلُوْا ؕ قُلْ فَادْرَءُوْا عَنْ اَنْفُسِکُمُ الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ ۝

“যখন তোমাদের উপর একটি মুসীবত এসে পৌঁছাল, অথচ তোমরা তার পূর্বেই দ্বিগুণ কষ্টে পৌঁছে গিয়েছ, তখন কি তোমরা বলবে, এটা কোথা থেকে এল? তাহলে বলে দাও, এ কষ্ট তোমাদের উপর পৌঁছেছে তোমারই পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাশীল। আর যেদিন দু’দল সৈন্যের মোকাবিলা হয়েছে; সেদিন তোমাদের উপর যা আপতিত হয়েছে তা আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে এবং তা এজন্য যে, তাতে ঈমানদারদিগকে জানা যায়। এবং তাদেরকে যাতে সনাক্ত করা যায় যারা মুনাফেক ছিল। আর তাদেরকে বলা হল এসো, আল্লাহর রাহে লড়াই কর কিংবা শত্রুদিগকে প্রতিহত কর। তারা বলেছিল, আমরা যদি জানতাম যে, লড়াই হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম। সে দিন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর কাছাকাছি ছিল। যা তাদের অন্তরে নেই তারা নিজের মুখে সে কথাই বলে, বস্তুত আল্লাহ ভালভাবে জানেন তারা যা কিছু গোপন করে থাকে। ওরা হলো যে সব লোক, যারা বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে, যদি তারা আমাদের কথা শোনত, তবে নিহত হত না। তাদেরকে বলে দিন, এবার তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।” (৩:১৬৫ – ১৬৮)

اَلَّذِیْنَ اسْتَجَابُوْا لِلّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ مِنْۢ بَعْدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ؕۛ لِلَّذِیْنَ اَحْسَنُوْا مِنْهُمْ وَ اتَّقَوْا اَجْرٌ عَظِیْمٌ ۝ اَلَّذِیْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَکُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِیْمَانًا ٭ۖ وَّ قَالُوْا حَسْبُنَا اللّٰهُ وَنِعْمَ الْوَكِیْلُ ۝ فَانْقَلَبُوْا بِنِعْمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضْلٍ لَّمْ یَمْسَسْهُمْ سُوْٓءٌ ۙ وَّ اتَّبَعُوْا رِضْوَانَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ ذُوْ فَضْلٍ عَظِیْمٍ ۝

“যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব। যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ–সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী। অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট।” (৩:১৭২ – ১৭৪)

 

বনু নযীর গোত্রের সাথে যুদ্ধ

هُوَ الَّذِیْۤ اَخْرَجَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ مِنْ دِیَارِهِمْ لِاَوَّلِ الْحَشْرِ ؕؔ مَا ظَنَنْتُمْ اَنْ یَّخْرُجُوْا وَ ظَنُّوْۤا اَنَّهُمْ مَّانِعَتُهُمْ حُصُوْنُهُمْ مِّنَ اللّٰهِ فَاَتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ حَیْثُ لَمْ یَحْتَسِبُوْا٭ وَ قَذَفَ فِیْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ یُخْرِبُوْنَ بُیُوْتَهُمْ بِاَیْدِیْهِمْ وَ اَیْدِی الْمُؤْمِنِیْنَ ٭ فَاعْتَبِرُوْا یٰۤاُولِی الْاَبْصَارِ ۝ وَ لَوْ لَاۤ اَنْ كَتَبَ اللّٰهُ عَلَیْهِمُ الْجَلَآءَ لَعَذَّبَهُمْ فِی الدُّنْیَا ؕ وَ لَهُمْ فِی الْاٰخِرَۃِ عَذَابُ النَّارِ ۝ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ ۚ وَ مَنْ یُّشَآقِّ اللّٰهَ فَاِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ ۝ مَا قَطَعْتُمْ مِّنْ لِّیْنَۃٍ اَوْ تَرَکْتُمُوْهَا قَآئِمَۃً عَلٰۤی اُصُوْلِهَا فَبِاِذْنِ اللّٰهِ وَ لِیُخْزِیَ الْفٰسِقِیْنَ ۝ وَ مَاۤ اَفَآءَ اللّٰهُ عَلٰی رَسُوْلِہٖ مِنْهُمْ فَمَاۤ اَوْجَفْتُمْ عَلَیْهِ مِنْ خَیْلٍ وَّ لَا رِكَابٍ وَّ لٰكِنَّ اللّٰهَ یُسَلِّطُ رُسُلَہٗ عَلٰی مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ۝

“তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে তাদের বাড়ী–ঘর থেকে বহিষ্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। অতএব, হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। আল্লাহ যদি তাদের জন্যে নির্বাসন অবধারিত না করতেন, তবে তাদেরকে দুনিয়াতেই শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব। এটা এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। আল্লাহ বনু-নযীরের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যে ধন–সম্পদ দিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।” (৫৯:২ – ৬)

 

খন্দকের যুদ্ধ

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اذْکُرُوْا نِعْمَۃَ اللّٰهِ عَلَیْکُمْ اِذْ جَآءَتْکُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَیْهِمْ رِیْحًا وَّ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرًا ۝ اِذْ جَآءُوْکُمْ مِّنْ فَوْقِکُمْ وَ مِنْ اَسْفَلَ مِنْکُمْ وَ اِذْ زَاغَتِ الْاَبْصَارُ وَ بَلَغَتِ الْقُلُوْبُ الْحَنَاجِرَ وَ تَظُنُّوْنَ بِاللّٰهِ الظُّنُوْنَا ۝ هُنَالِكَ ابْتُلِیَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ زُلْزِلُوْا زِلْزَالًا شَدِیْدًا ۝ وَ اِذْ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗۤ اِلَّا غُرُوْرًا ۝ وَ اِذْ قَالَتْ طَّآئِفَۃٌ مِّنْهُمْ یٰۤاَهْلَ یَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَکُمْ فَارْجِعُوْا ۚ وَیَسْتَاْذِنُ فَرِیْقٌ مِّنْهُمُ النَّبِیَّ یَقُوْلُوْنَ اِنَّ بُیُوْتَنَا عَوْرَۃٌ ؕۛ وَمَا هِیَ بِعَوْرَۃٍ ۚۛ اِنْ یُّرِیْدُوْنَ اِلَّا فِرَارًا ۝ وَلَوْ دُخِلَتْ عَلَیْهِمْ مِّنْ اَقْطَارِهَا ثُمَّ سُئِلُوا الْفِتْنَۃَ لَاٰتَوْهَا وَمَا تَلَبَّثُوْا بِهَاۤ اِلَّا یَسِیْرًا۝ وَ لَقَدْ كَانُوْا عَاهَدُوا اللّٰهَ مِنْ قَبْلُ لَا یُوَلُّوْنَ الْاَدْبَارَ ؕ وَ كَانَ عَہْدُ اللّٰهِ مَسْـُٔوْلًا۝

“হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্ন ভূমি থেকে এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে। সে সময়ে মু’মিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল। এবং যখন মুনাফেক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল, আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়। এবং যখন তাদের একদল বলেছিল, হে ইয়াসরেববাসী, এটা টিকবার মত জায়গা নয়, তোমরা ফিরে চল। তাদেরই একদল নবীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বলেছিল, আমাদের বাড়ী–ঘর খালি, অথচ সেগুলো খালি ছিল না, পলায়ন করাই ছিল তাদের ইচ্ছা। যদি শত্রুপক্ষ চতুর্দিক থেকে নগরে প্রবেশ করে তাদের সাথে মিলিত হত, অতঃপর বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করত, তবে তারা অবশ্যই বিদ্রোহ করত এবং তারা মোটেই বিলম্ব করত না। অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (৩৩:৯ – ১৫)

وَ لَمَّا رَاَ الْمُؤْمِنُوْنَ الْاَحْزَابَ ۙ قَالُوْا هٰذَا مَا وَعَدَنَا اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗ وَ صَدَقَ اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗ ۫ وَ مَا زَادَهُمْ اِلَّاۤ اِیْمَانًا وَّ تَسْلِیْمًا ۝ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیْهِ ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰی نَحْبَہٗ وَ مِنْهُمْ مَّنْ یَّنْتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوْا تَبْدِیْلًا ۝ لِّیَجْزِیَ اللّٰهُ الصّٰدِقِیْنَ بِصِدْقِهِمْ وَ یُعَذِّبَ الْمُنٰفِقِیْنَ اِنْ شَآءَ اَوْ یَتُوْبَ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا ۝ وَ رَدَّ اللّٰهُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِغَیْظِهِمْ لَمْ یَنَالُوْا خَیْرًا ؕ وَ كَفَی اللّٰهُ الْمُؤْمِنِیْنَ الْقِتَالَ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ قَوِیًّا عَزِیْزًا۝

“যখন মু’মিনরা শক্রবাহিনীকে দেখল, তখন বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণই বৃদ্ধি পেল। মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ পায়নি। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মু’মিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” (৩৩:২২ – ২৫)

 

বনু কুরায়যা গোত্রের সাথে যুদ্ধ

وَ اَنْزَلَ الَّذِیْنَ ظَاهَرُوْهُمْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ مِنْ صَیَاصِیْهِمْ وَ قَذَفَ فِیْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ فَرِیْقًا تَقْتُلُوْنَ وَ تَاْسِرُوْنَ فَرِیْقًا ۝ وَ اَوْرَثَکُمْ اَرْضَهُمْ وَ دِیَارَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ وَ اَرْضًا لَّمْ تَطَـُٔوْهَا ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرًا ۝

“কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ। তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমির, ঘর-বাড়ীর, ধন-স-ম্পদের এবং এমন এক ভূখন্ডের মালিক করে দিয়েছেন, যেখানে তোমরা অভিযান করনি। আল্লাহ সর্ববিষয়োপরি সর্বশক্তিমান।” (৩৩:২৬ – ২৭)

 

হুনায়েনের যুদ্ধ

لَقَدْ نَصَرَکُمُ اللّٰهُ فِیْ مَوَاطِنَ كَثِیْرَۃٍ ۙ وَّ یَوْمَ حُنَیْنٍ ۙ اِذْ اَعْجَبَتْکُمْ كَثْرَتُکُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْکُمْ شَیْئًا وَّ ضَاقَتْ عَلَیْکُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّیْتُمْ مُّدْبِرِیْنَ ۝ ثُمَّ اَنْزَلَ اللّٰهُ سَكِیْنَتَہٗ عَلٰی رَسُوْلِہٖ وَ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ وَ اَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَ عَذَّبَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا ؕ وَ ذٰلِكَ جَزَآءُ الْکٰفِرِیْنَ ۝ ثُمَّ یَتُوْبُ اللّٰهُ مِنْۢ بَعْدِ ذٰلِكَ عَلٰی مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝

“আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের প্রফুল্ল করেছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্তে¡ও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল। অতঃপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। তারপর আল্লাহ নাযিল করেন নিজের পক্ষ থেকে সান্ত¡না, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের প্রতি এবং অবতীর্ণ করেন এমন সেনাবাহিনী যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। আর শাস্তি প্রদান করেন কাফেরদের এবং এটি হল কাফেরদের কর্মফল। এরপর আল্লাহ যাদের প্রতি ইচ্ছা তওবার তওফীক দেবেন, আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৯:২৫ – ২৭)

 

তাবুকের যুদ্ধ

اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّ ثِقَالًا وَّ جَاهِدُوْا بِاَمْوَالِکُمْ وَ اَنْفُسِکُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکُمْ خَیْرٌ لَّکُمْ اِنْ کُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ۝ لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِیْبًا وَّ سَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوْكَ وَ لٰكِنْۢ بَعُدَتْ عَلَیْهِمُ الشُّقَّۃُ ؕ وَ سَیَحْلِفُوْنَ بِاللّٰهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَکُمْ ۚ یُہْلِکُوْنَ اَنْفُسَهُمْ ۚ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ اِنَّهُمْ لَکٰذِبُوْنَ ۝ عَفَا اللّٰهُ عَنْكَ ۚ لِمَ اَذِنْتَ لَهُمْ حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا وَ تَعْلَمَ الْکٰذِبِیْنَ ۝ لَا یَسْتَاْذِنُكَ الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ یُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِالْمُتَّقِیْنَ ۝ اِنَّمَا یَسْتَاْذِنُكَ الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ ارْتَابَتْ قُلُوْبُهُمْ فَهُمْ فِیْ رَیْبِهِمْ یَتَرَدَّدُوْنَ ۝ وَ لَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَہٗ عُدَّۃً وَّ لٰكِنْ كَرِهَ اللّٰهُ انْۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَ قِیْلَ اقْعُدُوْا مَعَ الْقٰعِدِیْنَ ۝ لَوْ خَرَجُوْا فِیْکُمْ مَّا زَادُوْکُمْ اِلَّا خَبَالًا وَّ لَا۠اَوْضَعُوْا خِلٰلَکُمْ یَبْغُوْنَکُمُ الْفِتْنَۃَ ۚ وَ فِیْکُمْ سَمّٰعُوْنَ لَهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِالظّٰلِمِیْنَ ۝ لَقَدِ ابْتَغَوُا الْفِتْنَۃَ مِنْ قَبْلُ وَ قَلَّبُوْا لَكَ الْاُمُوْرَ حَتّٰی جَآءَ الْحَقُّ وَ ظَهَرَ اَمْرُ اللّٰهِ وَ هُمْ کٰرِهُوْنَ۝

“তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার। যদি আশু লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং যাত্রাপথও সংক্ষিপ্ত হতো, তবে তারা অবশ্যই আপনার সহযাত্রী হতো, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। আর তারা এমনই শপথ করে বলবে, আমাদের সাধ্য থাকলে অবশ্যই তোমাদের সাথে বের হতাম, এরা নিজেরাই নিজেদের বিনষ্ট করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, এরা মিথ্যাবাদী। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন, আপনি কেন তাদের অব্যাহতি দিলেন, যে পর্যন্ত না আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যেত সত্যবাদীরা এবং জেনে নিতেন মিথ্যাবাদীদের। আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জেহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি কামনা করবে না, আর আল্লাহ সাবধানীদের ভাল জানেন। নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে। আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক। যদি তোমাদের সাথে তারা বের হত, তবে তোমাদের অনিষ্ট ছাড়া আর কিছু বৃদ্ধি করতো না, আর অশ্ব ছুটাতো তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশে। আর তোমাদের মাঝে রয়েছে তাদের গুপ্তচর। বস্তুত আল্লাহ যালিমদের ভালভাবেই জানেন। তারা পূর্বে থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উল্টা-পাল্টা করে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সত্য প্রতিশ্রুতি এসে গেল এবং জয়ী হল আল্লাহর হুকুম, যে অবস্থায় তারা মন্দবোধ করল।” (৯:৪১ – ৪৮)

فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلٰفَ رَسُوْلِ اللّٰهِ وَ كَرِهُوْۤا اَنْ یُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ قَالُوْا لَا تَنْفِرُوْا فِی الْحَرِّ ؕ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا ؕ لَوْ كَانُوْا یَفْقَهُوْنَ ۝ فَلْیَضْحَکُوْا قَلِیْلًا وَّ لْیَبْکُوْا كَثِیْرًا ۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا یَکْسِبُوْنَ ۝ فَاِنْ رَّجَعَكَ اللّٰهُ اِلٰی طَآئِفَۃٍ مِّنْهُمْ فَاسْتَاْذَنُوْكَ لِلْخُرُوْجِ فَقُلْ لَّنْ تَخْرُجُوْا مَعِیَ اَبَدًا وَّ لَنْ تُقَاتِلُوْا مَعِیَ عَدُوًّا ؕ اِنَّکُمْ رَضِیْتُمْ بِالْقُعُوْدِ اَوَّلَ مَرَّۃٍ فَاقْعُدُوْا مَعَ الْخٰلِفِیْنَ۝

“পেছনে থেকে যাওয়া লোকেরা আল্লাহর রাসূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে থাকতে পেরে আনন্দ লাভ করেছে; আর জান ও মালের দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করতে অপছন্দ করেছে এবং বলেছে, এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও, উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত।অতএব, তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশী কাঁদবে। বস্তুত আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের মধ্য থেকে কোন শ্রেণীবিশেষের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং অতঃপর তারা তোমার কাছে অভিযানে বেরোবার অনুমতি কামনা করে, তবে তুমি বলো যে, তোমরা কখনো আমার সাথে বেরোবে না এবং আমার পক্ষ হয়ে কোন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে না, তোমরা তো প্রথমবারে বসে থাকা পছন্দ করেছ, কাজেই পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথেই বসে থাক।” (৯:৮১ – ৮৩)

لَیْسَ عَلَی الضُّعَفَآءِ وَ لَا عَلَی الْمَرْضٰی وَ لَا عَلَی الَّذِیْنَ لَا یَجِدُوْنَ مَا یُنْفِقُوْنَ حَرَجٌ اِذَا نَصَحُوْا لِلّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ ؕ مَا عَلَی الْمُحْسِنِیْنَ مِنْ سَبِیْلٍ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ۝ وَّ لَا عَلَی الَّذِیْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُکُمْ عَلَیْهِ ۪ تَوَلَّوْا وَّ اَعْیُنُهُمْ تَفِیْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَلَّا یَجِدُوْا مَا یُنْفِقُوْنَ ۝

“দুর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে পবিত্র হবে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে। নেককারদের উপর অভিযোগের কোন পথ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী দয়ালু। আর না আছে তাদের উপর যারা এসেছে তোমার নিকট যেন তুমি তাদের বাহন দান কর এবং তুমি বলেছ, আমার কাছে এমন কোন বস্তু নেই যে, তার উপর তোমাদের সওয়ার করাব তখন তারা ফিরে গেছে অথচ তখন তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু বইতেছিল এ দুঃখে যে, তারা এমন কোন বস্তু পাচ্ছে না যা ব্যয় করবে।” (৯:৯১ – ৯২)

 

বাইয়াতে রিদওয়ান ও হুদায়বিয়ার সন্ধি

হিজরী ষষ্ট সনে নবী মুহাম্মদ (সা) ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে ১৪০০ জন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। তাঁদের এ তীর্থ যাত্রা ছিল নিরস্ত্র অবস্থায়, আত্মরক্ষার নিমিত্তে শুধুমাত্র খাপে–বদ্ধ তলোয়ার ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র তাঁদের সাথে ছিল না। আর তাঁদের সাথে ছিল কুরবাণীর উদ্দেশ্যে আনীত পশু। এ ওমরাপালনকারী দলটি যখন মক্কার নিকটবর্তী হুদায়বিয়ায় পৌঁছুলো তখন নবী করীম (সা) মক্কায় প্রবেশের অনুমতি চেয়ে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে হযরত ওসমান (রা) -কে কোরাইশদের নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু কোরাইশ সর্দারগণ মুসলমানদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে কাবাগৃহে প্রবেশ ও ওমরা পালন করতে দিতে অসম্মত হওয়ায় এবং মুসলিম প্রতিনিধি হযরত ওসমান (রা) -কে আটক করায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর সাথে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, হযরত ওসমান (রা) -কে হত্যা করা হয়েছে। এ চরম উত্তেজনাকর মূহুর্তে ওসমান–হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে নবী করীম (সা) তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে একটি গাছের নীচে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর হাতের ওপর হাত রেখে সাহাবীবৃন্দ আমৃত্যু লড়াই করার শপথ নেন। এ শপথ ‘বাইয়াতে রিদওয়ান’ নামে পরিচিত।

হযরত ওসমান (রা)- কে হত্যার খবরটি ছিল একটি গুজব। তিনি মুসলিম শিবিরে ফিরে আসলে এ গুজবের অবসান ঘটে। এরপর  উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পর একটি দশ বছর মেয়াদী শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয় যা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এ সন্ধি ছিল ইসলাম ধর্মের অগ্রগতির এক মাইল ফলক। এর কতিপয় ধারা আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য বৈষম্যমূলক ও আপত্তিকর হলেও ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতার মাধ্যমে সুদূর প্রসারী লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে তা ছিল অপরিহার্য। শান্তির বৃহত্তর স্বার্থে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে এর অবদান ছিল অপরিসীম। তাই পবিত্র কুরঅনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এ সন্ধিকে এক সুস্পষ্ট বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন।

উপরোক্ত বিষয় সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো নিম্নে পেশ করা হলো:

لَقَدْ رَضِیَ اللّٰهُ عَنِ الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ یُبَایِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِیْنَۃَ عَلَیْهِمْ وَ اَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِیْبًا

“আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে বাইয়াত (শপথ) করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।” (৪৮:১৮)

اِنَّ الَّذِیْنَ یُبَایِعُوْنَكَ اِنَّمَا یُبَایِعُوْنَ اللّٰهَ ؕ یَدُ اللّٰهِ فَوْقَ اَیْدِیْهِمْ ۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا یَنْکُثُ عَلٰی نَفْسِہٖ ۚ وَ مَنْ اَوْفٰی بِمَا عٰهَدَ عَلَیْهُ اللّٰهَ فَسَیُؤْتِیْهِ اَجْرًا عَظِیْمًا۝

“যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত¡রই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” (৪৮:১০)

اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا۝

“(হে নবী,) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে) এক সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।” (৪৮:১)

وَ هُوَ الَّذِیْ كَفَّ اَیْدِیَهُمْ عَنْکُمْ وَ اَیْدِیَکُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَۃَ مِنْۢ بَعْدِ اَنْ اَظْفَرَکُمْ عَلَیْهِمْ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرًا ۝ هُمُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ صَدُّوْکُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَ الْهَدْیَ مَعْکُوْفًا اَنْ یَّبْلُغَ مَحِلَّہٗ ؕ وَ لَوْ لَا رِجَالٌ مُّؤْمِنُوْنَ وَ نِسَآءٌ مُّؤْمِنٰتٌ لَّمْ تَعْلَمُوْهُمْ اَنْ تَطَـُٔوْهُمْ فَتُصِیْبَکُمْ مِّنْهُمْ مَّعَرَّۃٌۢ بِغَیْرِ عِلْمٍ ۚ لِیُدْخِلَ اللّٰهُ فِیْ رَحْمَتِہٖ مَنْ یَّشَآءُ ۚ لَوْ تَزَیَّلُوْا لَعَذَّبْنَا الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا ۝ اِذْ جَعَلَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا فِیْ قُلُوْبِهِمُ الْحَمِیَّۃَ حَمِیَّۃَ الْجَاهِلِیَّۃِ فَاَنْزَلَ اللّٰهُ سَكِیْنَتَہٗ عَلٰی رَسُوْلِہٖ وَ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ وَ اَلْزَمَهُمْ كَلِمَۃَ التَّقْوٰی وَ كَانُوْۤا اَحَقَّ بِهَا وَ اَهْلَهَا ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمًا۝

“তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন। তারাই তো কুফরী করেছে এবং বাধা দিয়েছে তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে এবং অবস্থানরত কোরবানীর জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌঁছতে। যদি মক্কায় কিছুসংখ্যক ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী না থাকত, যাদেরকে তোমরা জানতে না। অর্থাৎ তাদের পিষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, অতঃপর তাদের কারণে তোমরা অজ্ঞাতসারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে, তবে সব কিছু চুকিয়ে দেয়া হত; কিন্তু এ কারণে চুকানো হয়নি, যাতে আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে দাখিল করে নেন। যদি তারা সরে যেত, তবে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শস্তি দিতাম। কেননা, কাফেররা তাদের অন্তরে মূর্খতা-যুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুত তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (৪৮:২৪ – ২৬)

 

 

মক্কা ও খায়বর বিজয়ের ইঙ্গিত

وَ اُخْرٰی تُحِبُّوْنَهَا ؕ نَصْرٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَتْحٌ قَرِیْبٌ ؕ وَّ بَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ ۝

“এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মু’মিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।” (৬১:১৩)

لَقَدْ صَدَقَ اللّٰهُ رَسُوْلَهُ الرُّءْیَا بِالْحَقِّ ۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللّٰهُ اٰمِنِیْنَ ۙ مُحَلِّقِیْنَ رُءُوْسَکُمْ وَ مُقَصِّرِیْنَ ۙ لَا تَخَافُوْنَ ؕ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوْا فَجَعَلَ مِنْ دُوْنِ ذٰلِكَ فَتْحًا قَرِیْبًا۝

“আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে –হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।” (৪৮:২৭)।”

 

শহীদের মর্যাদা

وَ لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ قُتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ اَمْوَاتًا ؕ بَلْ اَحْیَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ یُرْزَقُوْنَ۝

“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।” (৩:১৬৯)

اِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ ۟ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىۃِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ ؕ وَ مَنْ اَوْفٰی بِعَہْدِہٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِہٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ ۝

“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে: অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন–দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।” (৯:১১১)

وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

“আর তােমরা যদি আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তােমরা যা কছিু সংগ্রহ করে থাক আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও করুণা সে সবকছিুর চয়েে উত্তম।” (৩:১৫৭)

وَ لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ قُتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ اَمْوَاتًا ؕ بَلْ اَحْیَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ یُرْزَقُوْنَ ۝ فَرِحِیْنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِہٖ ۙ وَیَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِیْنَ لَمْ یَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ ۙ اَلَّا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَلَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ ۝ یَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَفَضْلٍ ۙ وَاَنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِیْنَ۝

“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” (৩:১৬৯ – ১৭১)

 فَالَّذِیْنَ هَاجَرُوْا وَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ وَ اُوْذُوْا فِیْ سَبِیْلِیْ وَ قٰتَلُوْا وَ قُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَیِّاٰتِهِمْ وَ لَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ ۚ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عِنْدَہٗ حُسْنُ الثَّوَابِ۝

“তারপর সে সমস্ত লোক যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। এবং তাদেরকে প্রবিষ্ট করব জান্নাতে যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এই হলো বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়।” (৩:১৯৫)

وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِیْقًا ۝ ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللّٰهِ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ عَلِیْمًا ۝

“আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। এটা হল আল্লাহ-প্রদত্ত মহত্ত¡। আর আল্লাহ যথেষ্ট পরিজ্ঞাত।” (৪:৬৯-৭০)

وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِہٖۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصِّدِّیْقُوْنَ ٭ۖ وَ الشُّهَدَآءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ ؕ لَهُمْ اَجْرُهُمْ وَ نُوْرُهُمْ ؕ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ كَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ۝

“আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে।” (৫৭:১৯)

وَ الَّذِیْنَ هَاجَرُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ثُمَّ قُتِلُوْۤا اَوْ مَاتُوْا لَیَرْزُقَنَّهُمُ اللّٰهُ رِزْقًا حَسَنًا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَهُوَ خَیْرُ الرّٰزِقِیْنَ ۝ لَیُدْخِلَنَّهُمْ مُّدْخَلًا یَّرْضَوْنَہٗ ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَعَلِیْمٌ حَلِیْمٌ ۝

“যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা। তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌঁছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল।” (২২:৫৮ – ৫৯)

لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَہٗ جٰهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَ اَنْفُسِهِمْ ؕ وَ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَیْرٰتُ ۫ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ۝ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا ؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ۝

“কিন্তু রাসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন–কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হলো বিরাট সাফল্য।” (৯:৮৮ – ৮৯)

إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ ۚ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

“তােমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তাে তমেনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলােকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আর্বতন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তােমাদরে কিছু লােককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদরেকে ভালবাসনে না ।” (৩:১৪০)

অধ্যায়সমূহ