১৩ তম অধ্যায় : সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা)

 

এ অধ্যায়ের বিষয়সমূহ

হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর আবির্ভাব

প্রায় চৌদ্দশত বছর পূর্বে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সা) -কে সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং সৃষ্টিকুলের রহমত হিসেবে এ দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে সাইয়েদুল মুরসালিন, আশরাফুল আম্বিয়া, মানবজাতির সর্দার তথা সৃষ্টিকুলের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ও সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সমগ্র মানবজাতিকে হেদায়েতের পথে আহ্বান করাই ছিল তাঁর নবুওতি মিশন। “আইয়্যামে জাহেলিয়াত” নামে পরিচিত এক অন্ধকার যুগে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আবির্ভাব ঘটেছিল সত্য ও ন্যায়ের সমুজ্জ্বল এক বার্তাবাহক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে। শিরকের মত মহাপাপ এবং যুলুম ও কুসংস্কারের আবর্তে পড়ে তখন মানবজাতি ছিল কলুষিত ও দিশাহারা। সমগ্র আরবভূমি ছিল নীতি–নৈতিকতা বিবর্জিত এক বর্বরতার প্রতিচ্ছবি। সেই তমসাচ্ছন্ন মানবজাতিকে সুপথ প্রদর্শনের জন্য এক উজ্জ্বল আলোক–বর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)।

মানবজাতিকে পরিশুদ্ধ ও ভ্রান্তিমুক্ত করে তাদেরকে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ, শান্তি ও মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করানোই ছিল তাঁর নবুওতি দায়িত্ব যা তিনি যথাযথভাবে পালন করেছেন। তিনি আল্লাহর নির্দেশে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও যথার্থ উপদেশের মাধ্যমে মানুষের সামনে সুন্দরভাবে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন এবং সর্বোত্তম পন্থায় আল্লাহর দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। মহানবী (সা) তাঁর তেইশ বছরের নবুওতি জীবন শেষে তাঁর উম্মতের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য যে দু’টি মূল্যবান সম্পদ রেখে গেছেন তা হলো তাঁর ওপর নাযিলকৃত আল্লাহর কিতাব পবিত্র “কুরআন” এবং তাঁর কথা ও কর্ম–পদ্ধতি ‘সুন্নাহ্’। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা) এর জীবনাদর্শ ও তাঁর প্রচারিত দ্বীন ইসলাম সমুজ্জ্বল আলোক–বর্তিকার মতো ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতিকে সুপথ দেখাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় নবী (সা)–কে উদ্দেশ্য করে বলেন:

يٰۤاَيُّهَا النَّبِىُّ اِنَّاۤ اَرْسَلْنٰكَ شٰهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا۝ وَدَاعِيْا اِلَى اللهِ بِاِذْنِه وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا۝

“হে নবী, আমি আপনাকে একজন স্বাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানকারী ও প্রদীপ্ত এক আলোক–বর্তিকা হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (৩৩:৪৫ – ৪৬)

وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ۝

“আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” (৩৪:২৮)

 

নবী করীম (সা)-এর মর্যাদা ও গুণাবলী

মহানবী (সা) ছিলেন সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত এবং মহান ও উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। নবুওত লাভের পূর্বেই জনগণ তাঁর গুণাবলীর স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে দিয়েছিল “আল–আমিন” বা বিশ্বস্ত উপাধি। বাল্যকাল থেকেই তাঁর চরিত্র ও আচার–আচরণের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছিল বিশুদ্ধতার এক উজ্জ্বল রূপ। যদিও তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি, কিন্তু মহান আল্লাহর ভাবী–কালের নবীকে এক উন্নত মন–মানসিকতাসম্পন্ন ঐশ্বরিক ভাবধারায়  তৈরী করে নিয়েছিলেন। তাই তিনি ‘উম্মী’ (নিরক্ষর) হলেও ঐশী জ্ঞানে ছিলেন পরাকাষ্ঠা। চল্লিশ বছর বয়সে মহান আল্লাহর তরফ থেকে তিনি লাভ করলেন নবুওত – আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন তাঁকে সমগ্র মানবজাতির জন্য মনোনীত করলেন সর্বশেষ নবী ও রসূল হিসেবে এবং অভিহিত করলেন “রাহমাতুল্লিল আলামীন” অর্থাৎ জগতসমূহের অশীর্বাদস্বরূপ। তিনি তাঁকে ভূষিত করলেন সর্বোত্তম গুণাবলীতে এবং তাঁর অনুপম চরিত্র মাধুর্যকে করলেন সর্বযুগের সকল মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত তাঁর মর্যাদা ও গুণাবলী সম্পর্কিত আয়াতসমূহ নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো:

وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ۝

“আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।” (২১:১০৭)

وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ۝

“আপনি অবশ্যই সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী”।” (৬৮:৪)

وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
“আমি আপনার মর্যাদাকে করেছি সমুন্নত।” (৯৪:৪)

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِن رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّنَ ط وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيْمًا۝

“মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।” (৩৩:৪০)

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوْا اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا۝

“তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” (৩৩:২১)

وَمِنَ الَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِه نَافِلَةً لَّكَ عَسٰۤى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا ۝

“রাত্রির কিছু অংশ কুরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়তবা আপনার পালনকর্তা আপনাকে  (বিচার দিবসে) ‘মাকামে মাহমুদে’ (সর্বোচ্চ প্রশংশিত স্থানে) অধিষ্ঠিত করবেন।” (১৭:৭৯)

يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ الرَّسُوْلُ بِالْحَقِّ مِنْ رَّبِّكُمْ فَاٰمِنُوْا خَيْرًا لَّكُمْ وَاِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ لِلّٰهِ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ ط وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا۝

“হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রাসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে। আর যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই আল্লাহর। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ, প্রাজ্ঞ।” (৪:১৭০)

اِنَّآ اَرْسَلْنٰكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلَا تُسْـَٔلُ عَنْ اَصْحٰبِ الْجَحِيْمِ۝

“নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না।” (২:১১৯)

اِنَّآ اَرْسَلْنٰكَ شٰهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا۝ لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوْقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا۝

“আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। যাতে তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল–সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।” (৪৮:৮-৯)

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ ط وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ ط فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ ط وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِ ط فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ ط اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ۝

“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগী ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন! আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালবাসেন।” (৩:১৫৯)

لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِہٖ وَ یُزَكِیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِکْمَۃَ ۚ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ ۝

“আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।” (৩:১৬৪)

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ۝ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِىَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوْ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ۝

“তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ–কষ্ট তার জন্য দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি অতীব স্নেহশীল ও দয়ালু। এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।” (৯:১২৮ – ১২৯)

اِنَّآ اَعْطَيْنٰكَ الْكَوْثَرَ۝ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ۝ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ۝

“নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীইতো লেজকাটা, নির্বংশ।” (১০৮:১ – ৩)

 

নবী করীম (সা)-এর নবুওতি মিশন

كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيٰتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ۝

“আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রাসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমূহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।” (২:১৫১)

রসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত মার্জিত, রুচিশীল, যুক্তিপূর্ণ ও সাবলীল ভাষায় মানুষজনকে ধর্মোপদেশ দিতেন। দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের অন্তরে তাঁর হেদায়েতের বাণী সাড়া জাগাতো। কিন্তু মক্কার প্রভাবশালী সর্দারগণ তাঁর উপদেশ বাণীর প্রতি তেমন কোন আগ্রহ পোষণ করত না, বরং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত। আল্লাহর বাণী প্রচারে মক্কার কাফেরগণ যে শুধু বিরোধিতাই করত তা নয়, নবী করীম (সা) -কে ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ দ্বারা মানসকিভাবে নিগৃহীত করতো এবং তাঁর অনুসারীবৃন্দের ওপরও চালাতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অবিশ্বাসীরা যখন তাঁকে প্রত্যাখ্যান করত ও তাঁকে ও তাঁর সাথীগণের ওপর অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন চালাত তখন তিনি তাদের অজ্ঞতার্পূণ আচরণে খুবই ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন হতেন।

এহেন বিরূপ ও কঠিন পরিস্থিতিতে রহমতের নবী অসীম ধৈর্য্যের সাথে সব ধরনের নিপীড়ন সহ্য করে তাঁর প্রচার কাজ চালিয়ে যেতেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর প্রিয় নবী (সা) এর নিকট সান্ত্বনার বাণী নাযিল হলো: “আপনার পূর্বে (বহু) রাসূলকে ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ করা হয়েছিল। তারা যা নিয়ে ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ করেছিল, (পরণিামে) তা–ই বিদ্রূপকারীদরেকে পরিবেষ্টন করেছিল।” (১৫:১০)। মহান আল্লাহর সাহায্য ছিল তাঁর পাথেয়। তাই শত প্রতিকূলতা, নির্যাতন–নিপীড়ন সত্ত্বেও রহমতের কান্ডারী নবী (সা)–কে আল্লাহর দ্বীন প্রচারে মোটেও হতদ্যোম করতে পারেনি। মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে তিনি ছিলেন অকুতোভয়। প্রথমত তিনি নিজ জন্মভূমি মক্কায় ঘনিষ্ট স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে প্রকাশ্যে স্বদেশবাসীকে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে লাগলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে মক্কা থেকে হিজরতের পর মদীনায় ও তার আশেপাশে দ্বীনি–দাওয়াতের কার্যক্রম শুরু করেন। মক্কার কোরেশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধীর পর তাঁর এ দ্বীনি–দাওয়াত রোমক ও পারস্য সম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।

নবী করীম (সা) এর দ্বীন প্রচার সংক্রান্ত আয়াতগুলো নীচে উদ্ধৃত করা হলো:

قُلْ يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اِنِّىْ رَسُوْلُ اللهِ الَيْكُمْ جَمِيْعًا الَّذِىْ لَه مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْى وَيُمِيْتُ فَـَٔامِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِىِّ الْاُمِّىِّ الَّذِىْ يُؤْمِنْ بِاللهِ وَكَلِمٰتِه وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ۝

“(হে নবী) ঘোষণা করুন, হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তাঁর রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহ তায়ালার উপর, তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর – যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহ্ এবং তাঁর সকল বাণীর ওপর। তাঁর (নবীর) অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।” (৭:১৫৮)

فَـَٔامِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِىۤ اَنْزَلْنَا وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ۝

“অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের (কুরআনের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।” (৬৪:৮)

رَّسُوْلًا يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيٰتِ اللهِ مُبَيِّنٰتٍ لِّيْخْرِجَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصّٰلِحٰتِ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَى النُّوْرِ وَمَنْ يُّؤْمِنْۢ بِاللهِ وَيَعْمَلْ صٰلِحًا يُّدْخِلْهُ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا قَدْ اَحْسَنَ اللهُ لَه رِزْقًا۝

“একজন রাসূল, যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন, যাতে বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্ধকার থেকে আলোতে আনয়ন করেন। যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তথায় তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাকে উত্তম রিযিক দেবেন।” (৬৫:১১)

وَمَآ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيْرًا۝ قُلْ مَاۤ اَسْـَٔلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍ اِلَّا مَنْ شَآءَ اَنْ يَّتَّخِذَ اِلٰى رَبِّه سَبِيْلًا۝ وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَىِّ الَّذِىْ لَا يَمُوْتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِه وَكَفٰى بِه بِذُنُوْبِ عِبَادِه خَبِيْرًا۝

“আমি আপনাকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। বলুন, আমি তোমাদের কাছে এর কোন বিনিময় চাই না, কিন্তু যে ইচ্ছা করে, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক। আপনি সেই চিরঞ্জীবের উপর ভরসা করুন, যার মৃত্যু নেই এবং তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করুন। তিনি বান্দার গোনাহ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকেবহাল।” (২৫:৫৬ – ৫৮)

ذٰلِكَ الَّذِیْ یُبَشِّرُ اللّٰهُ عِبَادَهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ قُلْ لَّاۤ اَسْـَٔلُکُمْ عَلَیْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّۃَ فِی الْقُرْبٰی ؕ وَ مَنْ یَّقْتَرِفْ حَسَنَۃً نَّزِدْ لَہٗ فِیْهَا حُسْنًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ شَکُوْرٌ ۝

“এরই (জান্নাতের অনন্ত নেয়ামতের) সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কেবল আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ চাই। যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্যে তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, গুণগ্রাহী।” (৪২:২৩)

اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجٰدِلْهُمْ بِالَّتِىْ هِىَ اَحْسَنُ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَن سَبِيْلِه وَهُوَ اعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ۝

“আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন উত্তমরূপে জ্ঞানের কথা দিয়ে বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দসই পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।” (১৬:১২৫)

كَذٰلِكَ اَرْسَلْنٰكَ فِىۤ اُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهَاۤ اُمَمٌ لِّتَتْلُوْا عَلَيْهِمُ الَّذِىۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُوْنَ بِالرَّحْمٰنِ قُلْ هُوَ رَبِّى لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ مَتَابِ

“এমনিভাবে আমি আপনাকে একটি উম্মতের মধ্যে প্রেরণ করেছি। তাদের পূর্বে অনেক উম্মত অতিক্রান্ত হয়েছে। যাতে আপনি তাদেরকে ঐ নির্দেশ শুনিয়ে দেন, যা আমি আপনার কাছে প্রেরণ করেছি। তথাপি তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে। বলুন: তিনিই আমার পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কারও উপাসনা নাই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করেছি এবং তাঁর দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন।” (১৩:৩০)

الٓر كِتٰبٌ اَنْزَلْنٰهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرٰطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ۝

“আলিফ–লাম–রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি – যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন -পরাক্রান্ত, প্রশংসারযোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।” (১৪:০১)

قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا۠ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰىۤ اِلَىَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّه فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صٰلِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِه اَحَدًا۝

“বলুন: আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।” (১৮:১১০)

قُلْ اِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ۝ لَا شَرِيْكَ لَه وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ۝

“(হে নবী) আপনি বলুন: আমার নামায, আমার কুরবাণী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব–প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল (মুসলমান)।” (৬:১৬২ – ১৬৩)

قُلْ اِنَّمَا اَدْعُوْا رَبِّىْ وَلَاۤ اُشْرِكُ بِه اَحَدًا۝ قُلْ اِنِّى لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا رَشَدًا۝ قُلْ اِنِّىْ لَنْ يُجِيْرَنِىْ مِنَ اللهِ اَحَدٌ وَلَنْ اَجِدَ مِنْ دُوْنِه مُلْتَحَدًا۝ اِلَّا بَلٰغًا مِّنَ اللهِ وَرِسٰلٰتِه وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَاِنَّ لَه نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا۝

“(হে নবী) বলুন: আমি তো আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না। বলুন: আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই। বলুন: আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোন আশ্রয়স্থল পাব না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” (৭২:২০ – ২৩)

قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ مَا بَطَنَ وَ الْاِثْمَ وَ الْبَغْیَ بِغَیْرِ الْحَقِّ وَ اَنْ تُشْرِکُوْا بِاللّٰهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِہٖ سُلْطٰنًا وَّ اَنْ تَقُوْلُوْا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ۝

“আপনি বলে দিন: আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়–অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।” (৭:৩৩)

وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِه فُؤَادَكَ وَجَآءَكَ فِىْ هٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ۝ وَقُل لِّلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ اعْمَلُوْا عَلٰى مَكَانَتِكُمْ اِنَّا عٰمِلُوْنَ۝ وَانْتَظِرُوْٓا اِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ۝

“(হে নবী,) আর আমি পূর্বের রাসূলগণের সব বৃত্তান্তই আপনাকে বলছি যদ্দ্বারা আপনার অন্তরকে দৃঢ়তা দান করব। আর এভাবে আপনার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসীহত (উপদেশ) ও স্মরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে। আর যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে বলে দিন যে, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় কাজ করে যাও আমরাও কাজ করে যাই। এবং তোমরাও অপেক্ষা করে থাক, আমরাও অপেক্ষায় রইলাম।” (১১:১২০ – ১২২)

طٰسٓمّٓ ۝ تِلْكَ اٰیٰتُ الْكِتٰبِ الْمُبِیْنِ ۝ لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ اَلَّا یَکُوْنُوْا مُؤْمِنِیْنَ ۝ اِنْ نَّشَاْ نُنَزِّلْ عَلَیْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ اٰیَۃً فَظَلَّتْ اَعْنَاقُهُمْ لَهَا خٰضِعِیْنَ ۝ وَ مَا یَاْتِیْهِمْ مِّنْ ذِکْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِیْنَ ۝ فَقَدْ كَذَّبُوْا فَسَیَاْتِیْهِمْ اَنْۢبٰٓؤُا مَا كَانُوْا بِہٖ یَسْتَہْزِءُوْنَ ۝ اَوَ لَمْ یَرَوْا اِلَی الْاَرْضِ كَمْ اَنْۢبَتْنَا فِیْهَا مِنْ کُلِّ زَوْجٍ كَرِیْمٍ ۝ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیَۃً ؕوَ مَا كَانَ اَکْثَرُ هُمْ مُّؤْمِنِیْنَ ۝ وَ اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِیْزُ الرَّحِیْمُ ۝

“ত্বা, সীন, মীম। এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। তারা বিশ্বাস করে না বলে আপনি হয়তো মর্মব্যথায় আত্মঘাতী হবেন। আমি যদি ইচ্ছা করি, তবে আকাশ থেকে তাদের কাছে কোন নিদর্শন নাযিল করতে পারি। অতঃপর তারা এর সামনে নত হয়ে যাবে। যখনই তাদের কাছে রহমান এর কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অতএব তারা তো মিথ্যারোপ করেছেই; সুতরাং যে বিষয় নিয়ে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত, তার যথার্থ স্বরূপ শীঘ্রই তাদের কাছে পৌঁছবে। তারা কি ভূপৃষ্ঠের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না? আমি তাতে সর্বপ্রকার বিশেষ-বস্তু কত উদ্গত করেছি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়। আপনার পালনকর্তাতো পরাক্রমশালী পরম দয়ালু।” (২৬:১ – ৯)

فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًا فِطْرَتَ اللهِ الَّتِىْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ۝ مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوْا الصَّلَوٰةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ۝ مِنَ الذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيْعًا كُلُّ حِزْبٍۭ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ۝

“আপনি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।” (৩০:৩০ – ৩২)

قُلْ اِنَّمَآ اَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ اَنْ تَقُوْمُوْا للهِ مَثْنٰى وَفُرٰدٰى ثُمَّ تَتَفَكَّرُوْا مَا بِصَاحِبِكُمْ مِّنْ جِنَّةٍ اِنْ هُوَ الَّا نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ۝ قُلْ مَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍ فَهُوْ لَكُمْ اِنْ اَجْرِىَ اِلَّا عَلَى اللهِ وَهُوْ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ شَهِيْدٌ۝ قُلْ اِنَّ رَبِّى يَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلّٰمُ الْغُيُوْبِ۝ قُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبٰطِلُ وَمَا يُعِيْدُ۝ قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ فَاِنَّمَاۤ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِىْ وَاِنِ اهْتَدَيْتُ فَبِمَا يُوْحِىۤ اِلَىَّ رَبِّىۤ اِنَّه سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ۝

“(হে নবী) বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি: তোমরা আল্লাহর নামে এক একজন করে ও দু’ দু’ জন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা–ভাবনা কর-তোমাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই। তিনি তো আসন্ন কাঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেন মাত্র। বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না বরং তা তোমরাই রাখ। আমার পুরস্কার তো আল্লাহর কাছে রয়েছে। প্রত্যেক বস্তুই তাঁর সামনে। বলুন, আমার পালনকর্তা সত্য দ্বীন অবতরণ করেছেন। তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। বলুন, সত্য আগমন করেছে এবং অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃজন করতে এবং না পারে পুনঃ প্রত্যাবর্তিত হতে। বলুন, আমি পথভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতির জন্যেই পথভ্রষ্ট হব; আর যদি আমি সৎপথ প্রাপ্ত হই, তবে তা এ জন্যে যে, আমার পালনকর্তা আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী।” (৩৪:৪৬ – ৫০)

قُلْ لَاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِىْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِىَ السُّوْٓءُ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ وَبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ۝

“(হে নবী) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি অদৃশ্যের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।” (৭:১৮৮)

يٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيْرًا مِّمَّا كُنْتُمْ تُخْفُوْنَ مِنَ الْكِتٰبِ وَيَعْفُوْا عَن كَثِيْرٍ قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَكِتٰبٌ مُّبِيْنٌ۝ يَهْدِىْ بِه اللهُ مَنْ اتَّبَعَ رِضْوٰنَه سُبُلَ السَّلٰمِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِه وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرٰطٍ مُّسْتَقِيْمٍ۝

“হে আহলে–কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ। এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন।” (৫:১৫ – ১৬)

وَاِذْ قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يٰبَنِىۤ اِسْرٰٓءِيْلَ اِنِّىْ رَسُوْلُ اللهِ الَيْكُمْ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ التَّوْرٰىةِ وَمُبَشِّرًۢا بِرَسُوْلٍ يَاْتِىْ مِنْۢ بَعْدِى اسْمُه اَحْمَدُ ط فَلَمَّا جَآءَهُمْ بِالْبَيِّنٰتِ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ۝

“স্মরণ করুন, যখন মরিয়ম–তনয় ঈসা (আ) বলল: হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ। অতঃপর যখন তিনি স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করলেন, তখন তারা বলল: এ তো এক প্রকাশ্য জাদু।” (৬১:৬)

لٰكِنِ اللّٰهُ یَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَیْكَ اَنْزَلَہٗ بِعِلْمِہٖ ۚ وَ الْمَلٰٓئِكَۃُ یَشْهَدُوْنَ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیْدًا۝

“আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।” (৪:১৬৬)

وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ اٰيَةٌ مِّنْ رَّبِه ط اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُنْذِرٌ وَّلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ۝

“কাফেররা বলে : তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? আপনার কাজ তো ভয় প্রদর্শন করাই এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে।” (১৩:৭)

هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِہٖ وَ یُزَكِیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِکْمَۃَ ٭ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ ۝ وَّ اٰخَرِیْنَ مِنْهُمْ لَمَّا یَلْحَقُوْا بِهِمْ ؕ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ ۝

“তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। এই রাসূল প্রেরিত হয়েছেন অন্য আরও লোকদের জন্যে, যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৬২:২ – ৩)

وَمَاۤ اَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِيْنَ۝ وَمَا تَسْـَٔلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍ اِنْ هُوَ الَّا ذِكْرٌ لِّلْعٰلَمِيْنَ۝

“আপনি যতই চান (মানুষ হেদায়েতপ্রাপ্ত হোক), অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়। আপনি এর (উপদেশপূর্ণ কুরআন) জন্যে তাদের কাছে কোন বিনিময় চান না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।” (১২:১০৩ – ১০৪)

قُلْ هٰذِه سَبِيْلِىۤ اَدْعُوْۤا اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَا۠ وَمَنْ اتَّبَعَنِى وَسُبْحٰنَ اللهِ وَمَاۤ اَنَا۠ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

“বলে দিন: এই আমার পথ। আমি দাওয়াত দেই আল্লাহর দিকে সজ্ঞানে বুঝেসুঝে – আমি এবং আমার অনুসারীগণও। আল্লাহ্ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (১২:১০৮)

وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصّٰلِحٰتِ وَاٰمَنُوْا بِمَا نُزِّلَ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّهُوَ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّهِمْ لا كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ وَاَصْلَحَ بَالَهُمْ۝

“আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।” (৪৭:২)

اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِیْنًا ۝ لِّیَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَ مَا تَاَخَّرَ وَ یُتِمَّ نِعْمَتَہٗ عَلَیْكَ وَ یَہْدِیَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِیْمًا ۝ وَّ یَنْصُرَكَ اللّٰهُ نَصْرًا عَزِیْزًا۝

“নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট। যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ভুলসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। এবং আপনাকে দান করেন বলিষ্ঠ সাহায্য।” (৪৮:১ – ৩)

قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَکُمْ عِنْدِیْ خَزَآئِنُ اللّٰهِ وَ لَاۤ اَعْلَمُ الْغَیْبَ وَ لَاۤ اَقُوْلُ لَکُمْ اِنِّیْ مَلَکٌ ۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوْحٰۤی اِلَیَّ ؕ قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الْاَعْمٰی وَ الْبَصِیْرُ ؕ اَفَلَا تَتَفَكَرُوْنَ۝

“আপনি বলুন: আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিন: অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না।” (৬:৫০)

 فَاِنْ یَّکْفُرْ بِهَا هٰۤؤُلَآءِ فَقَدْ وَكَلْنَا بِهَا قَوْمًا لَّیْسُوْا بِهَا بِکٰفِرِیْنَ ۝ اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ هَدَی اللّٰهُ فَبِهُدٰىهُمُ اقْتَدِہْ ؕ قُلْ لَّاۤ اَسْـَٔلُکُمْ عَلَیْهِ اَجْرًا ؕ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِکْرٰی لِلْعٰلَمِیْنَ ۝

“…..অতএব, যদি এরা (পূর্ববর্তী নবীগণের উত্তরসূরী) আপনার নবুওত অস্বীকার করে, তবে এর জন্যে এমন সম্প্রদায় নির্দিষ্ট করেছি, যারা এতে অবিশ্বাসী হবে না। এরা এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিন: আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটি সারা বিশ্বের জন্যে একটি উপদেশমাত্র।” (৬:৮৯ – ৯০)

اِنْ اَنْتَ اِلَّا نَذِيْرٌ۝ اِنَّاۤ اَرْسَلْنٰكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَنَذِيْرًا وَّاِنْ مِّنْ اُمَّةٍ اِلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ۝

“আপনি তো কেবল একজন সতর্ককারী। আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি।” (৩৫:২৩ – ২৪)

يٰۤاَيُّهَا النَّبِىُّ اِذَا جَآءَكَ الْمُؤْمِنٰتُ يُبَايِعْنَكَ عَلٰى اَنْ لَّا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْـًٔا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِيْنَ وَلَا يَقْتُلْنَ اَوْلٰدَهُنَّ وَلَا يَاْتِيْنَ بِبُهْتٰنٍ يَّفْتَرِيْنَه بَيْنَ اَيْدِيْهِنَّ وَاَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِيْنَكَ فِى مَعْرُوْفٍ لا فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللهَ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ۝

“হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।” (৬০:১২)

وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ اَفَائِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ اِنْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقٰبِكُمْ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْـًٔا وَّسَيَجْزِى اللهُ الشّٰكِرِيْنَ۝

“আর মুহাম্মদ একজন রাসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুত কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি–বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।” (৩:১৪৪)

اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِىْ حَرَّمَهَا وَلَه كُلُّ شَىْءٍ وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ۝ وَاَنْ اَتْلُوَا الْقُرْاٰنَ فَمَنِ اهْتَدٰى فَاِنَّمَا يَهْتَدِىْ لِنَفْسِه وَمَنْ ضَلَّ فَقُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا۠ مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ۝

“(হে নবী বলুন,) আমি তো কেবল এই (মক্কা) নগরীর প্রভুর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে সম্মানিত করেছেন। এবং সব কিছু তাঁরই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আজ্ঞাবহদের একজন হই। এবং যেন আমি কুরআন পাঠ করে শোনাই। অতএব যে ব্যক্তি সৎপথে চলে, সে নিজের কল্যাণার্থেই সৎপথে চলে এবং কেউ পথভ্রষ্ট হলে আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।” (২৭:৯১ – ৯২)

اَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ۝ وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ۝ الَّذِىْۤ اَنْقَضَ ظَهْرَكَ۝ وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ۝ فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا۝ اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا۝ فَاِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ۝ وَاِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ۝

“আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি? আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা, যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ। আমি আপনার স্মরণকে করেছি সমুচ্চ। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন। এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন।” (৯৪:১-৮)

وَالضُّحٰى۝ وَالَّيْلِ اِذَا سَجٰى۝ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى۝ وَلَلْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْاُوْلٰى۝ وَلَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضٰۤى۝ اَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيْمًا فَاٰوٰى۝ وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدٰى۝ وَوَجَدَكَ عَآئِلًا فَاَغْنٰى۝ فَاَمَّا الْيَتِيْمَ فَلَا تَقْهَرْ۝ وَاَمَّا السَّآئِلَ فَلَا تَنْهَرْ۝ وَاَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ۝

“শপথ মধ্যাহ্নের, শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়, আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়। আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন। তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না; সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না। এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।” (৯৩:১ – ১১)

وَالنَّجْمِ اِذَا هَوٰى ۝ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوٰى ۝ وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰىٓ ۝ اِنْ هُوَ الَّا وَحْىٌ يُوْحٰى ۝ عَلَّمَه شَدِيْدُ الْقُوٰى ۝ ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى ۝ وَهُوَ بِالْاُفُقِ الْاَعْلٰى ۝ ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰى۝ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ اَوْ اَدْنٰى ۝ فَاَوْحٰۤى اِلٰى عَبْدِه مَاۤ اَوْحٰى ۝

“নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়। তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কুরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা, সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল। ঊর্ধ্ব দিগন্তে, অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুঁকে গেল। তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।” (৫৩:১ – ১০)

قُلْ اَىُّ شَىْءٍاَكْبَرُ شَهٰدَةً قُلِ اللهُ شَهِيْدٌۢ بَيْنِىْ وَبَيْنَكُمْ وَاُوْحِىَ اِلَىَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِهوَمَنْ ۢ بَلَغَ اَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُوْنَ اَنَّ مَعَ اللهِ اٰلِهَةً اُخْرٰى قُلْ لَّاۤ اَشْهَدُ ج قُلْ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَاِنَّنِىْ بَرىْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ۝

“(হে নবী) আপনি জিজ্ঞেস করুন: সর্ববৃহৎ সাক্ষ্যদাতা কে? বলে দিন: আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আমার প্রতি এ কুরআন অবর্তীর্ণ হয়েছে – যাতে আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এ কুরআন পৌঁছে সবাইকে ভীতি প্রদর্শন করি। তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্যান্য উপাস্যও রয়েছে? আপনি বলে দিন: আমি এরূপ সাক্ষ্য দেব না। বলে দিন: তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই তোমাদের শিরক থেকে মুক্ত।” (৬:১৯)

فَلِذٰلِكَ فَادْعُ ۚ وَ اسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَ ۚ وَ لَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ ۚ وَ قُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ مِنْ كِتٰبٍ ۚ وَ اُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَیْنَکُمْ ؕ اَللّٰهُ رَبُّنَا وَ رَبُّکُمْ ؕ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَ لَکُمْ اَعْمَالُکُمْ ؕ لَا حُجَّۃَ بَیْنَنَا وَ بَیْنَکُمْ ؕ اَللّٰهُ یَجْمَعُ بَیْنَنَا ۚ وَ اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ۝

“সুতরাং আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিন এবং হুকুম অনুযায়ী অবিচল থাকুন; আপনি তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করবেন না। বলুন, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা। আমাদের জন্যে আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম। আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সমবেত করবেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তণ হবে।” (৪২:১৫)

قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ اَلَّاتُشْرِكُوْا بِه شَيْـًٔا وَبِالْوٰلِدَيْنِ اِحْسٰنًا وَلَا تَقْتُلُوْٓا اَوْلٰدَكُم مِّنْ اِمْلٰقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَاِيْاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوْا الْفَوٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَ لَا تَقْتُلُوْا النَّفْسَ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ الَّا بِالْحَقِّ ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ۝ وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ اِلَّابِالَّتِى هِىَ اَحْسَنُ حَتّٰى يَبْلُغَ اَشُدَّه وَاَوْفُوْا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى وَبِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْا ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُم بِه لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ۝ وَاَنَّ هٰذَا صِرٰطِى مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُ وَلَا تَتَّبِعُوْا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيْلِه ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُم بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ۝

“আপনি বলুন: এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শোনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা–মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্র্যের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ। এতীমদের ধনসম্পদের কাছেও যেয়ো না; কিন্তু উত্তম পন্থায় যে পর্যন্ত সে বয়ঃপ্রাপ্ত না হয়। ওজন ও মাপ পূর্ণ কর ন্যায় সহকারে। আমি কাউকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেই না। যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্মীয়ও হয়। আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও।” (৬:১৫১ – ১৫৩)

وَ مَا لَکُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ ۚ وَ الرَّسُوْلُ یَدْعُوْکُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّکُمْ وَ قَدْ اَخَذَ مِیْثَاقَکُمْ اِنْ کُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ ۝ هُوَ الَّذِیْ یُنَزِّلُ عَلٰی عَبْدِہٖۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لِّیُخْرِجَکُمْ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوْرِ ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ بِکُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ۝

“তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছ না, অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত দিচ্ছেন? আল্লাহ তো পূর্বেই তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছেন- যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। তিনিই তাঁর দাসের প্রতি প্রকাশ্য আয়াত অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকে আনয়ন করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।” (৫৭:৮  –  ৯)

 

হযরত মুহাম্মদ (সা)- এর প্রতি আল্লাহ্ তায়ালার উপদেশ বাণী

নবী করীম (সা) তাঁর নবুওতি জীবনের বিভিন্ন সময়ে নবুওতি দায়িত্ব পালনের জন্য মহান আল্লাহর তরফ থেকে যেসব দিক–নির্দেশনা সম্বলিত উপদেশাবলী পেয়েছিলেন সে সংক্রান্ত আয়াতসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

اَفَمَنْ زُیِّنَ لَہٗ سُوْٓءُ عَمَلِہٖ فَرَاٰهُ حَسَنًا ؕ فَاِنَّ اللّٰهَ یُضِلُّ مَنْ یَّشَآءُ وَ یَہْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ ۫ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَیْهِمْ حَسَرٰتٍ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیْمٌۢ بِمَا یَصْنَعُوْنَ ۝

“যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে।” (৩৫:৮)

وَاَنْذِرْ بِهِ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ اَنْ يُّحْشَرُوْٓا اِلٰى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِّن دُوْنِه وَلِىٌّ وَّلَا شَفِيْعٌ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ۝ وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَوٰةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَىْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّن شَىْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ۝

“(হে নবী) আপনি এ কুরআন দ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করুন, যারা আশঙ্কা করে স্বীয় পালনকর্তার কাছে এমতাবস্থায় একত্রিত হওয়ার যে, তাদের কোন সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী হবে না -যাতে তারা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালনকর্তার ইবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাব বিন্দুমাত্রও তাদের দায়িত্বে নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন। নতুবা আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” (৬:৫১ – ৫২)

وَ اتْلُ مَاۤ اُوْحِیَ اِلَیْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ ۚؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِہٖ ۚ۟ وَ لَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِہٖ مُلْتَحَدًا۝ وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوۃِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَہٗ وَ لَا تَعْدُ عَیْنٰكَ عَنْهُمْ ۚ تُرِیْدُ زِیْنَۃَ الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا ۚ وَ لَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَہٗ عَنْ ذِکْرِنَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ وَ كَانَ اَمْرُہٗ فُرُطًا ۝ وَ قُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّکُمْ ۟ فَمَنْ شَآءَ فَلْیُؤْمِنْ وَّ مَنْ شَآءَ فَلْیَکْفُرْ

“আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবেন না। আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। বলুন: সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক….।” (১৮:২৭ – ২৯)

يٰۤاَيُّهَا النَّبِىُّ اتَّقِ اللهَ وَلَا تُطِعِ الْكٰفِرِيْنَ وَالْمُنٰفِقِيْنَ ط اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا۝ وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ اِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا۝

“হে নবী! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফের ও কপট বিশ্বাসীদের কথা মানবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার অনুসরণ করুন। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।” (৩৩:১ – ২)

وَاِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكَ اِعْرَاضُهُمْ فَاِنِ اسْتَطَعْتَ اَنْ تَبْتَغِىَ نَفَقًا فِى الْاَرْضِ اَوْسُلَّمًا فِى السَّمَآءِ فَتَاْتِيْهُم بِـَٔايَةٍ وَّلَوْشَآ اٰللهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدٰى فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْجٰهِلِيْنَ۝

আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন, অতঃপর তাদের কাছে কোন একটি মোজেযা আনতে পারেন, তবে নিয়ে আসুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবাইকে সরল পথে সমবেত করতে পারতেন। অতএব, আপনি নির্বোধদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (৬:৩৫)

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِه اَزْوٰجًا مِّنْهُمْ وَّلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ۝

“আপনি চক্ষু তুলে ঐ বস্তুর প্রতি দেখবেন না, যা আমি তাদের মধ্যে কয়েক প্রকার লোককে ভোগ করার জন্যে দিয়েছি, তাদের জন্যে চিন্তিত হবেন না আর ঈমানদারদের জন্যে স্বীয় বাহু নত করুন।” (১৫:৮৮)

فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَاِمَّا نُرِيْنَّكَ بَعْضَ الَّذِىْ نَعِدُهُمْ اَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ۝ وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَّنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّنْ لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ ۗ وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّاْتِىَ بِـَٔايَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ فَاِذَا جَآءَ اَمْرُ اللهِ قُضِىَ بِالْحَقِّ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْمُبْطِلُوْنَ۝

“অতএব আপনি সবর করুন। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে যে শাস্তির ওয়াদা দেই, তার কিয়দংশ যদি আপনাকে দেখিয়ে দেই অথবা আপনার প্রাণ হরণ করে নেই, সর্বাবস্থায় তারা তো আমারই কাছে ফিরে আসবে। আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন নিয়ে আসা কোন রাসূলের কাজ নয়। যখন আল্লাহর আদেশ আসবে, তখন ন্যায় সঙ্গত ফয়সালা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (৪০:৭৭ – ৭৮)

يٰۤاَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ۝ قُمِ الَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا۝ نِّصْفَه اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا۝ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا۝ اِنَّا سَنُلْقِىْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا۝ اِنَّ نَاشِئَةَ الَّيْلِ هِىَ اَشَدُّ وَطْـًٔا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا۝ اِنَّ لَكَ فِى النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيْلًا۝ وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ اِلَيْهِ تَبْتِيْلًا۝ رَّبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيْلًا۝

“হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কুরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হোন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তাঁকেই গ্রহণ করুন কর্মবিধায়করূপে।” (৭৩:১ – ৯)

يٰۤاَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ۝ قُمْ فَاَنْذِرْ۝ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ۝ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ۝ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ۝ وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ۝ وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ۝

“হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেন না। এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন।” (৭৪:১ – ৭)

وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطٰنِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ اِنَّه هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ۝

“যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (৪১:৩৬)

خُذِ الْعَفْوَ وَاْمُرْ بِالْعُرْفِ وَاَعْرِضْ عَنِ الْجٰهِلِیْنَ۝

“আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাকুন।” (৭:১৯৯)

وَ لَا تَقُوْلَنَّ لِشَایْءٍ  اِنِّیْ  فَاعِلٌ ذٰلِكَ غَدًا ۝ اِلَّاۤ اَنْ یَّشَآءَ اللّٰهُ ۫ وَ اذْکُرْ رَّبَّكَ اِذَا نَسِیْتَ وَ قُلْ عَسٰۤی اَنْ یَّہْدِیَنِ رَبِّیْ لِاَقْرَبَ مِنْ هٰذَا  رَشَدًا ۝

“আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব  -‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।” (১৮:২৩ – ২৪)

 

“খতমে-নবুওত”: নবুওতি মিশনের পরিসমাপ্তি

ইসলামী পরিভাষায় ‘“খতমে নবুওত” হলো নবুওত ও রিসালতের ধারার চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি। হযরত মুহাম্মদ (সা) ছিলেন আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর আগমণের সাথে সাথে নবুওত ও রিসালতের ধারা সমাপ্ত হয়। কারণ আল্লাহ্ স্বয়ং তাঁকে ‘খাতামান্নাবেয়ীন’ বলে অভিহিত করেছেন। রোজ ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী বা রসূল আসবেন না। তাই হযরত মুহাম্মদ (সা) কোন একক সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হননি, বরং তিনি প্রেরিত হয়েছেন “সমগ্র মানব জাতির জন্য।” (৭:১৫৮)। তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুওতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তেইশ বছর তিনি নবুওত ও রিসালতের এ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ওফাতের পর একই সাথে নবুওত ও রিসালতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটে। একইভাবে পূর্ণাঙ্গ কুরআন নাযিলের পর এবং তাঁর ওফাতের পর ওহী নাযিলের প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। মক্কা বিজয়ের পর ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে মনোনীত করার ঘোষণা ও সুরা নছর অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে নিহিত ছিল নবী করীমের (সা) নবুওতি মিশনের পরিসমাপ্তির বার্তা। তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণেও এ বার্তাটি উল্লেখিত হয়েছিল।

নিম্নে এতদসংক্রান্ত আয়াতগুলো উদ্ধৃত হলো:

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِن رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّنَ ط وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيْمًا۝

“মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।” (৩৩:৪০)

الْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِىْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلٰمَ دِيْنًا۝

“……..আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম…।” (৫:৩)

اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ۝ وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِىْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا۝ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّه كَانَ تَوَّابًا۝

“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।” (১১০:১ – ৩)

 

আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদ (সা)-এর প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা

প্রকৃত মু’মিনের জন্য আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা) এর প্রতি সর্বাধিক আনুগত্য ও ভালবাসা পোষণ করা অপরিহার্য। মু’মিনের অন্তর থাকবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রেমে ভরপুর। পার্থিব ধন–সম্পদ, সন্তান–সন্ততি এমনকি নিজের প্রাণের চেয়েও অধিক ভালোবাসা তাঁর প্রতি না থাকলে কেহই প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেহই প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ সে তার পিতা, পুত্র এবং সকল মানুষের চেয়ে আমাকে বেশী ভালোবাসবে (বোখারী ও মুসলিম)।’ পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে নবী করীম (সা)–কে অবশ্যই নিজের জান, মাল, এবং সন্তানাদির চেয়েও বেশী ভালবাসতে হবে এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য পোষণ করতে হবে – এটাই আল্লাহর নির্দেশ।

এতদসংক্রান্ত আয়াতগুলো নিম্নে পেশ করা হলো:

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِىْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ۝

“(হে নবী) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (৩:৩১)

قُلْ اَطِيْعُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاِن تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكٰفِرِيْنَ۝

“বলুন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।” (৩:৩২)

مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللّٰهَ ۚ وَ مَنْ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَیْهِمْ حَفِیْظًا ۝

“যে লোক রাসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।” (৪:৮০) ।”

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوْا اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا۝

“রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” (৩৩:২১)

وَ اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ لَعَلَّکُمْ تُرْحَمُوْنَ ۝ وَ سَارِعُوْۤا اِلٰی مَغْفِرَۃٍ مِّنْ رَّبِّکُمْ وَ جَنَّۃٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ ۙ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ ۝

“আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।” (৩:১৩২ – ১৩৩)

مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَمَنْ تَوَلّٰى فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًا۝

“যে লোক রাসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।” (৪:৮০)

قُلْ اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ ۚ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَیْهِ مَا حُمِّلَ وَ عَلَیْکُمْ مَّا حُمِّلْتُمْ ؕ وَ اِنْ تُطِیْعُوْهُ تَہْتَدُوْا ؕ وَ مَا عَلَی الرَّسُوْلِ اِلَّا الْبَلٰغُ الْمُبِیْنُ ۝

“বলুন: আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌঁছে দেয়া।” (২৪:৫৪)

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّکُمْ تُرْحَمُوْنَ ۝

“নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।” (২৪:৫৬)

اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِیْنَ اِذَا دُعُوْۤا اِلَی اللّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ لِیَحْکُمَ بَیْنَهُمْ اَنْ یَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ۝ وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ وَ یَخْشَ اللّٰهَ وَ یَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ ۝ وَ اَقْسَمُوْا بِاللّٰهِ جَہْدَ اَیْمَانِهِمْ لَئِنْ اَمَرْتَهُمْ لَیَخْرُجُنَّ ؕ قُلْ لَّا تُقْسِمُوْا ۚ طَاعَۃٌ مَّعْرُوْفَۃٌ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ۝

“মু’মিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহ্বান  করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য। তারা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর কসম খেয়ে বলে যে, আপনি তাদেরকে আদেশ করলে তারা সবকিছু ছেড়ে বের হবেই। বলুন: তোমরা কসম খেয়ো না। নিয়মানুযায়ী তোমাদের আনুগত্য, তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে জ্ঞাত।” (২৪:৫১ – ৫৩)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ وَ اُولِی الْاَمْرِ مِنْکُمْ ۚ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِیْ شَیْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوْلِ اِنْ کُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ ذٰلِكَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا ۝

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর – যদি তোমরা আল্লাহ ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (৪:৫৯)

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَىِ اللهِ وَرَسُوْلِه وَاتَّقُوْا اللهَ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ۝

“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছু শুনেন ও জানেন।” (৪৯:১)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْـَٔلُوْا عَنْ اَشْیَآءَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ ۚ وَ اِنْ تَسْـَٔلُوْا عَنْهَا حِیْنَ یُنَزَّلُ الْقُرْاٰنُ تُبْدَ لَکُمْ ؕ عَفَا اللّٰهُ عَنْهَا ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ حَلِیْمٌ ۝ قَدْ سَاَلَهَا قَوْمٌ مِنْ قَبْلِكُمْ ثُمَّ اَصْبَحُوْا بِهَا كٰفِرِيْنَ۝

“হে মু’মিনগণ, (নবী সা-এর নিকট) এমন কথাবার্তা জিজ্ঞেস করো না, যা তোমাদের কাছে পরিব্যক্ত হলে তোমাদের খারাপ লাগবে। যদি কুরআন অবতরণকালে তোমরা এসব বিষয় জিজ্ঞেস কর, তবে তা তোমাদের জন্যে প্রকাশ করা হবে। অতীত বিষয় আল্লাহ ক্ষমা করেছেন আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল। এরূপ কথাবার্তা তোমাদের পূর্বে এক সম্প্রদায় জিজ্ঞেস করেছিল। এরপর তারা এসব বিষয়ে অবিশ্বাসী হয়ে গেল।” (৫:১০১ – ১০২)

اَلَّذِیْنَ یَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِیَّ الْاُمِّیَّ الَّذِیْ یَجِدُوْنَہٗ مَکْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِی التَّوْرٰىۃِ وَالْاِنْجِیْلِ ۫ یَاْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهٰهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیْهِمُ الْخَبٰٓئِثَ وَ یَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَ الْاَغْلٰلَ الَّتِیْ كَانَتْ عَلَیْهِمْ ؕ فَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِہٖ وَ عَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَ اتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ مَعَہٗۤ ۙ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ۝

“সেসব লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রাসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দিত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।” (৭:১৫৭)

وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذْنِ اللّٰهِ ؕ وَ لَوْ اَنَّهُمْ اِذْ ظَّلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ جَآءُوْكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللّٰهَ وَ اسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوا اللّٰهَ تَوَّابًا رَّحِیْمًا ۝ فَلَا وَ رَبِّكَ لَا یُؤْمِنُوْنَ حَتّٰی یُحَكِمُوْكَ فِیْمَا شَجَرَ بَیْنَهُمْ ثُمَّ لَا یَجِدُوْا فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیْتَ وَ یُسَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا ۝

“বস্তুত আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত। অতএব, আপনার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।” (৪:৬৪ – ৬৫)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اسْتَجِیْبُوْا لِلّٰهِ وَ لِلرَّسُوْلِ اِذَا دَعَاکُمْ لِمَا یُحْیِیْکُمْ ۚ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ یَحُوْلُ بَیْنَ الْمَرْءِ وَ قَلْبِہٖ وَ اَنَّہٗۤ اِلَیْهِ تُحْشَرُوْنَ ۝ وَ اتَّقُوْا فِتْنَۃً لَّا تُصِیْبَنَّ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْا مِنْکُمْ خَآصَّۃً ۚ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ ۝ وَ اذْکُرُوْۤا اِذْ اَنْتُمْ قَلِیْلٌ مُّسْتَضْعَفُوْنَ فِی الْاَرْضِ تَخَافُوْنَ اَنْ یَّتَخَطَّفَکُمُ النَّاسُ فَاٰوٰىکُمْ وَ اَیَّدَکُمْ بِنَصْرِہٖ وَ رَزَقَکُمْ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ لَعَلَّکُمْ تَشْکُرُوْنَ ۝

“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুত তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে। আর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপর পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালেম এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর। আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে অল্প, পরাজিত অবস্থায় পড়েছিলে দেশে; ভীত–সস্ত্রস্ত্র ছিলে যে, তোমাদের না অন্যেরা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি তোমাদিগকে আশ্রয়ের ঠিকানা দিয়েছেন, স্বীয় সাহায্যের দ্বারা তোমাদিগকে শক্তি দান করেছেন এবং পরিচ্ছন্ন জীবিকা দিয়েছেন যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।” (৮:২৪ – ২৬)

لٰكِنِ الرّٰسِخُوْنَ فِی الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ وَ مَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوۃَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّکٰوۃَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓئِكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۝

“কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে। আর যারা নামাযে অনুবর্তিতা পালনকারী, যারা যাকাত দানকারী এবং যারা আল্লাহ ও ক্বিয়ামতে আস্থাশীল। বস্তুত এমন লোকদেরকে আমি দান করবো মহাপূণ্য।” (৪:১৬২)

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَه يُدْخِلْهُ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ۝ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَه يُدْخِلْهُ نَارًا خٰلِدًا فِيْهَا وَلَه عَذَابٌ مُّهِيْنٌ۝

“……. যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য। যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।” (৪:১৩ – ১৪)

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُوْلٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصّٰلِحِيْنَ وَحَسُنَ اُوْلٰٓئِكَ رَفِيْقًا۝ ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ وَكَفٰى بِاللهِ عَلِيْمًا۝

“আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। এটা হল আল্লাহ-প্রদত্ত মহত্ত্ব। আর আল্লাহ যথেষ্ট পরিজ্ঞাত।” (৪:৬৯-৭০)

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا۝ يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمٰلَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ط وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا۝

“হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল–আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” (৩৩:৭০ – ৭১)

اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللّٰهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا ثَانِیَ اثْنَیْنِ اِذْ هُمَا فِی الْغَارِ اِذْ یَقُوْلُ لِصَاحِبِہٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا ۚ فَاَنْزَلَ اللّٰهُ سَكِیْنَتَہٗ عَلَیْهِ وَ اَیَّدَہٗ بِجُنُوْدٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَۃَ الَّذِیْنَ كَفَرُوا السُّفْلٰی ؕ وَ كَلِمَۃُ اللّٰهِ هِیَ الْعُلْیَا ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ ۝

“যদি তোমরা তাকে (রাসূলকে) সাহায্য না কর, তবে মনে রেখো, আল্লাহ তার সাহায্য করেছিলেন, যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় সান্ত¡না নাযিল করলেন এবং তাঁর সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। বস্তুত আল্লাহ কাফেরদের কথাকে নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথাই সদা সমুন্নত এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৯:৪০)

وَ اَنْذِرْ عَشِیْرَتَكَ الْاَقْرَبِیْنَ ۝ وَ اخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ ۝ فَاِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ اِنِّیْ بَرِیْٓءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ ۝ وَ تَوَكَلْ عَلَی الْعَزِیْزِ الرَّحِیْمِ ۝ الَّذِیْ یَرٰىكَ حِیْنَ تَقُوْمُ ۝ وَ تَقَلُّبَكَ فِی السّٰجِدِیْنَ ۝ اِنَّہٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ ۝

“আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন। এবং আপনার অনুসারী মু’মিনদের প্রতি সদয় হোন। যদি তারা আপনার অবাধ্যতা করে, তবে বলে দিন, তোমরা যা কর, তা থেকে আমি মুক্ত। আপনি ভরসা করুন পরাক্রমশালী, পরম দয়ালুর উপর, যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি নামাযে দন্ডায়মান হন, এবং নামাযীদের সাথে উঠাবসা করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।” (২৬:২১৪ – ২২০)

يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ وَاللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَن يُرْضُوهُ إِن كَانُوا مُؤْمِنِينَ۝أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّهُ مَن يُحَادِدِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ۝

“তোমাদের সামনে আল্লাহর কসম খায় যাতে তোমাদের রাযী করতে পারে। অবশ্য তারা যদি ঈমানদার হয়ে থাকে, তবে আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে রাযী করা অত্যন্ত জরুরী। তারা কি একথা জেনে নেয়নি যে, আল্লাহর সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে যে মোকাবেলা করে তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে দোযখ; তাতে সব সময় থাকবে। এটিই হল মহা–অপমান।” (৯:৬২–৬৩)

হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ওপর দরুদ পাঠ ও সালাম পেশ

স্বয়ং মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ওপর দরুদ পাঠ ও সালাম পেশ করেন। প্রতিটি মুসলিম নরনারীকেও তিনি এ কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর নির্দেশে দুনিয়া জুড়ে প্রতিদিনই নামাযে, আযানে ও আলোচনায় তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করা হচ্ছে। যখনই যেখানেই তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে তখনই তাঁকে উত্তম অভিবাদন জানানো হচ্ছে। তাঁর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে বক্তা ও শ্রোতা উভয়েই সমস্বরে বলছেন, صلى الله عليه و سلم (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) অর্থাৎ তাঁর ও তাঁর পরিবার–পরিজনের ওপর আল্লাহর রহমত ও সালাম বর্ষিত হোক। একটি হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী একদা হযরত (সা) নামাযে খুতবা প্রদানের জন্য মিম্বরে ওঠার সময় তিনবার ‘আমীন’ বলেন। সাহাবাগণ তাঁর এভাবে ‘আমীন’ বলার তাৎপর্য জানতে চাইলে তিনি বললেন, হযরত জিব্রাইল (আ) তিনটি দোয়া পাঠ করলে এর প্রতিটির প্রত্যুত্তরে তিনি ‘আমীন’ বলেছেন। এর মধ্যে একটি দোয়ায় জিব্রাইল (আ) বলেছিলেন, “যে আপনার (নবীর) নাম শোনার পর “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম” বললো না তার ওপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক (হাকিম, বায়হাক্বী)! এসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায় মহান আল্লাহর প্রিয় নবী (সা) -কে সম্মান প্রদর্শন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্যেই স্বর্গ–মর্ত্য যেখানেই তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে, সেখানেই শ্রদ্ধাভরে তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করা হচ্ছে।

এতদসম্পর্কিত আয়াতটি নিম্নে বিবৃত হলো:

اِنَّ اللهَ وَمَلٰٓئِكَتَه يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىِّ يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا ۝

“আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।” (৩৩:৫৬)

নবী করীম (সা)-এর প্রতি আদব ও শিষ্টাচার

নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবৎকালে তাঁর সাহাবাগণ (রা) তাঁর সামনে আদব, সম্মান ও শিষ্টাচারের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছেন। যুগে যুগে রসূল (সা) এর উম্মতগণ সাহাবাগণ (রা) এর অনুসরণে তাঁর প্রতি আদব, সম্মান ও শিষ্টাচারের এ রীতি অব্য়াহত রেখেছেন। এতদসম্পর্কিত আয়াতসমূহ নিম্নে বিবৃত হলো:

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْۤا اَصْوَاتَکُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِیِّ وَ لَا تَجْهَرُوْا لَہٗ بِالْقَوْلِ كَجَہْرِ بَعْضِکُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَحْبَطَ اَعْمَالُکُمْ وَاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ ۝ اِنَّ الَّذِیْنَ یَغُضُّوْنَ اَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ امْتَحَنَ اللّٰهُ قُلُوْبَهُمْ لِلتَّقْوٰی ؕ لَهُمْ مَّغْفِرَۃٌ وَّ اَجْرٌ عَظِیْمٌ ۝

“হে মু’মিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না। আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।” (৪৯:২ – ৩)

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقُوْلُوْا رٰعِنَا وَقُوْلُوْا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوْا ط وَلِلْكٰفِرِيْنَ عَذَابٌ اَلِيْمٌ۝

“হে মু’মিনগণ, তোমরা (নবীকে) ‘রায়িনা’ (অশোভনীয়ভাবে ‘আমাদের কথা শোন’) বলো না- বরং বল ‘উনযুরনা’ (আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন) এবং (মনযোগ দিয়ে) শোনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।” (২:১০৪)

وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ فِیْکُمْ رَسُوْلَ اللّٰهِ ؕ لَوْ یُطِیْعُکُمْ فِیْ كَثِیْرٍ مِّنَ الْاَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ حَبَّبَ اِلَیْکُمُ الْاِیْمَانَ وَ زَیَّنَہٗ فِیْ قُلُوْبِکُمْ وَ كَرَّهَ اِلَیْکُمُ الْکُفْرَ وَ الْفُسُوْقَ وَ الْعِصْیَانَ ؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الرّٰشِدُوْنَ ۝ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَنِعْمَةً وَّاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ۝

“তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। এটা আল্লাহর কৃপা ও নিয়ামত – আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” (৪৯:৭ – ৮)

لَا تَجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَیْنَکُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِکُمْ بَعْضًا ؕ قَدْ یَعْلَمُ اللّٰهُ الَّذِیْنَ یَتَسَلَّلُوْنَ مِنْکُمْ لِوَاذًا ۚ فَلْیَحْذَرِ الَّذِیْنَ یُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِہٖۤ اَنْ تُصِیْبَهُمْ فِتْنَۃٌ اَوْ یُصِیْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ۝

“রাসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (২৪:৬৩)

وَ مِنْهُمُ الَّذِیْنَ یُؤْذُوْنَ النَّبِیَّ وَ یَقُوْلُوْنَ هُوَ اُذُنٌ ط قُلْ اُذُنُ خَیْرٍ لَّکُمْ یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ ُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَرَحْمَۃٌ لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْکُمْ ط وَالَّذِیْنَ یُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللّٰهِ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ۝

“আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ নবীকে ক্লেশ দেয়, এবং বলে, সে তো কর্ণপাতকারী। আপনি বলে দিন, তোমাদের জন্য যা মঙ্গলকর তাঁর কান তাই শুনে, তিনি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে এবং বিশ্বাস রাখেন মুসলমানদের কথার উপর। বস্তুত তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের জন্য তিনি রহমতবিশেষ। আর যারা আল্লাহর রাসূলের প্রতি কুৎসা রটনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।” (৯:৬১)

اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا۝

“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” (৩৩:৫৭)

مَا كَانَ لِاَهْلِ الْمَدِیْنَۃِ وَ مَنْ حَوْلَهُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ اَنْ یَّتَخَلَّفُوْا عَنْ رَّسُوْلِ اللّٰهِ وَ لَا یَرْغَبُوْا بِاَنْفُسِهِمْ عَنْ نَّفْسِہٖ ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ لَا یُصِیْبُهُمْ ظَمَاٌ وَّ لَا نَصَبٌ وَّ لَا مَخْمَصَۃٌ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ لَا یَطَـُٔوْنَ مَوْطِئًا یَّغِیْظُ الْکُفَّارَ وَ لَا یَنَالُوْنَ مِنْ عَدُوٍّ نَّیْلًا اِلَّا کُتِبَ لَهُمْ بِہٖ عَمَلٌ صَالِحٌ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِیْنَ ۝

“মদীনাবাসী ও পাশ্ববর্তী পল্লীবাসীদের উচিত নয় রাসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রাসূলের প্রাণ থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে করা। এটি এজন্য যে, আল্লাহর পথে যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা তাদের স্পর্শ করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের সঞ্চার হয় আর শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু (আঘাত) প্রাপ্ত হয় – তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয় নেক আমল। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক নষ্ট করেন না।” (৯:১২০)

وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ ٭ وَ مَا نَهٰىکُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ ۘ۝

“….রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” (৫৯:৭)

وَ مَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّ لَا مُؤْمِنَۃٍ اِذَا قَضَی اللّٰهُ وَ رَسُوْلُہٗۤ اَمْرًا اَنْ یَّکُوْنَ لَهُمُ الْخِیَرَۃُ مِنْ اَمْرِهِمْ ؕ وَ مَنْ یَّعْصِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیْنًا۝

“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (৩৩:৩৬)

 

নবী মুহাম্মদ (সা)-কে প্রদত্ত মু’জেজাসমূহ

নবী মুহাম্মদ (সা)-কে প্রদত্ত মু’জেজা ছিল ভিন্ন ধর্মী। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জেজা হলো তাঁর ওপর নাযিলকৃত পবিত্র কুরআন। সাধারণত নবীদের মু‘জেজা তাঁদের ওফাতের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পবিত্র কুরআনের মু‘জেজা নবী করীমের (সা) তিরোধানের চৌদ্দশত বছর পরও সমুজ্জ্বল–দীপ্তিমান। ক্বিয়ামত পযন্ত তা অব্যাহত থাকবে – এটাই আল্লাহর ওয়াদা। এছাড়া তাঁর একটি বড় মু’জেযা হলো ইসরা ওয়াল মিরাজ অর্থাৎ নৈশ ভ্রমণ ও ঊর্ধ্বলোক গমন। বর্তমান মহাকাশ–যানে ঊধ্বাকাশ ভ্রমণের তুলনায় চৌদ্দশত বছর পূর্বে তাঁর সে ভ্রমণটি ছিল অত্যাশ্চর্য ও তাঁর মু’জেযার এক বিরাট নিদর্শন। হযরত মুহাম্মদ সা-এর আরও একটি বড় মু’জেযা হলো তাঁর আঙুলের ইশারায় চাঁদ বিদীর্ণ (দ্বিখন্ডিত) হওয়ার ঘটনা।

নিম্নে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়া সংক্রান্ত আয়াতটি উদ্ধৃত হলো:

سُبْحٰنَ الَّذِىۤ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِىْ بٰرَكْنَا حَوْلَه لِنُرِيَه مِنْ اٰيٰتِنَاۤ اِنَّه هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ۝

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَاِنْشَقَّ الْقَمَرُ۝ وَاِنْ يَّرَوْا اٰيَةً يُعْرِضُوْا وَيَقُوْلُوْا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ۝

“কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু।” (৫৪:১ – ২)।

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইসরা ওয়াল মি’রাজ

সর্বশেষ নবী ও রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের  মু’জেযা ও একটি মহাঅলৌকিক ঘটনা হলো ‘আল ইসরা ওয়াল মি‘রাজ’, অর্থাৎ নৈশ ভ্রমণ ও ঊর্ধ্বলোক গমন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় নবী ও হাবিব মুহাম্মদুর রাসূল্লাহ (সা)–কে এক পবিত্র রজনীতে কা’বা শরীফের প্রাঙ্গণ থেকে জেরুজালেমস্থ পবিত্র মসজিদুল আকসায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে তিনি তাঁর বান্দাকে ঊর্ধ্ব জগতে তাঁর নৈকট্যে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মহা নিদর্শনসমূহ প্রদর্শনের জন্য। এটি সংঘটিত হয়েছিল তাঁর নবুওতের দশম বর্ষে, মতভেদে রজব মাসের ছাব্বিশ তারিখের রাতে। এ রজনীর এক স্বল্পতম সময়ে অল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন  তাঁর প্রিয় নবীকে  তাঁর কুদরতের নিদর্শনসমূহ অবলোকন করানোর জন্য মক্কার ক্বাবা প্রাঙ্গণ থেকে  মসজিদুল আক্বসা ও ঊর্ধলোক ভ্রমণ করিয়েছিলেন। এত স্বল্প সময়ে এ সুদীর্ঘ ভ্রমণ ছিল হযরত মুহাম্মদুর রাসূল্লাহ (সা) এর জীবনের একটি মহাঅলৌকিক ঘটনা। এ অলৌকিক ভ্রমণের জন্য যে দু’টি বাহন ব্যবহৃত হয়েছিল তাদের নাম ‘বুররাক’ ও ‘রফরফ’। এ ঘটনা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন:

سُبْحٰنَ الَّذِىۤ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِىْ بٰرَكْنَا حَوْلَه لِنُرِيَه مِنْ اٰيٰتِنَآ اِنَّه هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ۝

“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত – যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দৃষ্টিসম্পন্ন।” (১৭:১)

وَاِذْ قُلْنَا لَكَ اِنَّ رَبَّكَ اَحَاطَ بِالنَّاسِ وَمَا جَعَلْنَا الرُّءْيَا الَّتِىۤ اَرَيْنٰكَ اِلَّا فِتْنَةً لِّلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُوْنَةَ فِى الْقُرْاٰنِ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيْدُهُمْ اِلَّا طُغْيٰنًا كَبِيْرًا۝

“এবং স্মরণ করুন, আমি আপনাকে বলে দিয়েছিলাম যে, আপনার পালনকর্তা মানুষকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং যে দৃশ্য আমি আপনাকে দেখিয়েছি তাও কুরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্যে। আমি তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি। কিন্তু এতে তাদের অবাধ্যতাই আরও বৃদ্ধি পায়।” (১৭:৬০)

مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَاٰىۤ۝ اَفَتُمٰرُوْنَه عَلٰى مَا يَرٰى۝ وَلَقَدْ رَاٰهُ نَزْلَةً اُخْرٰى۝ عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهٰى۝ عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَاْوٰىۤ۝ اِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشٰى۝ مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغٰى۝ لَقَدْ رَاٰى مِنْ اٰيٰتِ رَبِّهِ الْكُبْرٰىۤ۝

“রাসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে। তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে? নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। যখন বৃক্ষটি যদ্দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তাঁর দৃষ্টি–বিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি। নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে ।” (৫৩:১১-১৮)

 

নবী করীম (সা)-এর পরিবারবর্গ

হযরত মুহাম্মদ (সা) পঁচিশ বছর বয়সে সর্বপ্রথম বিয়ে করেন খাদীজা নাম্নী চল্লিশ বছর বয়স্ক একজন বিধবা মহিলাকে । হযরত খাদীজা  (রা) ছিলেন মক্কার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী।  যুবক মুহাম্মদ (সা) তাঁর ব্যবসায়িক কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন কালে খাদীজা (রা) এর তরফ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পান এবং তাঁকে বিয়ে করেন। পঁচিশ বছরের সুখী দাম্পত্য জীবনে তাঁরা ছিলেন আদর্শ স্বামিী–স্ত্রী এবং চার কন্যা সন্তানের  জনক–জননী।  এক পর্যায়ে মুহাম্মদ (সা) আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হন এবং চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের তরফ থেকে নবুওতী দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। প্রতিকূল পরিবেশে এ কঠিন দায়িত্ব পালনকালে খাদীজা (রা) তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেন। ৬৫ বছর বয়সে খাদীজা ইন্তেকাল করেন, তাঁর জীবৎকালীন সময়ে নবী মুহাম্মদ (সা) দ্বিতীয় কোন বিয়ে করেননি। পারিবারিক জীবনের দ্বিতীয় পর্বে নবী (সা) আরও দশটি বিয়ে করেন। পরবর্তী স্ত্রীগণের মধ্যে একমাত্র হযরত আয়েশা (রা) ছিলেন কুমারী, অন্য সবাই ছিলেন বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা।  তাঁরা সবাই ছিলেন অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত, পরহেজগার, উন্নত চরিত্রের অধিকারিনী ও পবিত্রতমা। হযরত মুহাম্মদ (সা)– এর একাধিক বিয়ে ছিল ইসলামের স্বার্থে। কারণ তৎকালীন বিরূপ পরিবেশে ইসলামের সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে সুদৃঢ় করা‌ই ছিল এর উদ্দেশ্য।

 

নবী (সা)-এর পত্নীগণের প্রতি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের উপদেশ

یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَیْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَیَطْمَعَ الَّذِیْ فِیْ قَلْبِہٖ مَرَضٌ وَّ قُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا ۝ وَ قَرْنَ فِیْ بُیُوْتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِیَّۃِ الْاُوْلٰی وَ اَقِمْنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیْنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعْنَ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیُذْهِبَ عَنْکُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَیْتِ وَ یُطَهِرَکُمْ تَطْهِیْرًا ۝ وَ اذْکُرْنَ مَا یُتْلٰی فِیْ بُیُوْتِکُنَّ مِنْ اٰیٰتِ اللّٰهِ وَ الْحِکْمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ لَطِیْفًا خَبِیْرًا ۝

“হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে – মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ, আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত –পবিত্র রাখতে। আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন।” (৩৩:৩ ২ – ৩৪)

یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ مَنْ یَّاْتِ مِنْکُنَّ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ یُّضٰعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَیْنِ ؕ وَ كَانَ ذٰلِكَ عَلَی اللّٰهِ یَسِیْرًا ۝ وَ مَنْ یَّقْنُتْ مِنْکُنَّ لِلّٰهِ وَ رَسُوْلِہٖ وَ تَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَیْنِ ۙ وَ اَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِیْمًا ۝

“হে নবী পত্নীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করলে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে। এটা আল্লাহর জন্য সহজ। তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মানজনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি।” (৩৩:৩০ – ৩১)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ اِنْ کُنْـتُنَّ تُرِدْنَ الْحَیٰوۃَ الدُّنْیَا وَ زِیْنَتَهَا فَتَعَالَیْنَ اُمَتِّعْکُنَّ وَ اُسَرِّحْکُنَّ سَرَاحًا جَمِیْلًا ۝ وَ اِنْ کُنْـتُنَّ تُرِدْنَ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَہٗ وَ الدَّارَ الْاٰخِرَۃَ فَاِنَّ اللّٰهَ اَعَدَّ لِلْمُحْسِنٰتِ مِنْکُنَّ اَجْرًا عَظِیْمًا۝

“হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় নেই। পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকাল কামনা কর, তবে তোমাদের সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (৩৩:২৮ – ২৯)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَحْلَلْنَا لَكَ اَزْوَاجَكَ الّٰتِیْۤ اٰتَیْتَ اُجُوْرَهُنَّ وَ مَا مَلَكَتْ یَمِیْنُكَ مِمَّاۤ اَفَآءَ اللّٰهُ عَلَیْكَ وَ بَنٰتِ عَمِّكَ وَ بَنٰتِ عَمّٰتِكَ وَ بَنٰتِ خَالِكَ وَ بَنٰتِ خٰلٰتِكَ الّٰتِیْ هَاجَرْنَ مَعَكَ ۫ وَامْرَاَۃً مُّؤْمِنَۃً اِنْ وَّهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِیِّ اِنْ اَرَادَ النَّبِیُّ اَنْ یَّسْتَنْكِحَهَا ٭ خَالِصَۃً لَّكَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَ ؕ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَیْهِمْ فِیْۤ اَزْوَاجِهِمْ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُمْ لِكَیْلَا یَکُوْنَ عَلَیْكَ حَرَجٌ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا ۝ تُرْجِیْ مَنْ تَشَآءُ مِنْهُنَّ وَ تُــْٔوِیْۤ اِلَیْكَ مَنْ تَشَآءُ ؕ وَمَنِ ابْتَغَیْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیْكَ ؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤی اَنْ تَقَرَّ اَعْیُنُهُنَّ وَ لَا یَحْزَنَّ وَ یَرْضَیْنَ بِمَاۤ اٰتَیْتَهُنَّ کُلُّهُنَّ ؕ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ مَا فِیْ قُلُوْبِکُمْ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلِیْمًا حَلِیْمًا ۝ لَا یَحِلُّ لَكَ النِّسَآءُ مِنْۢ بَعْدُ وَ لَاۤ اَنْ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ اَزْوَاجٍ وَّ لَوْ اَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ اِلَّا مَا مَلَكَتْ یَمِیْنُكَ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ رَّقِیْبًا۝

“হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মু’মিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য -অন্য মু’মিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মু’মিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে তাতে আপনার কোন দোষ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে; তারা দুঃখ পাবে না এবং আপনি যা দেন, তাতে তারা সকলেই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে, আল্লাহ জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।” (৩৩:৫০ – ৫২)

وَ اِذْ اَسَرَّ النَّبِیُّ اِلٰی بَعْضِ اَزْوَاجِہٖ حَدِیْثًا ۚ فَلَمَّا نَبَّاَتْ بِہٖ وَ اَظْهَرَهُ اللّٰهُ عَلَیْهِ عَرَّفَ بَعْضَہٗ وَ اَعْرَضَ عَنْۢ بَعْضٍ ۚ فَلَمَّا نَبَّاَهَا بِہٖ قَالَتْ مَنْ اَنْۢبَاَكَ هٰذَا ؕ قَالَ نَبَّاَنِیَ الْعَلِیْمُ الْخَبِیْرُ ۝ اِنْ تَتُوْبَاۤ اِلَی اللّٰهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوْبُکُمَا ۚ وَ اِنْ تَظٰهَرَا عَلَیْهِ فَاِنَّ اللّٰهَ هُوَ مَوْلٰىهُ وَ جِبْرِیْلُ وَ صَالِحُ الْمُؤْمِنِیْنَ ۚ وَ الْمَلٰٓئِكَۃُ بَعْدَ ذٰلِكَ ظَهِیْرٌ ۝ عَسٰی رَبُّہٗۤ اِنْ طَلَّقَکُنَّ اَنْ یُّبْدِلَہٗۤ اَزْوَاجًا خَیْرًا مِّنْکُنَّ مُسْلِمٰتٍ مُّؤْمِنٰتٍ قٰنِتٰتٍ تٰٓئِبٰتٍ عٰبِدٰتٍ سٰٓئِحٰتٍ ثَیِّبٰتٍ وَّ اَبْكَارًا۝

“যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেন: কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেন, যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন। তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তু ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী, তওবাকারিণী, ইবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী।” (৬৬:৩ – ৫)

 

উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা (রা)-এর ওপর আনীত অপবাদের খন্ডন

মদীনার মোনাফেকগণ ও তাদের সহযোগিরা নবী করীম (সা) এর প্রিয়তমা স্ত্রী ও উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা (রা) এর উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে মুসলিম সমাজে ফেতনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। এতে নবী করীম (সা) ও আয়েশা (রা) খুবই ব্যথিত ও মর্মাহত হন। এ নাজুক অবস্থায় আল্লাহ্ পাক ওহী নাযিল করে এ অপবাদ খন্ডন করেন। এতদ্ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো:

وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُه وَاَنَّ اللهَ تَوَّابٌ حَكِيْمٌ۝ اِنَّ الَّذِيْنَ جَآءُوْ بِالْاِفْكِ عُصْبَةٌ مِّنْكُمْ لَا تَحْسَبُوْهُ شَرًّا لَّكُمْ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُم مَّا اكْتَسَبَ مِنَ الْاِثْمِ وَالَّذِىْ تَوَلّٰى كِبْرَه مِنْهُمْ لَه عَذَابٌ عَظِيْمٌ۝ لَّوْلَاۤ اِذْ سَمِعْتُمُوْهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنٰتُ بِاَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوْا هٰذَاۤ اِفْکٌ مُّبِیْنٌ ۝ لَّوْلَا جَآءُوْ عَلَيْهِ بِاَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ فَاِذْ لَمْ يَاْتُوْا بِالشُّهَدَآءِ فَاُوْلٰٓئِكَ عِنْدَ اللهِ هُمُ الْكٰذِبُوْنَ۝ وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُه فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِىْ مَآ اَفَضْتُمْ فِيْهِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ۝ اِذْ تَلَقَّوْنَہٗ بِاَلْسِنَتِکُمْ وَ تَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِکُمْ مَّا لَیْسَ لَکُمْ بِہٖ عِلْمٌ وَّ تَحْسَبُوْنَہٗ هَیِّنًا ٭ۖ وَّ هُوَ عِنْدَ اللّٰهِ عَظِیْمٌ ۝ وَ لَوْ لَاۤ اِذْ سَمِعْتُمُوْهُ قُلْتُمْ مَّا یَکُوْنُ لَنَاۤ اَنْ نَّتَكَلَّمَ بِهٰذَا ٭ۖ سُبْحٰنَكَ هٰذَا بُہْتَانٌ عَظِیْمٌ ۝ یَعِظُکُمُ اللّٰهُ اَنْ تَعُوْدُوْا لِمِثْلِہٖۤ اَبَدًا اِنْ کُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ ۝

“তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে এবং আল্লাহ তওবা কবুল কারী, প্রজ্ঞাময় না হলে কত কিছুই যে হয়ে যেত। যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি। তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ? তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি; অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। যদি ইহকালে ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, তজ্জন্যে তোমাদেরকে গুরুতর আযাব স্পর্শ করত। যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল। তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে কখনও পুনরায় এ ধরণের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না।” (২৪:১০ – ১৭)

 

নবী (সা)-এর পত্নীগণের সাথে মু’মিনগণের সম্পর্ক

নবী হযরত মুহাম্মদের (সা) পরিবারবর্গের মর্যাদা অনেক উঁচুতে। তাঁর পবিত্রা পত্নীগণ ছিলেন মু’মিন নারীদের জন্য আদর্শস্থানীয়া। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁদের সাথে শালীনতা ও শিষ্টাচারের নির্দেশ দিয়েছেন। নবী (সা)-এর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণকে বিয়ে করা গুরুতর অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর পবিত্রতমা স্ত্রীগণের সাথে মু’মিনগণের সম্পর্ককে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মাতৃতুল্য নির্ধারণ করেছেন। এ সম্পর্কিত যেসব আয়াত নাযিল হয়েছে তা নিম্নে পেশ করা হলো:

النَّبِىُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوٰجُه اُمَّهٰتُهُمْ۝

“নবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা …..” (৩৩:৬)

وَ مَا كَانَ لَکُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَ لَاۤ اَنْ تَنْكِحُوْۤا اَزْوَاجَہٗ مِنْۢ بَعْدِہٖۤ اَبَدًا ؕ اِنَّ ذٰلِکُمْ كَانَ عِنْدَ اللّٰهِ عَظِیْمًا ۝

“…….আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (৩৩:৫৩)

 

নবী (সা)-এর গৃহে যাতায়াতের আদব

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتَ النَّبِیِّ اِلَّاۤ اَنْ یُّؤْذَنَ لَکُمْ اِلٰی طَعَامٍ غَیْرَ نٰظِرِیْنَ اِنٰىهُ وَ لٰكِنْ اِذَا دُعِیْتُمْ فَادْخُلُوْا فَاِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوْا وَ لَا مُسْتَاْنِسِیْنَ لِحَدِیْثٍ ؕ اِنَّ ذٰلِکُمْ كَانَ یُؤْذِی النَّبِیَّ فَیَسْتَحْیٖ مِنْکُمْ ۫ وَ اللّٰهُ لَا یَسْتَحْیٖ مِنَ الْحَقِّ

“হে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না….।” (৩৩:৫৩)

اِنَّ الَّذِيْنَ يُنَادُوْنَكَ مِنْ وَرَآءِ الْحُجُرٰتِ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ۝ وَلَوْ اَنَّهُمْ صَبَرُوْا حَتّٰى تَخْرُجَ اِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ط وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ۝

“যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উঁচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ। যদি তারা আপনার বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত সবর করত, তবে তা-ই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হত। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৪৯:৪ – ৫)

وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتٰعًا فَسْـَٔلُوْهُنَّ مِنْ وَرَآءِ حِجَابٍ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ۝

“…….তোমরা তাঁর (নবীর) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ…।” (৩৩:৫৩)

অধ্যায়সমূহ