এ অধ্যায়ের বিষয়সমূহ
Toggleসহাবায়ে কেরাম: সর্বোত্তম উম্মত
মহানবী মুহাম্মদ (সা) এর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম উম্মত ছিলেন তাঁর সাহাবায়ে কেরাম । তাঁর ভাষায় তাঁরা ছিলেন ইসলামের নক্ষত্রস্বরূপ । তাঁদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “সত্তরটি জাতির মধ্যে তোমরাই সর্বশেষ, আল্লাহর নিকট তোমরা হলে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।” (আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ ও আল-হাকিম) । এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।” …… (৩:১১০)
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ۙ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَیْرُ الْبَرِیَّۃِ جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنّٰتُ عَدْنٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُ ؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِیَ رَبَّہٗ
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।” (৯৮:৭ – ৮)وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ کُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ اِنْ یَّمْسَسْکُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُہٗ ؕ وَ تِلْكَ الْاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیْنَ النَّاسِ ۚ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَیَتَّخِذَ مِنْکُمْ شُهَدَآءَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَ
“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।” (৩:১৩৯ – ১৪০)مُّحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ ط وَالَّذِيْنَ مَعَه اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاۤءُ بَيْنَهُمْ تَرٰىهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوٰنًا ط سِيْمَاهُمْ فِىْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ ط ذٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِى التَّوْرٰىةِ وَمَثَلُهُمْ فِى الْاِنْجِيْلِ ط كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْـَٔه فَـَٔازَرَه فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰى عَلٰى سُوْقِه يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيْغِيْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ط وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصّٰلِحٰتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَّاَجْرًا عَظِيْمًۢا
“মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।” (৪৮:২৯)
সাহাবাগণের অনন্য অবদান
দ্বীন–ইসলামের প্রচার কালে নবী করীম (সা) সঙ্গ–লাভ করেন একদল হেদায়েতপ্রাপ্ত মানুষ, যারা তাঁর সাহাবা নামে খ্যাত। তাঁর সাহচর্যে থেকে তাঁরা অর্জন করেন ঈমানী দৃঢ়তা, নেক আমলের অনুপ্রেরণা এবং প্রবল আত্মিক শক্তি । নবীজী (সা)-এর সাথে তাঁরা আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও প্রসারের কাজে সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রথমে মক্কায় এবং হিজরতের পরে মদীনায় ইসলামের দাওয়াতের কাজ পরিচালিত হয়। এ কাজে সাহাবাগণ তাঁদের জান–মাল ও সর্বস্ব উৎসর্গ করে দেন। আল্লাহ্ ও নবীর প্রেমে তাঁরা ছিলেন উৎসর্গীকৃত প্রাণ। মক্কার মোহাজের ও মদীনার আনসারদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ মহান আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় এবং অবশেষে ইসলাম আল্লাহর দ্বীন হিসেবে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁরা এ মহান কাজের জন্য আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করেন। তাঁদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
فَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِہٖ وَ عَزَّرُوْهُ وَ نَصَرُوْهُ وَ اتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ مَعَہٗۤ ۙ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
“……সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।” (৭:১৫৭)
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের ভাষ্য অনুযায়ী নবী করীম (সা) -এর সাহাবাগণ (রা) ছিলেন দ্বীন–ইসলামের খেদমতকারী সর্বোত্তম উম্মত। তাঁদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। তাঁরা নবীজীর (সা) কাছ থেকে সরাসরি দ্বীনের শিক্ষা পেয়েছিলেন। তাই মহান আল্লাহ্ তাঁদেরকে তাঁর দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর প্রিয় নবীর (সা) সাহায্যকারী ও দায়িত্ববহনকারী হিসেবে পছন্দ করেছেন। নবীজী (সা)-এর সংস্পর্শে তাঁদের অন্তর হয়ে উঠেছিল পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও খাঁটি ঈমানে পরিপূর্ণ। তাঁরা সবাই নেক কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতেন, অন্যের প্রয়োজনকে নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশী মূল্য দিতেন এবং সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। নবীজী (সা) -কে তাঁরা নিজের জান–মাল ও সন্তান–সন্ততির চেয়েও বেশী ভালবাসতেন। আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্যে তাঁরা ছিলেন পুরোপুরি আত্মসমর্পিত। দ্বীনের প্রতি তাঁদের ভালবাসা ও আত্মোৎসর্গ ছিল সমগ্র উম্মতের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শস্বরূপ। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর সাহাবাগণকে (রা) উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে তুলনা করেছেন। বিভিন্ন হাদীসে তাঁদের উচ্চ মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনেও মহান আল্লাহ্ তাঁদের মহৎ অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। নবীজী (সা) -এর ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করে তাঁরা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা জানালেন:
رَبَّنَاۤ اِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِیًا یُّنَادِیْ لِلْاِیْمَانِ اَنْ اٰمِنُوْا بِرَبِّکُمْ فَاٰمَنَّا ٭ۖ رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ كَفِّرْ عَنَّا سَیِّاٰتِنَا وَ تَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ رَبَّنَا وَ اٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰی رُسُلِكَ وَ لَا تُخْزِنَا یَوْمَ الْقِیٰمَۃِ ؕ اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِیْعَادَ
“হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দান কর, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে তুমি অপমানিত করো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না।” (৩:১৯৩ – ১৯৪)
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّیْ لَاۤ اُضِیْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْکُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰی ۚ بَعْضُکُمْ مِّنْۢ بَعْضٍ ۚ فَالَّذِیْنَ هَاجَرُوْا وَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ وَ اُوْذُوْا فِیْ سَبِیْلِیْ وَ قٰتَلُوْا وَ قُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَیِّاٰتِهِمْ وَ لَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ ۚ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عِنْدَہٗ حُسْنُ الثَّوَابِ
“অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। তারপর সে সমস্ত লোক যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। এবং তাদেরকে প্রবিষ্ট করব জান্নাতে যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এই হলো বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়।” (৩:১৯৫)
وَ اِذَا جَآءَكَ الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِاٰیٰتِنَا فَقُلْ سَلٰمٌ عَلَیْکُمْ كَتَبَ رَبُّکُمْ عَلٰی نَفْسِهِ الرَّحْمَۃَ ۙ اَنَّہٗ مَنْ عَمِلَ مِنْکُمْ سُوْٓءًۢ ابِجَهَالَۃٍ ثُمَّ تَابَ مِنْۢ بَعْدِہٖ وَ اَصْلَحَ فَاَنَّہٗ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
“(হে নবী) আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিনঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়।” (৬:৫৪)
الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ ۚ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ “যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম। তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের পরওয়ারদেগার স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি। তথায় তারা থাকবে চিরদিন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার।” (৯:২০–২২)
দ্বীন-ইসলামের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের আনুগত্য ও ভালবাসা
وَ اِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَی الرَّسُوْلِ تَرٰۤی اَعْیُنَهُمْ تَفِیْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّ ۚ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاکْتُبْنَا مَعَ الشّٰهِدِیْنَ وَ مَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ مَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ ۙ وَ نَطْمَعُ اَنْ یُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصّٰلِحِیْنَ
“আর রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা তা যখন শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলে: হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদেরকেও ঈমানের সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করে নাও। আমাদের কি ওযর থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে, তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না এবং এ আশা করবো না যে, আমদের প্রতিপালক আমাদেরকে সৎলোকদের দলভুক্ত করে দেবেন।” (৫:৮৩ – ৮৪)
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْهِ مِنْ رَّبِّہٖ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِكَتِہٖ وَ کُتُبِہٖ وَ رُسُلِہٖ لَا نُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِہٖ وَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا ٭۫ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَ اِلَیْكَ الْمَصِیْرُ
“রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” (২:২৮৫)
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِیْنَ اِذَا دُعُوْۤا اِلَی اللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ لِیَحْکُمَ بَیْنَهُمْ اَنْ یَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ وَ یَخْشَ اللّٰهَ وَ یَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
“মু’মিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য।” (২৪:৫১ – ৫২)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجٰهَدُوْا فِى سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوا وَّنَصَرُوْٓا اُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيْمٌ
“আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য–সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।” (৮:৭৪)
فَرِحِیْنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِہٖ ۙ وَیَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِیْنَ لَمْ یَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ ۙ اَلَّا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَلَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ یَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَفَضْلٍ ۙ وَاَنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِیْنَ
“আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই।আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” (৩:১৭০ – ১৭১)
وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ کُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ اِنْ یَّمْسَسْکُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُہٗ ؕ وَ تِلْكَ الْاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیْنَ النَّاسِ ۚ وَ لِیَعْلَمَ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَیَتَّخِذَ مِنْکُمْ شُهَدَآءَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیْنَ
“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মু’মিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।” (৩:১৩৯ – ১৪০)
اَلَّذِیْنَ اسْتَجَابُوْا لِلّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ مِنْۢ بَعْدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ؕۛ لِلَّذِیْنَ اَحْسَنُوْا مِنْهُمْ وَ اتَّقَوْا اَجْرٌ عَظِیْمٌ اَلَّذِیْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَکُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِیْمَانًا ٭ۖ وَّ قَالُوْا حَسْبُنَا اللّٰهُ وَ نِعْمَ الْوَكِیْلُ فَانْقَلَبُوْا بِنِعْمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضْلٍ لَّمْ یَمْسَسْهُمْ سُوْٓءٌ ۙ وَّ اتَّبَعُوْا رِضْوَانَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ ذُوْ فَضْلٍ عَظِیْمٍ
“যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব। যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ–সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী। অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট।” (৩:১৭২ – ১৭৪)
وَّ لَا عَلَی الَّذِیْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُکُمْ عَلَیْهِ ۪ تَوَلَّوْا وَّ اَعْیُنُهُمْ تَفِیْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَلَّا یَجِدُوْا مَا یُنْفِقُوْنَ اِنَّمَا السَّبِیْلُ عَلَی الَّذِیْنَ یَسْتَاْذِنُوْنَكَ وَ هُمْ اَغْنِیَآءُ ۚ رَضُوْا بِاَنْ یَّکُوْنُوْا مَعَ الْخَوَالِفِ ۙ وَ طَبَعَ اللّٰهُ عَلٰی قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا یَعْلَمُوْنَ
“আর (অভিযোগ) না আছে তাদের উপর যারা এসেছে আপনার নিকট যেন আপনি তাদের বাহন দান করেন এবং আপনি বলেছেন, আমার কাছে এমন কোন বস্তু নেই যে, তার উপর তোমাদের সওয়ার করাব তখন তারা ফিরে গেছে অথচ তখন তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু বইতেছিল এ দুঃখে যে, তারা এমন কোন বস্তু পাচ্ছে না যা ব্যয় করবে। অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা আপনার নিকট (যুদ্ধ–যাত্রা থেকে) অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী। যারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। আর আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহে। বস্তুত তারা জানতেও পারেনি।” (৯:৯২ – ৯৩)
وَ مِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ یُّؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ یَتَّخِذُ مَا یُنْفِقُ قُرُبٰتٍ عِنْدَ اللّٰهِ وَ صَلَوٰتِ الرَّسُوْلِ ؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَۃٌ لَّهُمْ ؕ سَیُدْخِلُهُمُ اللّٰهُ فِیْ رَحْمَتِہٖ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
“আর কোন কোন মরুবাসী হল তারা, যারা ঈমান আনে আল্লাহর উপর, ক্বিয়ামত দিনের উপর এবং নিজেদের ব্যয়কে আল্লাহর নৈকট্য এবং রাসূলের দোয়া লাভের উপায় বলে গণ্য করে। জেনো! তাই হল তাদের ক্ষেত্রে নৈকট্য। আল্লাহ তাদেরকে নিজের রহমতের অন্তর্ভুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।” (৯:৯৯)
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন–কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।” (৯:১০০)اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ وَ اِذَا كَانُوْا مَعَہٗ عَلٰۤی اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ یَذْهَبُوْا حَتّٰی یَسْتَاْذِنُوْهُ ؕ اِنَّ الَّذِیْنَ یَسْتَاْذِنُوْنَكَ اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ ۚ فَاِذَا اسْتَاْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَاْنِهِمْ فَاْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
“মু’মিন তো তারাই; যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং রাসূলের সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে শরীক হলে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত চলে যায় না। যারা আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। অতএব তারা আপনার কাছে তাদের কোন কাজের জন্যে অনুমতি চাইলে আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুমতি দিন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।” (২৪:৬২)
اِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ وَمَنْ اَوْفَىٰ بِمَا عٰهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
“যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” (৪৮:১০)
উম্মতে মুহাম্মদী কর্তৃক দ্বীনের দাওয়াত
মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই চলছে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ। এ কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন সকল নবী ও রসূল এবং আলেমগণ। নবী–রাসূলগণ তাঁদের এ দাওয়াতি কাজের জন্য তাঁদের উম্মতের নিকট থেকে কোনরূপ প্রতিদান আশা করতেন না। বরং তাঁরা বলতেন, আমাদের প্রতিদানতো রক্ষিত আছে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে। আদি মানব হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত নবুওতের এ ধারা অব্যাহত ছিল। সর্বশেষ নবীর আগমণের পর রিসালত ও নবুওতের পরিসমাপ্তি ঘটে। তাঁর তিরোধানের পর সাহাবায়ে কেরামের উপর দ্বীনি দাওয়াতের দায়িত্ব বর্তায়। নবী করীম (সা) জীবিত থাকাকালীন সময়েই তাঁদের দ্বারা এ দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁরাই ছিলেন রাসূল (সা) ও পরবর্তী উম্মতের মধ্যে প্রথম যোগসূত্র।
অনুপস্থিত ও অনাগত উম্মতবৃন্দ সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ সংকলন লাভ করেছেন এবং এর তফসীর বা ব্যাখ্যা পেয়েছেন। এ ছাড়া একমাত্র তাঁদেরই বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে নবী করীম (সা) এর শিক্ষা, তাঁর উপদেশ ও দৈনন্দিন জীবনাদর্শ তথা দ্বীনের যাবতীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একমাত্র তাঁদেরই বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে অনুপস্থিত ও অনাগত উম্মত পবিত্র কুরআন, এর তফসীর বা ব্যাখ্যা, নবী করীম (সা) এর পরিচয়, তাঁর শিক্ষা, উপদেশ, আদর্শ তথা দ্বীনের যাবতীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ্ (সা) -এর ব্যক্তিগত জীবনাচরণ এবং তৎসংশ্লিষ্ট দ্বীনের খুঁটিনাটি বিষয়ও তাঁদের বর্ণনা থেকে বাদ পড়েনি। পরবর্তীরা তাঁদের এ দাওয়াতি কার্যক্রমকে যুগ যুগ ধরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বিদায় হজ্জ্বের ভাষণেও নবী করীম (সা) দ্বীন প্রচারের ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আজ যারা এখানে হাজির হয়েছো আমার বাণী পৌঁছে দাও তাদের কাছে যারা এখানে উপস্থিত নেই, হতে পারে উপস্থিত শ্রোতৃমন্ডলীর চেয়ে অনুপস্থিত ব্যক্তিবর্গের নিকট আমার কথাগুলো বেশী গুরুত্ব বহন করবে।’
দাওয়াতের ক্ষেত্রে সাহাবীগণের প্রতি রাসুলুল্লাহ্ (সা) -এর নির্দেশ ছিল, ‘একটি আয়াতও যদি হয় তা আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে সহজ পথ বলে দেবে, কোন কঠিন অবস্থায় ফেলবে না, তাদেরকে সুসংবাদ দেবে এবং নিরুৎসাহিত করবে না (সহী বুখারী শরীফ)।’ এ হাদীসে দ্বীন প্রচারের শুরুতেই কোনরূপ কঠোরতা অবলম্বন না করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর দ্বীনি দাওয়াতের দায়িত্ব সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত এখানে উল্লেখ করা হলো:
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُوْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ اُوْلُوْا بَقِيَّةٍ يَّنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِى الْاَرْضِ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَنْ اَنْجَيْنَا مِنْهُمْ ط وَاتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَآ اُتْرِفُوْا فِيْهِ وَكَانُوْا مُجْرِمِيْنَ وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرٰى بِظُلْمٍ وَّاَهْلُهَا مُصْلِحُوْنَ
“তোমাদের আগে যে সকল জাতি চলে গিয়েছে তাদের মধ্যে এমন লোক কেন থাকল না, যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দিতে পারত? তবে কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া, যাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা করেছিলাম। আর যালিমদেরকে যে ঐশ্বর্য্য দেয়া হয়েছিল সেগুলো নিয়েই তারা মেতে রইল, তারা ছিল পাপাচারী। আপনার প্রভু এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে এমন জনপদ ধ্বংস করে দেবেন যার অধিবাসীরা সংশোধনরত।” (১১:১১৬ – ১১৭)
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُوْنَ لِيُنْفِرُوْا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيْتَفَقَّهُوَ ا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْا اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ
“আর সমস্ত মু’মিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে।” (৯:১২২)
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنٰتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَوةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَوةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه اُوْلئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ ۗ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।” (৯:৭১)
وَجَاهِدُوْا فِى اللهِ حَقَّ جِهَادِه هُوَ اجْتَبٰىكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ
“তোমরা আল্লাহর পথে সর্বাত্মক সাধনা কর, যেভাবে তাঁর পথে সর্বাত্মক সাধনা করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (দ্বীনের জন্য) মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি …. ।” (২২:৭৮)
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوٰنِ وَاتَّقُوْا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَاب
“……..আর ভাল কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পাপ ও সীমালংঘনের কাজে কেউ কাউকে সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।” (৫:২)
قُلْ هٰذِه سَبِيْلِىۤ اَدْعُوْۤا اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَا۠ وَمَنْ اتَّبَعَنِى وَسُبْحٰنَ اللهِ وَمَاۤ اَنَا۠ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
“বলে দিন: এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই সুস্পষ্টভাবে এবং বুঝেসুঝে – আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (১২:১০৮)
اُوْلٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِى قُلُوْبِهِمْ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِىۤ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًۢا بَلِيْغًا
“এরা (মুনাফেকরা) হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তায়ালা অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন যা তাদের জন্য কল্যাণকর।” (৪:৬৩)
هُدَى الله ِهُوَ الْهُدٰى وَاُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعٰلَمِيْنَ وَاَنْ اَقِيْمُوْا الصَّلَوٰةَ وَاتَّقُوْهُ وَهُوَ الَّذِىۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
“…….আপনি বলে দিন: নিশ্চয় আল্লাহর পথই সুপথ। আমরা আদিষ্ট হয়েছি বিশ্ব–পালনকর্তার সমীপে আত্মসমর্পিত হতে এবং তা এই যে, নামায কায়েম করতে এবং তাঁকে ভয় করতে। তাঁর সামনেই তোমরা একত্রিত হবে।” (৬:৭১ – ৭২)
আল্লাহ্ তায়ালা জান্নাতের মূল্যে মু’মিন বান্দার জান-মাল ক্রয় করে নিয়েছেন
اِنَّ اللّٰهَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَهُمْ وَ اَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیَقْتُلُوْنَ وَ یُقْتَلُوْنَ ۟ وَعْدًا عَلَیْهِ حَقًّا فِی التَّوْرٰىۃِ وَ الْاِنْجِیْلِ وَ الْقُرْاٰنِ ؕ وَ مَنْ اَوْفٰی بِعَہْدِہٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِہٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ
“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে। অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন–দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।” (৯:১১১)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِىْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ ۗ وَاللهُ رَءُوْفٌۢ بِالْعِبَادِ
“আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।” (২:২০৭)
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَه جٰهَدُوْا بِاَمْوٰلِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ وَاُوْلٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرٰتُ وَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِى مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
“কিন্তু রাসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন–কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হলো বিরাট সাফল্য।” (৯:৮৮ – ৮৯)
وَ لَمَّا رَاَ الْمُؤْمِنُوْنَ الْاَحْزَابَ ۙ قَالُوْا هٰذَا مَا وَعَدَنَا اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗ وَ صَدَقَ اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗ ۫ وَ مَا زَادَهُمْ اِلَّاۤ اِیْمَانًا وَّ تَسْلِیْمًا مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیْهِ ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰی نَحْبَہٗ وَ مِنْهُمْ مَّنْ یَّنْتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوْا تَبْدِیْلًا لِّیَجْزِیَ اللّٰهُ الصّٰدِقِیْنَ بِصِدْقِهِمْ وَ یُعَذِّبَ الْمُنٰفِقِیْنَ اِنْ شَآءَ اَوْ یَتُوْبَ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا
“যখন মু’মিনরা শত্রুবাহিনীকে দেখল, তখন বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণই বৃদ্ধি পেল। মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৩৩:২২ – ২৪)
وَاذْكُرُوا إِذْ أَنتُمْ قَلِيلٌ مُّسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَن يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآوَاكُمْ وَأَيَّدَكُم بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ“আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে অল্প, পরাজিত অবস্থায় পড়েছিলে দেশে; ভীত–সস্ত্রস্ত্র ছিলে যে, তোমাদের না অন্যেরা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি তোমাদিগকে আশ্রয়ের ঠিকানা দিয়েছেন, স্বীয় সাহায্যের দ্বারা তোমাদিগকে শক্তি দান করেছেন এবং পরিচ্ছন্ন জীবিকা দিয়েছেন যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।” (৮:২৬)هُوَ الَّذِىۤ اَنزَلَ السَّكِيْنَةَ فِىْ قُلُوْبِ الْمُؤْمِنِيْنَ لِيَزْدَادُوْٓا اِيْمٰنًا مَّعَ اِيْمٰنِهِمْ ط وَللهِ جُنُوْدُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا لِّيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ وَكَانَ ذٰلِكَ عِنْدَ اللهِ فَوْزًا عَظِيْمًا
“তিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ঈমান এজন্যে বেড়ে যায়, যাতে তিনি ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে এবং যাতে তিনি তাদের পাপ মোচন করেন। এটাই আল্লাহর কাছে মহাসাফল্য।” (৪৮:৪ – ৫)
وَجَاهِدُوْا فِى اللهِ حَقَّ جِهَادِه هُوَ اجْتَبٰىكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ مِّلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرٰهِيْمَ هُوَ سَمّٰىكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِىْ هٰذَا لِيْكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ فَاَقِيْمُوْا الصَّلَوٰةَ وَاٰتُوْا الزَّكَوٰةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلٰىكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
“তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। এ ধর্ম (ইসলাম) তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মের অনুরূপ। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কুরআনেও, যাতে রাসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।” (২২:৭৮)
আল্লাহ্ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের প্রতি সন্তুষ্ট
وَالسّٰبِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهٰجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسٰنٍ رَّضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ تَحْتَهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا ط ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন–কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।” (৯:১০০)
وَ الَّذِیْنَ هَاجَرُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ثُمَّ قُتِلُوْۤا اَوْ مَاتُوْا لَیَرْزُقَنَّهُمُ اللّٰهُ رِزْقًا حَسَنًا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَهُوَ خَیْرُ الرّٰزِقِیْنَ لَیُدْخِلَنَّهُمْ مُّدْخَلًا یَّرْضَوْنَہٗ ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَعَلِیْمٌ حَلِیْمٌ ذٰلِكَ ۚ وَ مَنْ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوْقِبَ بِہٖ ثُمَّ بُغِیَ عَلَیْهِ لَیَنْصُرَنَّهُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَعَفُوٌّ غَفُوْرٌ
“যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা। তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌঁছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল। এতো (প্রকৃত অবস্থা), যে ব্যক্তি নিপীড়িত হয়ে নিপীড়ন পরিমাণে প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং পুনরায় সে নিপীড়িত হয়, আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী ক্ষমাশীল।” (২২:৫৮ – ৬০)
لَقَدْ رَضِیَ اللّٰهُ عَنِ الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ یُبَایِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِیْنَۃَ عَلَیْهِمْ وَ اَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِیْبًا
“আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে বাইয়াত (শপথ) করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।” (৪৮:১৮)
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوْالدَّارَ وَالْاِيْمٰنَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِى صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّاۤ اُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰىۤ اَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوْقَ شُحَّ نَفْسِه فَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ وَالَّذِيْنَ جَآءُوْ مِنۢ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِاِخْوٰنِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمٰنِ وَلَا تَجْعَلْ فِى قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَآ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
“যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলে: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।” (৫৯:৯ – ১০)
وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوۃِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَہٗ وَ لَا تَعْدُ عَیْنٰكَ عَنْهُمْ ۚ تُرِیْدُ زِیْنَۃَ الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا
“আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। …..” (১৮:২৮)
لَقَدْ تَّابَ اللّٰهُ عَلَی النَّبِیِّ وَ الْمُهٰجِرِیْنَ وَ الْاَنْصَارِ الَّذِیْنَ اتَّبَعُوْهُ فِیْ سَاعَۃِ الْعُسْرَۃِ مِنْۢ بَعْدِ مَا كَادَ یَزِیْغُ قُلُوْبُ فَرِیْقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّہٗ بِهِمْ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ
“আল্লাহ দয়াশীল নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মুহূর্তে নবীর সঙ্গে ছিল, যখন তাদের এক দলের অন্তর ফিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর তিনি দয়াপরবশ হন তাদের প্রতি। নিঃসন্দেহে তিনি তাদের প্রতি দয়াশীল ও করুণাময়।” (৯:১১৭)
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اذْکُرُوْا نِعْمَۃَ اللّٰهِ عَلَیْکُمْ اِذْ جَآءَتْکُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَیْهِمْ رِیْحًا وَّ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرًا اِذْ جَآءُوْکُمْ مِّنْ فَوْقِکُمْ وَ مِنْ اَسْفَلَ مِنْکُمْ وَ اِذْ زَاغَتِ الْاَبْصَارُ وَ بَلَغَتِ الْقُلُوْبُ الْحَنَاجِرَ وَ تَظُنُّوْنَ بِاللّٰهِ الظُّنُوْنَا هُنَالِكَ ابْتُلِیَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ زُلْزِلُوْا زِلْزَالًا شَدِیْدًا
“হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে। সে সময়ে মু’মিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল।” (৩৩:৯ – ১১)
لَقَدْ نَصَرَکُمُ اللّٰهُ فِیْ مَوَاطِنَ كَثِیْرَۃٍ ۙ وَّ یَوْمَ حُنَیْنٍ ۙ اِذْ اَعْجَبَتْکُمْ كَثْرَتُکُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْکُمْ شَیْئًا وَّ ضَاقَتْ عَلَیْکُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّیْتُمْ مُّدْبِرِیْنَ ثُمَّ اَنْزَلَ اللّٰهُ سَكِیْنَتَہٗ عَلٰی رَسُوْلِہٖ وَ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ وَ اَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَ عَذَّبَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا ؕ وَ ذٰلِكَ جَزَآءُ الْکٰفِرِیْنَ
“আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের প্রফুল্ল করেছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল। অতঃপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। তারপর আল্লাহ নাযিল করেন নিজের পক্ষ থেকে সান্ত¡না, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের প্রতি এবং অবতীর্ণ করেন এমন সেনাবাহিনী যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। আর শাস্তি প্রদান করেন কাফেরদের এবং এটি হল কাফেরদের কর্মফল।” (৯:২৫ – ২৬)
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَـٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَـٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি–গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।” (৫৮:২২)
মুসলিম উম্মাহ্: একটি মধ্যমপন্থী উম্মত
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পছন্দ করেন মধ্যমপন্থা। তাই তিনি তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন ও বাড়াবাড়ি বর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। দুনিয়াদারি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র আখিরাত ও ইবাদত–বন্দেগী নিয়ে ব্যস্ত থাকতে তিনি নিষেধ করেছেন। ইসলাম যেমন বৈরাগ্যবাদ সমর্থন করে না, তেমনি দুনিয়ার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিকেও নিষেধ করে। ইসলাম এ দু’য়ের মধ্যে একটা ভারসাম্যাবস্থা এনেছে। তাই একজন মুসলিমের নীতি হলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা, কোনরূপ বাড়াবাড়ি না করা, দুনিয়ার প্রতি চরম আসক্তি বা নিরাসক্তি না থাকা– অর্থাৎ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। ইসলামে মধ্যমপন্থা ন্যায়নীতির সাথে সম্পৃক্ত যা প্রতিটি ক্ষেত্রে সুবিচার ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ নিশ্চিত করে। ইসলামের নবী (সা) এর জীবনাচরণও ছিল মধ্যমপন্থী। নিম্নোক্ত সহীহ হাদীসে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আব্দুল্লাহ, আমাকে জানানো হয়েছে যে, তুমি প্রতিদিন রোজা রাখ এবং সারা রাত ইবাদত কর।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, অবশ্যই আমি তা করি।’ রাসূল (সা) বললেন, ‘এরূপ করবে না। রোজা ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখ আর রাতে ইবাদত কর এবং ঘুমাও। নিশ্চয়ই, তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে এবং তোমার স্ত্রীর তোমার উপর হক আছে।” (সহীহ বুখারী, ৪৯০৩)। অপর এক সহীহ হাদীসে হযরত সালমান ফারসী (রা) উদ্ধৃত করেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “তোমাদের প্রভুর প্রতি তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে, তোমাদের শরীরের প্রতি তোমাদের দায়িত্ব আছে, তোমাদের পরিবারের প্রতি তোমাদের দায়িত্ব আছে, সুতরাং প্রত্যেকের প্রতি তোমার দায়িত্ব পালন কর।” (সহীহ বুখারী, ১৮৬৭)
এতদ্সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত নিম্নে পেশ করা হলো:
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنٰکُمْ اُمَّۃً وَّسَطًا لِّتَکُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِ وَ یَکُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَیْکُمْ شَهِیْدًا ؕ
“এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।” …… (২:১৪৩)
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا
“আল্লাহ্ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমরা পরকালের আবাস খোঁজ কর, কিন্তু ইহকাল থেকে তোমার অংশের কথা ভুলে যেও না। …” (২৮:৭৭)
মুসলিম উম্মাহর প্রতি নির্দেশ: সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে…… (৩:১১০)
وَلْتَكُن مِّنكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।” (৩:১০৪)
یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُسَارِعُوْنَ فِی الْخَیْرٰتِ ؕ وَ اُولٰٓئِكَ مِنَ الصّٰلِحِیْنَ وَ مَا یَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ فَلَنْ یُّکْفَرُوْهُ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِالْمُتَّقِیْنَ
“তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল। তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হবে না। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বিষয়ে অবগত।” (৩:১১৪ – ১১৫)خُذِ الْعَفْوَ وَ اْمُرْ بِالْعُرْفِ وَ اَعْرِضْ عَنِ الْجٰهِلِیْنَ
“আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।” (৭:১৯৯)
یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ وَ اْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ انْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ اصْبِرْ عَلٰی مَاۤ اَصَابَكَ ؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
“হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।” (৩১:১৭)
وَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ ۘ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤْتُوْنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیْعُوْنَ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ ؕ اُولٰٓئِكَ سَیَرْحَمُهُمُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।” (৯:৭১)
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعٰبِدُوْنَ الْحٰمِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرّٰكِعُوْنَ السّٰجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ النَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ الْحٰفِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللّٰهِ ؕ وَ بَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ
“তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।” (৯:১১২)
وَ لَا تُطِیْعُوْۤا اَمْرَ الْمُسْرِفِیْنَ الَّذِیْنَ یُفْسِدُوْنَ فِی الْاَرْضِ وَ لَا یُصْلِحُوْنَ
“এবং সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য কর না; যারা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না।” (২৬:১৫১ – ১৫২)اِلَّا مَنْ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسْنًۢا بَعْدَ سُوْٓءٍ فَاِنِّیْ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
“তবে যে বাড়াবাড়ি করে এরপর মন্দ কর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে। নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (২৭:১১)
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَنْ دَعَآ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صٰلِحًا وَّقَالَ اِنَّنِىْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
“যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার।” (৪১:৩৩)
آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُم مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ ۖ فَالَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَأَنفَقُوا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيرٌ “তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে সম্পদ দিয়েছেন, তা থেকে দান–খয়রাত কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ পথে ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।” (৫৭:৭)
وَالَّذِیْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِیَۃً وَّ یَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَی الدَّارِ
“এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ।” (১৩:২২)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি
পারস্পরিক ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোর অন্যতম। ঈমানের ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বসুলভ সদ্ভাব ও সদাচারণ গড়ে উঠে তা তাদের পারস্পরিক ঐক্যকে সুদৃঢ় করে। মুসলমানদের মধ্যে আপন–পর ভেদাভেদ ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয় । হযরত আনাস (রা) বর্ণিত হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন, “সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অন্য মুসলমান ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ না করবে ।” (সহীহ বুখারী/মুসলিম) । নিজের জন্য যে আচরণ পছন্দনীয় অপর ভাইয়ের জন্যও তা- ই পছন্দ করতে হবে – এটাই ইসলামের নির্দেশ । এতে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায় এবং একটি সৌহার্দপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠে । এতদ্সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি হাদীস হলো:
-
“প্রকৃত মুসলমান সে – যে নিজের অশ্লীল ও ক্ষতিকর ভাষা ও কুকর্ম থেকে অন্য মুসলমানদের নিরাপদ রাখে ।” (সহীহ বুখারী) । “এক মুসলমান অন্য মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী আর হত্যা করা কুফরী ।” (সহীহ বুখারী) ।
-
“প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপর মুসলমানের জান—মাল—ইজ্জত পবিত্র ও সম্মানযোগ্য ।” (সহীহ মুসলিম) ।
আল্লাহর রাসূল (সা) মদীনার বুকে একটি সৌভ্রাতৃত্বমূলক সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তুলেছিলেন । তিনি মুসলিম উম্মাহর এ ভ্রাতৃপ্রতীম ঐক্যবোধকে একটি দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে, আবার একটি দালানের প্রাচীরের গাঁথুনীর সাথে তুলনা করে পারস্পরিক সংহতির অনবদ্য উদাহরণ পেশ করেছেন । প্রতিটি মুসলমান একে অপরের দ্বীনি বা ধর্মীয় ভাই । একই ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে তাদের এ ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির সম্পর্ক । এ সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ নিম্নে উদ্ধৃত করা করা হলো:
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَ لَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللّٰهِ جَمِیْعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوْا ۪ وَ اذْکُرُوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ عَلَیْکُمْ اِذْ کُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِکُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِہٖۤ اِخْوَانًا ۚ وَ کُنْتُمْ عَلٰی شَفَا حُفْرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَکُمْ مِّنْهَا ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمْ اٰیٰتِہٖ لَعَلَّکُمْ تَہْتَدُوْنَ
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَۃٌ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَ اَخَوَیْکُمْ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمْ تُرْحَمُوْنَ
“মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।” (৪৯:১০)
وَ اِنْ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اقْتَتَلُوْا فَاَصْلِحُوْا بَیْنَهُمَا ۚ فَاِنْۢ بَغَتْ اِحْدٰىهُمَا عَلَی الْاُخْرٰی فَقَاتِلُوا الَّتِیْ تَبْغِیْ حَتّٰی تَفِیْٓءَ اِلٰۤی اَمْرِ اللّٰهِ ۚ فَاِنْ فَآءَتْ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَ اَقْسِطُوْا ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُقْسِطِیْنَ
“যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন।” (৪৯:৯)وَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ ۘ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤْتُوْنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیْعُوْنَ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ ؕ اُولٰٓئِكَ سَیَرْحَمُهُمُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।” (৯:৭১)
وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِکُوْا بِہٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُکُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا
“আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস–দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।” (৪:৩৬)
وَ لَا یَاْتَلِ اُولُوا الْفَضْلِ مِنْکُمْ وَ السَّعَۃِ اَنْ یُّؤْتُوْۤا اُولِی الْقُرْبٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ الْمُهٰجِرِیْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ ۪ۖ وَ لْیَعْفُوْا وَ لْیَصْفَحُوْا ؕ اَلَا تُحِبُّوْنَ اَنْ یَّغْفِرَ اللّٰهُ لَکُمْ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্নীয়–স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” (২৪:২২)وَ لَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمْشِ فِی الْاَرْضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ وَ اقْصِدْ فِیْ مَشْیِكَ وَ اغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ ؕ اِنَّ اَنْكَرَ الْاَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِیْرِ
“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। (৩১:১৮–১৯)
وَ لَا تَسْتَوِی الْحَسَنَۃُ وَ لَا السَّیِّئَۃُ ؕ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَكَ وَ بَیْنَہٗ عَدَاوَۃٌ كَاَنَّہٗ وَلِیٌّ حَمِیْمٌ وَ مَا یُلَقّٰهَاۤ اِلَّا الَّذِیْنَ صَبَرُوْا ۚ وَ مَا یُلَقّٰهَاۤ اِلَّا ذُوْحَظٍّ عَظِیْمٍ وَ اِمَّا یَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّیْطٰنِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللّٰهِ ؕ اِنَّہٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ
“সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। এ চরিত্র তারাই লাভ করে, যারা সবর করে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান। যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (৪১:৩৪–৩৬)اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ السَّیِّئَۃَ ؕ نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا یَصِفُوْنَ “মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।” (২৩:৯৬))
اُدْعُوْا رَبَّکُمْ تَضَرُّعًا وَّ خُفْیَۃً ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الْمُعْتَدِیْنَ وَ لَا تُفْسِدُوْا فِی الْاَرْضِ بَعْدَ اِصْلَاحِهَا وَ ادْعُوْهُ خَوْفًا وَّ طَمَعًا ؕ اِنَّ رَحْمَتَ اللّٰهِ قَرِیْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِیْنَ
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি–মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। তাঁকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” (৭:৫৫–৫৬)وَ ابْتَغِ فِیْمَاۤ اٰتٰىكَ اللّٰهُ الدَّارَ الْاٰخِرَۃَ وَ لَا تَنْسَ نَصِیْبَكَ مِنَ الدُّنْیَا وَ اَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللّٰهُ اِلَیْكَ وَ لَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِی الْاَرْضِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الْمُفْسِدِیْنَ
“আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তদ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর, এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেয়ো না। তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (২৮:৭৭)
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنٰکُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّ اُنْثٰی وَ جَعَلْنٰکُمْ شُعُوْبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْا ؕ اِنَّ اَکْرَمَکُمْ عِنْدَ اللّٰهِ اَتْقٰکُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ
“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে -ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (৪৯:১৩)لَا خَیْرَ فِیْ كَثِیْرٍ مِّنْ نَّجْوٰىهُمْ اِلَّا مَنْ اَمَرَ بِصَدَقَۃٍ اَوْ مَعْرُوْفٍ اَوْ اِصْلَاحٍۭ بَیْنَ النَّاسِ ؕ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللّٰهِ فَسَوْفَ نُؤْتِیْـهِ اَجْرًا عَظِیْمًا
“তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন কল্পে করতো তা স্বতন্ত্র। যে একাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমি তাকে বিরাট ছওয়াব দান করব।” (৪:১১৪)
اِنَّ الَّذِیْنَ فَرَّقُوْا دِیْنَهُمْ وَ كَانُوْا شِیَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِیْ شَیْءٍ ؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَی اللّٰهِ ثُمَّ یُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا یَفْعَلُوْنَ
“আপনি বলুনঃ আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য প্রতিপালক খোঁজব, অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক? যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে।” (৬:১৫৯)
وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ ؕ اِلَّا تَفْعَلُوْهُ تَکُنْ فِتْنَۃٌ فِی الْاَرْضِ وَ فَسَادٌ كَبِیْرٌ
“আর যারা কাফের তারা পারস্পরিক সহযোগী, বন্ধু। তোমরা যদি এমন ব্যবস্থা না কর, তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিস্তার লাভ করবে এবং দেশময় বড়ই অকল্যাণ হবে।” (৮:৭৩)
وَ لَا یَجْرِمَنَّکُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْکُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا ۘ وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ
“হে মুমিনগণ! তোমরা অসম্মান করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহ ও সম্মানিত মাসসমূহকে, এবং হরমে কুরবানীর জন্যে নির্দিষ্ট জন্তুকে এবং ঐসব জন্তুকে, যাদের গলায় কন্ঠাভরণ রয়েছে, এবং ঐসব লোককে যারা সম্মানিত গৃহ অভিমুখে যাচ্ছে, যারা স্বীয় পালনকর্তার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে। যখন তোমরা এহরাম থেকে বের হয়ে আস, তখন শিকার কর। যারা পবিত্র মসজিদ থেকে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করেছিল, সেই সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।” (৫:২)