৩য় অধ্যায় : পবিত্র কুরআন এক উপদেশ বাণী

পবিত্র কুরআনের উপদেশ বাণীর গুরুত্ব

এ দুনিয়ায় একটি সুন্দর জীবন গঠন এবং আখিরাতে চূড়ান্ত সাফল্য ও জান্নাত লাভের জন্য কুরআনের উপদেশ-বাণী পরম বরকতময় ও কল্যাণকর। পবিত্র কুরআনের উপদেশ বাণী সত্য ও ন্যায়দর্শী, মিথ্যার অবলুপ্তকারী এবং সত্য ও মিথ্যার ফয়সালাকারী। এ কুরআন আল্লাহর একত্ববাদ, সার্বভৌমত্ব ও আনুগত্য প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার এবং মানব জাতিকে শত–সহস্র দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তির–বারতা। কুরআন মানবতার উন্নয়নের প্রেরণাদায়ী, মানুষের অন্তরের রোগ নিরাময়কারী. চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও নৈতিক উন্নয়নের দিক–নির্দেশক, মধ্যমপন্থী জীবন দর্শন ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার প্রবক্তা, সৎকর্ম ও সদ্গুণের পৃষ্টপোষক, শান্তি ও নিরাপত্তার পথ প্রদর্শনকারী, ইহ ও পরকালীন জীবনের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ককারী, জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রদানকারী এবং মহান আল্লাহর অপরিমেয় দয়া ও ক্ষমার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পবিত্র কুরআন ধর্মীয় ব্যাপরে কোনরূপ কঠোরতা ও বাড়াবাড়িকে প্রশ্রয় দেয় না। এর উপদেশসমূহ মানুষের উপর সাধ্যাতীত ও দুঃসহ বোঝা আরোপ করে না, বরং সহজ–সরল ও সঠিক পথের সন্ধান দেয় যাতে মানুষ ইহকালীন জীবনে শান্তি ও পরকালীন জীবনে মুক্তি লাভ করতে পারে। কুরআনের উপদেশ বাণী এমনই যে তা মানুষের অন্তরের কলুষতা ও ব্যাধিসমূহকে নিরাময় করে একে পরিশুদ্ধ করে তোলে, হেদায়েতের আলোয় জীবনকে আলোকিত করে এবং প্রাণে আল্লাহর বিশেষ রহমতের ধারা সঞ্চারিত করে। আল্লাহ্ জোরপূর্বক করো ওপর এ কুরআন চাপিয়ে দিতে চান না, বরং মানুষ তার নিজ কল্যাণের জন্যই স্বেচ্ছায় কুরআনের উপদেশ বাণী গ্রহণ করুক – এটাই আল্লাহ্ চান।

তাই মহান আল্লাহ্ বলেন:

اِنْ هُوَ الَّا ذِكْرٌ لِّلْعلَمِيْنَ ۝ لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ اَنْ يَّسْتَقِيْمَ ۝

“এ তো (কুরআন) শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায় তার জন্যে।” (৮১:২৭ – ২৮) ।”

لَقَدْ اَنْزَلْنَا اِلَيْكُمْ كِتبًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْ

“আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে রয়েছে তোমাদের (সবার) জন্যে উপদেশবার্তা।” (২১:১০)

وَاِنَّه لَتَذْكِرَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ ۝ وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُم مُّكَذِّبِيْنَ ۝ وَاِنَّه لَحَسْرَةٌ عَلَى الْكٰفِرِيْنَ۝ وَاِنَّه لَحَقُّ الْيَقِيْنِ ۝

“এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ–বাণী। আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মিথ্যারোপ করবে। নিশ্চয় এটা কাফেরদের জন্যে অনুতাপের কারণ। অবশ্য অবশ্যই এটা এক অমোঘ সত্য বাণী।” (৬৯:৪৮ – ৫১)

هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ۝

“এই (কুরআন) হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।” (৩:১৩৮)

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ اِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا

“(হে নবী) বলুন, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (১৭:৮১)।”

كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِىْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِه وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ ۝ اِتَّبِعُوْا مَا اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه اَوْلِيَاءَ ط قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ ۝

“এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে (আখিরাতে জবাবদিহি ও বিচারের)  ভীতি প্রদর্শন করেন। অতএব, এটি পৌঁছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ সংকোচ থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ। তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।” (৭:২ – ৩)

فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ۝ كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ۝ فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍۭ۝ بَلْ يُرِيْدُ كُلُّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ اَنْ يُّؤْتٰىْ صُحُفًا مُّنَشَّرَةً۝ كَلَّا بَل لَّا يَخَافُوْنَ الْاٰخِرَةَ۝ كَلَّاۤ اِنَّه تَذْكِرَةٌ۝ فَمَنْ شَآءَ ذَكَرَه ۝ وَمَا يَذْكُرُوْنَ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُ ج هُوَ اَهْلُ التَّقْوٰى وَاَهْلُ الْمَغْفِرَةِ۝

“তাদের কি হল যে, তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? যেন তারা ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত গর্দভ। হট্টগোলের কারণে পলায়নপর। বরং তাদের প্রত্যেকেই চায় তাদের প্রত্যেককে একটি উম্মুক্ত গ্রন্থ দেয়া হোক। কখনও না, বরং তারা পরকালকে ভয় করে না। কখনও না, এটা তো উপদেশ মাত্র। অতএব, যার ইচ্ছা, সে একে স্মরণ করুক। তারা স্মরণ করবে না, কিন্তু যদি আল্লাহ চান। তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং ক্ষমার অধিকারী।” (৭৪:৪৯ – ৫৬)

هُوَ الَّذِىْ بَعَثَ فِى الْاُمِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ ۝ وَاٰخَرِيْنَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوْا بِهِمْ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ ۝

“তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। এই রাসূল প্রেরিত হয়েছেন অন্য আরও লোকদের জন্যে, যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৬২:২ – ৩)

لَقَدْ كَانَ فِىْ قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّاُوْلِى الْاَلْبٰبِ ج مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِىْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَىْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ ۝

“তাদের (পূর্বেকার নবী ও তাঁদের সম্প্রদায়ের) কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ, রহমত ও হেদায়েত।” (১২:১১১)

وَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ وَمَآ اَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنَ الكِتٰبِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُمْ بِه ط وَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْلَمُوْٓا اَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيْمٌ۝

“……আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই জ্ঞানময়।” (২:২৩১)

سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسٰىٓ ۝ اِلَّا مَا شَآءَ اللهُۚ اِنَّه يَعْلَمُ الْجَهْرَ وَمَا يَخْفٰى ۝ وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرٰى ۝ فَذَكِّرْ اِنَّ نَّفَعَتِ الذِّكْرٰى ۝ سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَّخْشٰى ۝ وَيَتَجَنَّبُهَا الْاَشْقَى ۝ الَّذِىْ يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرٰى ۝ ثُمَّ لَا يَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْيٰى ۝ قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ۝ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّه فَصَلّٰى ۝

“আমি আপনাকে পাঠ করাতে থাকব, ফলে আপনি বিস্মৃত হবেন না আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়। আমি আপনার জন্যে সহজ শরীয়ত সহজতর করে দেবো। উপদেশ ফলপ্রসূ হলে উপদেশ দান করুন, যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে, আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে, সে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না। নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।” (৮৭:৬ – ১৫)

فَذَكِّرْ اِنَّمَآ اَنْتَ مُذَكِّرٌ ۝ لَّسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَۜيْطِرٍ ۝ اِلَّا مَنْ تَوَلّٰى وَكَفَرَ ۝ فَيُعَذِّبُهُ اللهُ الْعَذَابَ الْاَكْبَرَ ۝ اِنَّ اِلَيْنَآ اِيَابَهُمْ ۝ ثُمَّ اِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ ۝

“অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের শাসক নন, কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়, আল্লাহ তাকে মহা আযাব দেবেন। নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, অতঃপর তাদের হিসাব–নিকাশ আমারই দায়িত্ব।” (৮৮: ২১ – ২৬)

مَآ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْاٰنَ لِتَشْقٰىٓ ۝ اِلَّا تَذْكِرَةً لِّمَنْ يَّخْشٰى ۝ تَنْزِيْلًا مِّمَنْ خَلَقَ الْاَرْضَ وَالسَّمٰوٰتِ الْعُلَى ۝

“আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি। কিন্তু তাদেরই উপদেশের জন্য যারা ভয় করে। এটা তাঁর কাছ থেকে অবতীর্ণ, যিনি ভূমন্ডল ও সমুচ্চ নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন।” (২০:২ – ৪)

يُؤْتِى الْحِكْمَةَ مَنْ يَّشَآءُط وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِىَ خَيْرًا كَثِيْرًا ط وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُوْلُوْا الْاَلْبٰبِ ۝

“তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।” (২:২৬৯)

بَلْ اَتَيْنٰهُمْ بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِكْرِهِمْ مُّعْرِضُوْنَ۝

“…….বরং আমি তাদেরকে দান করেছি উপদেশ, কিন্তু তারা উপদেশ অনুধাবন করে না।” (২৩:৭১)

اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَذِکْرٰی لِمَنْ كَانَ لَہٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَی السَّمْعَ وَ هُوَ شَهِیْدٌ۝

“এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।” (৫০:৩৭)

 

পবিত্র কুরআনের সতর্ক বাণী

পবিত্র কুরআন মানব জাতির জন্য এক সতর্ক বাণী। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে এ দুনিয়ায় তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেই ক্ষান্ত হননি। এ দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি মানুষকে ভালো–মন্দ বোঝার মত দিয়েছেন স্বাভাবিক জ্ঞান, এবং প্রজ্ঞা–বিবেক ও বুদ্ধিতে দিয়েছেন সকল জীবের ওপরে প্রাধান্য। এ ছাড়াও যুগে যুগে এবং প্রত্যেক জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছে নবী–রসূল ও আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন মানবজাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য। তাকে দিয়েছেন এ দুনিয়ার অফুরন্ত নিয়ামত ভোগের অধিকার।

আল্লাহ্ প্রদত্ত সব নিয়ামতরাশি ও আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্ব ও কর্ম সম্পর্কে বিচার দিবসে মানুষ জিজ্ঞাসিত হবে এবং তাদরেকে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। এ দুনিয়ায় মানুষের প্রতিটি কর্মই তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে এবং আখিরাতে তা ঈমান ও সততার কষ্টিপাথরে যাচাই হবে। ঈমান ও সৎকর্মের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে তাদের ভাগ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ পরকালীন পরিণামের কথা বারবার ব্যক্ত করেছেন এবং জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ব্যপারে সতর্ক করেছেন। সতর্ক না করে এবং পথ–নির্দেশ না দিয়ে কোন জাতি বা ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া আল্লাহর বিধান নয়। অতএব কুরআনের আলোকে মানুষকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও কর্ম সম্পাদনে সদা সচেষ্ট ও সতর্ক থাকতে হবে যাতে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে শান্তি ও মুক্তি অর্জন করতে পারে। আল্লাহ্ তায়ালার সতর্ক বাণীসমূহ নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো:

اِنَّا سَنُلْقِىْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا۝

“আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।” (৭৩:৫)

ذَا بَلٰغٌ لِّلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوْا بِه وَلِيَعْلَمُوْٓا اَنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّلِيَذَّكَّرَ اُوْلُوا الْاَلْبَابِ۝

“এটা (কুরআন) মানুষের একটি বার্তা এবং যাতে এর দ্বারা ওরা সতর্ক হয় এবং জানতে পারে যে, তিনিই একমাত্র উপাস্য এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশগ্রহণ করে।” (১৪:৫২)

وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنٰهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيْا وَصَرَّفْنَا فِيْهِ مِنَ الوَعِيْدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ اَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا۝

“এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্কবাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়।” (২০:১১৩)

وَالْكِتٰبِ الْمُبِيْنِ ۝ اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُّبٰرَكَةٍ ۚ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ۝

“শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে নাযিল করেছিলেন এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।” (৪৪:২ – ৩)

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتٰبَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّه عِوَجًا ۜ ۝ قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَاْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا ۝

“সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মু’মিনদেরকে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে।” (১৮:১–২)

يسٓ ۝ وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ ۝ اِنَّكَ لَمِنَ المُرْسَلِيْنَ ۝ عَلٰى صِرٰطٍ مُّسْتَقِيْمٍ ۝ تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ ۝ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّآ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غٰفِلُوْنَ ۝

“প্রজ্ঞাময় কুরআনের কসম। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলগণের একজন। সরল পথে প্রতিষ্ঠিত। কুরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ, যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।” (৩৬:১ – ৬)

وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ فَمَنْ اٰمَنَ وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَاهُمْ يَحْزَنُوْنَ ۝

“আমি রাসূলগণকে শুধু সুসংবাদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি, কিন্তু অতঃপর যে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সংশোধিত হয়, তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।” (৬:৪৮)

فَكَفَرُوْا بِه فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ ۝ وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ ۝ اِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ ۝ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغٰلِبُوْنَ ۝ فَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتّٰى حِيْنٍ ۝ وَاَبْصِرْهُمْ فَسَوْفَ يُبْصِرُوْنَ ۝

“বস্তুত তারা এই কুরআনকে অস্বীকার করেছে। এখন শীঘ্রই তারা জেনে নিতে পারবে, আমার রাসূল ও বান্দাগণের ব্যাপারে আমার এই বাক্য সত্য হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। আর আমার বাহিনীই হয় বিজয়ী। অতএব আপনি কিছুকালের জন্যে তাদেরকে উপেক্ষা করুন। এবং তাদেরকে দেখতে থাকুন। শীঘ্রই তারাও এর পরিণাম দেখে নেবে।” (৩৭:১৭০ – ১৭৫)

تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الغَيْظِ كُلَّمَآ اُلْقِىَ فِيْهَا فَوْجٌ سَاَلَهُمْ خَزَنَتُهَآ اَلَمْ يَاْتِكُمْ نَذِيْرٌ ۝ قَالُوْا بَلٰى قَدْ جَآءَنَا نَذِيْرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللهُ مِنْ شَىْءٍ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِىْ ضَلٰلٍ كَبِيْرٍ ۝

“ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে: তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা বলবে: হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলাম: আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নাযিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ।” (৬৭:৮ – ৯)

قُل ْاَغَيْرَ اللهِ اَبْغِى رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَىْءٍۚ وَّلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ اُخْرٰىۚ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَاكُنْتُمْ فِيْهِ تَخْتَلِفُوْنَ۝

“আপনি বলুন: আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য প্রতিপালক খোঁজব, অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক? যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে।” (৬:১৬৪)

وَكَاَيِّن مِّنْ قَرْيَةٍ عَتَتْ عَنْ اَمْرِ رَبِّهَا وَرُسُلِه فَحَاسَبْنٰهَا حِسَابًا شَدِيْدًا وَّعَذَّبْنٰهَا عَذَابًا نُّكْرًا ۝ فَذَاقَتْ وَبَالَ اَمْرِهَا وَكَانَ عٰقِبَةُ اَمْرِهَا خُسْرًا ۝ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًا فَاتَّقُوْا اللهَ يٰۤاُوْلِى الْاَلْبٰبِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ۚ قَدْ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكُمْ ذِكْرًا ۝

“অনেক জনপদ তাদের পালনকর্তা ও তাঁর রাসূলগণের আদেশ অমান্য করেছিল, অতঃপর আমি তাদেরকে কঠোর হিসাবের দ্বারা ধৃত করেছিলাম এবং তাদেরকে ভীষণ শাস্তি দিয়েছিলাম। অতঃপর তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করল এবং তাদের কর্মের পরিণাম ক্ষতিই ছিল। আল্লাহ তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তত রেখেছেন অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তোমাদের প্রতি উপদেশ নাযিল করেছেন।” (৬৫:৮ – ১০)

اِنْ اَنْتَ اِلَّا نَذِیْرٌ ۝ اِنَّاۤ اَرْسَلْنٰكَ بِالْحَقِّ بَشِیْرًا وَّ نَذِیْرًا ؕ وَ اِنْ مِّنْ اُمَّۃٍ اِلَّا خَلَا فِیْهَا نَذِیْرٌ ۝

“আপনি তো কেবল একজন সতর্ককারী। আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি।” (৩৫:২৩ – ২৪)

وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ ۝ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ المُؤْمِنِيْنَ ۝ فَاِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ اِنِّىْ بَرِىٓءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ ۝ وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ ۝

“আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন। এবং আপনার অনুসারী মু’মিনদের প্রতি সদয় হোন। যদি তারা আপনার অবাধ্যতা করে, তবে বলে দিন, তোমরা যা কর, তা থেকে আমি মুক্ত। আপনি ভরসা করুন পরাক্রমশালী, পরম দয়ালুর উপর।” (২৬:২১৪ – ২১৭)

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ اُخْرٰى ج وَاِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَىْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى ط وَاِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَاَقَامُوْا الصَّلَوٰةَ ۚ وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِه ۚ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ۝

“কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহ্বান করে কেউ তা বহন করবে না — যদি সে নিকটবর্তী আত্মীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই। আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন।” (৩৫:১৮)

اَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا اَنْ اَوْحَيْنَآ اِلٰى رَجُلٍ مِّنْهُمْ اَنْ اَنْذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْٓا اَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ طۗ قَالَ الْكٰفِرُوْنَ اِنَّ هٰذَا لَسٰحِرٌ مُّبِيْنٌ۝

“মানুষের কাছে কি আশ্চর্য লাগছে যে, আমি ওহী পাঠিয়েছি তাদেরই মধ্য থেকে একজনের কাছে যেন তিনি মানুষকে সতর্ক করেন এবং সুসংবাদ শুনিয়ে দেন ঈমনাদারগণকে যে, তাঁদের জন্য সত্য মর্যাদা রয়েছে তাঁদের পালনকর্তার কাছে। কাফেররা বলতে লাগল, নিঃসন্দেহে এ লোক প্রকাশ্য জাদুকর।” (১০:২)

وَاَنِيْبُوْٓا اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَه مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيْكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ ۝ وَاتَّبِعُوْٓا اَحْسَنَ مَآ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيْكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ ۝ اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يٰحَسْرَتٰى عَلٰى مَا فَرَّطْتُ فِىْ جَنۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السّٰخِرِيْنَ ۝ اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدٰىنِى لَكُنْتُ مِنَ المُتَّقِيْنَ ۝ اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِىْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ المُحْسِنِيْنَ ۝

“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না; তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসার পূর্বে, যাতে কেউ না বলে, হায়, হায়, আল্লাহ সকাশে আমি কর্তব্যে অবহেলা করেছি এবং আমি ঠাট্টা–বিদ্রুপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা না বলে, আল্লাহ যদি আমাকে পথপ্রদর্শন করতেন, তবে অবশ্যই আমি পরহেযগারদের একজন হতাম। অথবা আযাব প্রত্যক্ষ করার সময় না বলে, যদি কোনরূপে একবার ফিরে যেতে পারি, তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে যাব।” (৩৯:৫৪ – ৫৮)

قٓ ۟ۚ وَ الْقُرْاٰنِ الْمَجِیْدِ ۝بَلْ عَجِبُوْۤا اَنْ جَآءَهُمْ مُّنْذِرٌ مِّنْهُمْ

“কাফ! সম্মানিত কুরআনের শপথ। বরং তারা তাদের মধ্য থেকেই একজন ভয় প্রদর্শনকারী আগমন করেছে দেখে বিস্ময় বোধ করে…..।” (৫০:১ – ২)

یٰمَعْشَرَ الْجِنِّ وَ الْاِنْسِ اَلَمْ یَاْتِکُمْ رُسُلٌ مِّنْکُمْ یَقُصُّوْنَ عَلَیْکُمْ اٰیٰتِیْ وَ یُنْذِرُوْنَکُمْ لِقَآءَ یَوْمِکُمْ هٰذَا ؕ قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤی اَنْفُسِنَا وَ غَرَّتْهُمُ الْحَیٰوۃُ الدُّنْیَا وَ شَهِدُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا کٰفِرِیْنَ ۝ ذٰلِكَ اَنْ لَّمْ یَکُنْ رَّبُّكَ مُہْلِكَ الْقُرٰی بِظُلْمٍ وَّ اَهْلُهَا غٰفِلُوْنَ۝

“হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেনি? যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবে: আমরা স্বীয় গোনাহ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল। এটা এ জন্যে যে, আপনার প্রতিপালক কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে যুলুমের কারণে ধ্বংস করেন না এমতাবস্থায় যে, তথাকার অধিবাসীরা অজ্ঞ থাকে।” (৬:১৩০ – ১৩১)

وَكَذَّبُوْا وَاتَّبَعُوْٓا اَهْوَآءَهُمْ ۚ وَكُلُّ اَمْرٍ مُّسْتَقِرٌّ ۝ وَلَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنَ الْاَنْۢبَآءِ مَا فِيْهِ مُزْدَجَرٌ ۝ حِكْمَةٌۢ بٰلِغَةٌ فَمَا تُغْنِ النُّذُرُ ۝ فَتَوَلَّ عَنْهُمْ ۘ يَوْمَ يَدْعُ الدَّاعِ اِلٰى شَىْءٍ نُّكُرٍ ۝ خُشَّعًا اَبْصٰرُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الاَجْدَاثِ كَاَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ ۝ مُّهْطِعِيْنَ اِلَى الدَّاعِ يَقُوْلُ الْكٰفِرُوْنَ هٰذَا يَوْمٌ عَسِرٌ ۝

“তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল–খুশীর অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরীকৃত হয়। তাদের কাছে এমন সংবাদ এসে গেছে, যাতে সাবধানবাণী রয়েছে। এটা পরিপূর্ণ জ্ঞান, তবে সতর্ককারীগণ তাদের কোন উপকারে আসে না। অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। যেদিন আহ্বানকারী আহ্বান করবে এক অপ্রিয় পরিণামের দিকে, তারা তখন অবনমিত নেত্রে কবর থেকে বের হবে বিক্ষিপ্ত পংগপাল সদৃশ। তারা আহ্বানকারীর  দিকে দৌঁড়াতে থাকবে। কাফেররা বলবে: এটা কঠিন দিন।” (৫৪:৩ – ৮)

قُلْ اِنِّىْ لَنْ يُّجِيْرَنِىْ مِنَ اللهِ اَحَدٌ وَّلَنْ اَجِدَ مِنْ دُوْنِه مُلْتَحَدًا ۝ اِلَّا بَلٰغًا مِّنَ اللهِ وَرِسٰلٰتِه وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَاِنَّ لَه نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا ۝

“(হে নবী) বলুন : আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোন আশ্রয়স্থল পাব না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” (৭২:২২ – ২৩)

وَمَآ اٰتَيْنٰهُمْ مِّنْ كُتُبٍ يَدْرُسُوْنَهَا وَمَاۤ اَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمْ قَبْلَكَ مِنْ نَّذِيْرٍ ۝ وَكَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَمَا بَلَغُوْا مِعْشَارَ مَآ اٰتَيْنٰهُمْ فَكَذَّبُوْا رُسُلِىْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيْرِ ۝ قُلْ اِنَّمَآ اَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ اَنْ تَقُوْمُوْا لِلّٰهِ مَثْنٰى وَفُرٰدٰى ثُمَّ تَتَفَكَّرُوْا قف مَا بِصَاحِبِكُمْ مِّنْ جِنَّةٍ ج اِنْ هُوَ اِلَّا نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ ۝

“আমি তাদেরকে কোন কিতাব দেইনি, যা তারা অধ্যয়ন করবে এবং আপনার পূর্বে তাদের কাছে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করিনি। তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছে। আমি তাদেরকে যা দিয়েছিলাম, এরা তার এক দশমাংশও পায়নি। এরপরও তারা আমার রাসূলগনকে মিথ্যা বলেছে। অতএব কেমন হয়েছে আমার শাস্তি। বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি: তোমরা আল্লাহর নামে এক একজন করে ও দু’ দু’ জন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা–ভাবনা কর –তোমাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই। তিনি তো আসন্ন কাঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেন মাত্র।” (৩৪:৪৪ – ৪৬)

ذٰلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَنْ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰى رَبِّه مَاٰبًا ۝ اِنَّآ اَنْذَرْنٰكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًا يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يٰلَيْتَنِىْ كُنْتُ تُرٰبًا ۝

“এই দিবস সত্য। অতঃপর যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার কাছে ঠিকানা তৈরী করুক। আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা সে সামনে প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবে: হায়, আফসোস – আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।” (৭৮:৩৯ – ৪০)

قُلِ اللّٰهَ اَعْبُدُ مُخْلِصًا لَّہٗ دِیْنِیْ ۝ فَاعْبُدُوْا مَا شِئْتُمْ مِّنْ دُوْنِہٖ ؕ قُلْ اِنَّ الْخٰسِرِیْنَ الَّذِیْنَ خَسِرُوْۤا اَنْفُسَهُمْ وَ اَهْلِیْهِمْ یَوْمَ الْقِیٰمَۃِ ؕ اَلَا ذٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِیْنُ ۝ لَهُمْ مِّنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَ مِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ؕ ذٰلِكَ یُخَوِّفُ اللّٰهُ بِہٖ عِبَادَہٗ ؕ یٰعِبَادِ فَاتَّقُوْنِ۝

বলুন, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তা‘আলারই এবাদত করি। অতএব, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইচ্ছা তার এবাদত কর। বলুন, কেয়ামতের দিন তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা নিজেদের ও পরিবারবর্গের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি। তাদের জন্যে উপর দিক থেকে এবং নীচের দিক থেকে আগুনের মেঘমালা থাকবে। এ শাস্তি দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন যে, হে আমার বান্দাগণ, আমাকে ভয় কর।” (৩৯:১৪ – ১৬)

وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِـَٔايٰتِ رَبِّه فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِىَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ط اِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِىۤ اٰذَانِهِمْ وَقْرًا ط وَاِنْ تَدْعُهُمْ اِلَى الْهُدٰى فَلَنْ يَّهْتَدُوْٓا اِذًا اَبَدًا ۝ وَّرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُوْالرَّحْمَةِ لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوْا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَ ط بَلْ لَّهُمْ مَّوْعِدٌ لَّنْ يَّجِدُوْا مِنْ دُوْنِه مَوْئِلًا ۝

“তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না। আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু, যদি তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে পাকড়াও করেন তবে তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে একটি প্রতিশ্রুত সময়, যা থেকে তারা সরে যাওয়ার জায়গা পাবে না।” (১৮:৫৭ – ৫৮)

 

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উপমাসমূহ

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَـٰذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ مِن كُلِّ مَثَلٍ ۚ وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا۝

“নিশ্চয় আমি এ কুরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।” (১৮:৫৪)

আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর উপদেশ ও সতর্ক বাণীর মর্মার্থ বোঝা ও অনুধাবনের জন্য পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু উপমা বা দৃষ্টান্তের অবতারণা করেছেন। এসব উদাহরণ ও উপমা এ জন্যই দেওয়া হয়েছে যাতে মানুষের অন্তরের দ্বিধা–দ্বন্দের অবসান ঘটে  এবং সহজভাবে আল্লাহর বাণী বোঝার ও হেদায়েত প্রাপ্তির সৌভাগ্য হয়। উপমা সংক্রান্ত এসব আয়াত নিম্নে পেশ করা হলো:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي أَن يَضْرِبَ مَثَلًا مَّا بَعُوضَةً فَمَا فَوْقَهَا ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا فَيَقُولُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَـٰذَا مَثَلًا ۘ يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا ۚ وَمَا يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الْفَاسِقِينَ۝ الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ۝

“আল্লাহ পাক নিঃসন্দেহে মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। বস্তুতঃ যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক। আর যারা কাফের তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহর মতলবই বা কি ছিল। এ দ্বারা আল্লাহ তা’আলা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে সঠিক পথও প্রদর্শন করেন। তিনি অনুরূপ উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন কাকেও বিপথগামী করেন না। (বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ পাক যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত।” (২:২৬–২৭)

مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُونَ ۝ صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ ۝ يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ ۖ كُلَّمَا أَضَاءَ لَهُم مَّشَوْا فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ۝

“তাদের (হেদায়েত–বঞ্ছিত ব্যক্তিবর্গ) অবস্থা সে ব্যক্তির মত, যে লোক কোথাও আগুন জ্বালালো এবং তার চারদিককার সবকিছুকে যখন আগুন স্পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময় আল্লাহ তার চারদিকের আলোকে উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দিলেন। ফলে, তারা কিছুই দেখতে পায় না। তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না। আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত। বিদ্যুতালোকে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল।” (২:১৭–২০)

مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ۝

“যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।” (২:২৬১)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ۝

“হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন–সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।” (২:২৬৪)

وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ۝

“যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন–সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।” (২:২৬৫)

وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً ۚ صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহ্বান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক–ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না।” (২:১৭১)

إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।” (৩:৫৯)

مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِي هَـٰذِهِ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَـٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

“এ দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করা হয়, তার তুলনা হলো ঝড়ো হাওয়ার মতো, যাতে রয়েছে তুষারের শৈত্য, যা সে জাতির শস্যক্ষেত্রে গিয়ে লেগেছে যারা নিজের জন্য মন্দ করেছে। অতঃপর সেগুলোকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের উপর কোন অন্যায় করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করছিল।” (৩:১১৭)

                                                          وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ ۝ وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ ۚ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ۝ سَاءَ مَثَلًا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا يَظْلِمُونَ۝

“আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে। তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।” (৭:১৭৫—১৭৭)

لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ ۖ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ ۚ وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ۝

“সত্যের আহ্বান একমাত্র তাঁরই (আল্লাহর) এবং তাঁকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা তাদের কোন কাজে আসে না; ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ দু’ হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়। অথচ পানি কোন সময় পৌঁছাবে না। কাফেরদের যত আহবান তার সবই পথভ্রষ্টতা।” (১৩:১৪)

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ ۝ تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ۝ وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ۝

“তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন – যাতে তারা চিন্তা–ভাবনা করে। এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই।” (১৪:২৪–২৬)

ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوكًا لَّا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا ۖ هَلْ يَسْتَوُونَ ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ۝ وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَىٰ مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ ۖ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ۙ وَهُوَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ۝

“আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে, কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার রুযী দিয়েছি। অতএব, সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না। আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু’ব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে।” (১৬:৭৫–৭৬)

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا ۝ كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِم مِّنْهُ شَيْئًا ۚ وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا ۝ وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ فَقَالَ لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَنَا أَكْثَرُ مِنكَ مَالًا وَأَعَزُّ نَفَرًا ۝ وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَن تَبِيدَ هَـٰذِهِ أَبَدًا ۝ وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِن رُّدِدتُّ إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنقَلَبًا ۝ قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا ۝ لَّـٰكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا ۝ وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا ۝ فَعَسَىٰ رَبِّي أَن يُؤْتِيَنِ خَيْرًا مِّن جَنَّتِكَ وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاءِ فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا ۝ أَوْ يُصْبِحَ مَاؤُهَا غَوْرًا فَلَن تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا ۝ وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَىٰ مَا أَنفَقَ فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا ۝

“আপনি তাদের কাছে দু’ ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দু’টিকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দু এর মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র। উভয় বাগানই ফলদান করে এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নহর প্রবাহিত করেছি। সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন–সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী। নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বললঃ আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং আমি মনে করি না যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেয়া হয়, তবে সেখানে এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব। তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে? কিন্তু আমি তো একথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরীক মানি না। যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আশাকরি আমার পালকর্তা আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তার (তোমার বাগানের) উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ করবেন। অতঃপর সকাল বেলায় তা পরিষ্কার ময়দান হয়ে যাবে। অথবা সকালে তার পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তুমি তা তালাশ করে আনতে পারবে না। অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।” (১৮:৩২–৪২)

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا ۝

“তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ–বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।” (১৮:৪৫)

يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ۚ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ ۝ مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ۝

“হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন। তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশীল।” (২২:৭৩–৭৪)

اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ ۖ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ ۖ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ ۚ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٍ ۗ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ۝

“আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচপাত্রে স্থাপিত, কাঁচপাত্রটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। তাতে পুতঃপবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল প্রজ্বলিত হয়, যা পূর্বমুখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও তার তৈল যেন আলোকিত হওয়ার নিকটবর্তী। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।” (২৪:৩৫)

وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِندَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ ۗ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ ۝ أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُّجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ سَحَابٌ ۚ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا ۗ وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ ۝

“যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। এমনকি, সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই।” (২৪:৩৯–৪০)

مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا ۖ وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنكَبُوتِ ۖ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ۝ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ۝ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ ۖ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلَّا الْعَالِمُونَ ۝ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّلْمُؤْمِنِينَ ۝

“যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত। তারা আল্লাহর পরিবর্তে যা কিছুকে ডাকে, আল্লাহ তা জানেন। তিনি শক্তিশালী, প্রজ্ঞাময়। এ সকল উদাহরণ আমি মানুষের জন্যে দেই; কিন্তু জ্ঞানীরাই তা বোঝে। আল্লাহ যথার্থরূপে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। এতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে।” (২৯:৪১–৪৪)

ضَرَبَ لَكُم مَّثَلًا مِّنْ أَنفُسِكُمْ ۖ هَل لَّكُم مِّن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُم مِّن شُرَكَاءَ فِي مَا رَزَقْنَاكُمْ فَأَنتُمْ فِيهِ سَوَاءٌ تَخَافُونَهُمْ كَخِيفَتِكُمْ أَنفُسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

“আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই মধ্য থেকে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ তোমাদের আমি যে রুযী দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস–দাসীরা কি তাতে তোমাদের সমান সমান অংশীদার? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ নিজেদের লোককে ভয় কর? এমনিভাবে আমি সমঝদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করি।” (৩০:২৮)

ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

“আল্লাহ এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়জন মালিক রয়েছে, আরেক ব্যক্তির প্রভু মাত্র একজন-তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।” (৩৯:২৯)

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

“তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া–কৌতুক, সাজ–সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।” (৫৭:২০)

مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا ۚ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

“যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।” (৬২:৫)

وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ۝وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِينَ۝

“আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন–পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন। আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন।” (৬৬:১১–১২)

مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ۝

“মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে — চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে — যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।” (৪৮:২৯)

مَثَلُ الْفَرِيقَيْنِ كَالْأَعْمَىٰ وَالْأَصَمِّ وَالْبَصِيرِ وَالسَّمِيعِ ۚ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ۝

 “উভয় পক্ষের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যেমন অন্ধ ও বধির এবং যে দেখতে পায় ও শুনতে পায় উভয়ের অবস্থা কি এক সমান? তবুও তোমরা কি ভেবে দেখ না?” (১১:২৪)

أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ ۝

“তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী। অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে। এবং অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্রের জন্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকে। এমনি ভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।” (১৩:১৭)

مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ ۖ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ ۝

“পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার উপমা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল–মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” (৪৭:১৫)

لَوْ أَنزَلْنَا هَـٰذَا الْقُرْآنَ عَلَىٰ جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ ۚ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

“যদি আমি এই কুরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা–ভাবনা করে।” (৫৯:২১)

 

মানব জাতির উপর পবিত্র কুরআনের প্রভাব

সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের নিমিত্তেই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর সর্বশেষ কিতাব কুরআন নাযিল করেছেন। মানব জাতির সামনে রয়েছে কুরআনে বর্ণিত ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সুসংবাদ ও সতর্কতামূলক বাণী ও আল্লাহ্ তায়ালার ওয়াদাসমূহ। এসবের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ও আমল মানব জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং দুনিয়ার জীবনকে সংশোধিত, পরিশুদ্ধ, সংস্কারমুক্ত, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত করতে সহায়তা করে। পবিত্র কুরআন সব কুসংস্কার ও মূর্খতার অবসান ঘটায়, ঐশী জ্ঞানার্জনের পথকে উম্মোচিত করে এবং সত্যের সাথে মিথ্যার দ্বন্দের ফয়সালা করে। তাই মানব জাতির উপর পবিত্র কুরআনের প্রভাব অপরিসীম। এর সমর্থনে হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা) বর্ণিত রাসূলুল্লাহর (সা) হাদীসে উল্লেখ আছে, ʼআল্লাহ্ এ কিতাব (কুরআন) দিয়েই কোন জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেন, আবার (একে অবহেলা করার কারণে) কোন জাতিকে কুরআন দিয়েই উন্নতির আসন থেকে নীচে নামিয়ে আনেন (সহীহ মুসলিম)।ʼ মাত্র তেইশ বছরের নবুওতি জীবনে মহানবী (সা) বিশ্বব্যাপী যে মহাবিপ্লব সংঘটিত করেছেন তার মূলে ছিল এই কুরআনের প্রভাব। পবিত্র কুরআনের শিক্ষার ভিত্তিতে তিনি একটি বর্বর জাতিকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জাতিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তৎকালীন বিশ্বে ইসলামের আধ্যাত্মিক শক্তির এমনই বিকাশ ঘটেছিল যার বিকীরণ সমগ্র বিশ্বকে উদ্ভাসিত করে দেয়। প্রকৃত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপর কুরআনের এ বিস্ময়কর প্রভাব চিরন্তন।

প্রকৃতপক্ষে কুরআনে বর্ণিত তাক্বওয়া মানব জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের উপায়। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি বাণীই গুরুত্বপূর্ণ এবং মানব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পবিত্র কুরআন হলো রহমত ও বরকতের এক চিরন্তন ফল্গুধারা যা মুসলমানদেরকে জীবনভর আপ্লুত করে রেখেছে। নব্য ভুমিষ্ট শিশুর কানে আযান দিয়ে তার যে জীবন শুরু করা হয় সে শিশুটি ধীরে ধীরে কুরআন শিক্ষা ও অধ্যয়নের মাধ্যমে বড় হয়ে ওঠে, কুরআনের নৈতিক শিক্ষা তার কর্ম জীবনকে প্রভাবিত করে, তারপর শরীয়তসম্মত বিয়ের মাধ্যমে গঠিত হয় এক নতুন সংসার জীবন যা কুরআনের আলোকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তার জীবিকার্জন, আয়–ব্যয়, খাদ্য ও পানীয়, বেশভূষা, আচার–আচরণ তথা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ড কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হয়। আখিরাতের জবাবদিহিতাকে সামনে রেখে তার ইবাদত–বন্দেগী, সামাজিক ও অন্যসব কর্মকান্ড চলে। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে কলেমা শাহাদতের বাণী মুখে উচ্চারিত হয় এবং জানাযার নামাজের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে তার চির বিদায় সম্পন্ন হয়। এভাবেই একজন মুসলিমের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন কুরআনময় হয়ে ওঠে। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মু’মিন বান্দার প্রতিটি কাজেই কুরআনের প্রভাব অপরিসীম।

এতদসম্পর্কিত আয়াতসমূহ নিম্নে পেশ করা হলো:

يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِى وَالِدٌ عَنْ وَلَدِه وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَالِدِه شَيْـًٔا اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَوٰةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِاللهِ الْغَرُوْرُ۝

“হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা–পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবেনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।” (৩১:৩৩)

لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ۝

“আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কর্মকৌশল শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।” (৩:১৬৪)

وَالَّذِىْ اَوْحَيْنَآ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتٰبِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِه لَخَبِيْرٌۢ بَصِيْرٌ ۝ ثُمَّ اَوْرَثْنَا الْكِتٰبَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِه وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ وَّمِنْهُمْ سَابِقٌۢ بِالْخَيْرٰتِ بِاِذْنِ اللهِ ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ ۝

“আমি আপনার প্রতি যে কিতাব প্রত্যাদেশ করেছি, তা সত্য– পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সব জানেন, দেখেন। অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করেছি তাদেরকে যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেছি। তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নির্দেশক্রমে কল্যাণের পথে এগিয়ে গেছে। এটাই মহা অনুগ্রহ।” (৩৫:৩১ – ৩২)

 

চিন্তাশীল  সম্প্রদায়ের প্রতি কুরআনের আহ্বান

এ কুরআন অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাশীল মানুষের জন্য এক উদাত্ত আহ্বানকারী। মুক্ত চিন্তা, যৌক্তিক ভাবনা, কুসংস্কার–বর্জিত মন এবং উন্নত মানসিকতার প্রতি কুরআনের আহ্বান সার্বজনীন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সৃষ্ট এ বিশ্বজগৎ এবং এগুলোর মধ্যে বিদ্যমান কোন কিছুই তিনি নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। সৃষ্টির মাহাত্ম্য, এর কলা–কৌশল ও নৈপুণ্য বোঝার জন্য, এবং এসবের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তিনি পবিত্র কুরআনে বারবার মানব সমাজের চিন্তাশীল সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহর মনোনীত খলীফা (প্রতিনিধি) হিসেবে মানুষ যাতে এ পৃথিবীতে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ না হয় সে জন্যেই মহান আল্লাহর এ আহ্বান।

পবিত্র কুরআন থেকে বেশী বেশী অনুপ্রেরণা লাভ করতে হলে এর নিয়মিত পাঠক হতে হবে এবং এর অর্থ ও তফসীরের প্রতি মনযোগ দিতে হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিদর্শনসমূহ অনুধাবন করতে হলে কুরআন অধ্যয়ন ও এর ওপর চিন্তা–গবেষণা একান্ত প্রয়োজন। কুরআন মানুষকে এ তাগিদই দেয়। জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল সম্প্রদায় কুরআন চর্চার দ্বারা মানব সমাজের প্রভূত উপকার সাধন করতে পারেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট মানবসমাজ জাগতিক উন্নয়নের ব্যাপারে এতটাই মশগুল যে, তাদের কাছে পরকালীন চিরন্তন জীবন চরমভাবে উপেক্ষিত। ফলে বিশ্ব জুড়ে দ্বন্দ–সংঘর্ষ, হানাহানি, শোষণ ও বঞ্চনার এমন এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যা মানুষের আত্মার শান্তিকে করেছে বিনষ্ট। এহেন পরিস্থিতিতে পবিত্র কুরআন মানবজাতিকে উপহার দিয়েছে এক ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শে এ জীবন ব্যবস্থাই দিতে পারে ইহকালীন ও পরকালীন শান্তির বার্তা এবং করতে পারে সকল সমস্যার সমাধান।

চিন্তাশীল মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর আহ্বান সম্পর্কিত আয়াতগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ۝

“আমি কুরআনকে বুঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, একে অনুধাবন করার জন্য কোন চিন্তাশীল আছে কি?।” (৫৪:১৭)

ذَا بَلٰغٌ لِّلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوْا بِه وَلِيَعْلَمُوْٓا اَنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وٰحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ اُوْلُوْا الْاَلْبٰبِ۝

“এটা মানুষের একটি বার্তা এবং যাতে এর দ্বারা ওরা সতর্ক হয় এবং জানতে পারে যে, তিনিই একমাত্র উপাস্য – এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশগ্রহণ করে।” (১৪:৫২)

اِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِىْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ فِىْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مَا مِنْ شَفِيْعٍ اِلَّا مِنْۢ بَعْدِ اِذْنِه ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ۝

“নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পারবে না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না?” (১০:৩)

كِتٰبٌ اَنْزَلْنٰهُ اِلَيْكَ مُبٰرَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْۤا اٰيٰتِه وَلِيْتَذَكَّرَ اُوْلُوْا الْاَلْبَابِ ۝

“এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।” (৩৮:২৯)

قُلْ هُوَ الَّذِىۤ اَنْشَاَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصٰرَ وَالْاَفْـِٔدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ۝

“(হে নবী) আপনি বলে দিন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তোমাদের (শোনা ও দেখার জন্য) কান ও চোখ দিয়েছেন, (চিন্তা করার মতো) দিয়েছেন একটি অন্তর; কিন্তু তোমরা (এসব দানের) শুকরিয়া কমই আদায় করো।” (৬৭:২৩)

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِى هٰذَا الْقُرْاٰنِ لِلنَّاسِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ ط وَكَانَ الْاِنْسٰنُ اَكْثَرَ شَىْءٍ جَدَلًا۝

“নিশ্চয় আমি এ কুরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। কিন্তু মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।” (১৮:৫৪)

وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِى هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ ۝ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِى عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ ۝

“আমি এ কুরআনে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা অনুধাবন করে; আরবী ভাষায় এ কুরআন জটিলতামুক্ত, যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে।” (৩৯:২৭ – ২৮)।

اِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰى يُخْرِجُ الْحَىَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَىِّ ج ذٰلِكُمُ اللهُ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ ۝ فَالِقُ الْاِصْبَاحِ وَجَعَلَ الَّيْلَ سَكَنًاوَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَحُسْبَانًاۚ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ ۝ وَهُوَ الَّذِىْ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوْمَ لِتَهْتَدُوْا بِهَا فِىْ ظُلُمٰتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِۗ قَدْ فَصَّلْنَاالْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ ۝

˝নিশ্চয় আল্লাহই বীজ ও আঁটি থেকে অঙ্কুর সৃষ্টিকারী; তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন ও মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ, অতঃপর তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর নির্ধারণ। তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।” (৬:৯৫ – ৯৭)

اِنَّ فِىْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلٰفِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِىْ تَجْرِىْ فِى الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَآ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ مَّآءٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَآبَّةٍ ص وَتَصْرِيْفِ الرِّيٰحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ۝

“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ¦ারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব–জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার (সঞ্চালনে) যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।” (২:১৬৪)

اِنَّ فِى السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ لَاٰيٰتٍ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ۝ وَفِىْ خَلْقِكُمْ وَمَا يَبُثُّ مِنْ دَآبَّةٍ اٰيٰتٌ لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ ۝ وَاخْتِلٰفِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَآ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ رِّزْقٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيٰحِ اٰيٰتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ۝ تِلْكَ اٰيٰتُ اللهِ نَتْلُوْهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ فَبِاَىِّ حَدِيْثٍۭ بَعْدَ اللهِ وَاٰيٰتِه يُؤْمِنُوْنَ ۝

“নিশ্চয় নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে মু’মিনদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। আর তোমাদের সৃষ্টিতে এবং চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীবজন্তুর সৃজনের মধ্যেও নিদর্শনাবলী রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য। দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (৪৫:৩ – ৫)

اَللهُ الَّذِىْ سَخَّرَ لَكُمُ الْبَحْرَ لِتَجْرِىَ الْفُلْكُ فِيْهِ بِاَمْرِه وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ۝ وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا مِّنْهُ ۚ اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ ۝

“তিনি আল্লাহ যিনি সমুদ্রকে তোমাদের উপকারার্থে আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর আদেশক্রমে তাতে জাহাজ চলাচল করে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (৪৫:১২ – ১৩)

وَهُوَ الَّذِىْ يُرْسِلُ الرِّيٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِه حَتّٰۤى اِذَآ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنٰهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِه مِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ ۚ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ ۝ وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُه بِاِذْنِ رَبِّه وَالَّذِىْ خَبُثَ لَا يَخْرُجُ اِلَّا نَكِدًا ۚ كَذٰلِكَ نُصَرِّفُ الْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّشْكُرُوْنَ ۝

“তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ণ মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনিভাবে মৃতদেরকে বের করব – যাতে তোমরা চিন্তা কর। যে শহর উৎকৃষ্ট, তার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফসল উৎপন্ন হয়। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্যে।” (৭:৫৭ – ৫৮)

اَللهُ الَّذِىْ رَفَعَ السَّمٰوٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَّجْرِىْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْاَمْرَ يُفَصِّلُ الْاٰيٰتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَآءِ رَبِّكُمْ تُوْقِنُوْنَ ۝ وَهُوَ الَّذِىْ مَدَّ الْاَرْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوٰسِىَ وَاَنْهٰرًا وَّمِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِى الَّيْلَ النَّهَارَ ۚ اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ۝ وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجٰوِرٰتٌ وَجَنّٰتٌ مِنْ اَعْنٰبٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِ ۚ اِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ۝

“আল্লাহ, যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। তিনিই ভূমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ–নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু’ প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা করে। এবং যমিনে বিভিন্ন শস্য ক্ষেত্র রয়েছে – একটি অপরটির সাথে সংলগ্ন এবং আঙুরের বাগান আছে আর শস্য ও খর্জুর রয়েছে – একটির মূল অপরটির সাথে মিলিত এবং কতক মিলিত নয়। এগুলোকে একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়। আর আমি স্বাদে একটিকে অপরটির চাইতে উৎকৃষ্টতর করে দেই। এগুলোর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে।” (১৩:২ – ৪)

اَفَلَا يَنْظُرُوْنَ اِلَى الْاِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ ۝ وَاِلَى السَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَتْ ۝ وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ ۝ وَاِلَى الْاَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ ۝

“তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে।” (৮৮:১৭ – ২০)

وَهُوَ الَّذِىْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصٰرَ وَالْاَفْـِٔدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ۝ وَهُوَ الَّذِىْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَرْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ۝ وَهُوَ الَّذِىْ يُحْى وَيُمِيْتُ وَلَهُ اخْتِلٰفُ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ۝

“তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা খুবই অল্প কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাক। তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখেছেন এবং তারই দিকে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা–রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি তোমরা বুঝবে না।” (২৩:৭৮ – ৮০)

لَقَدْ اَنْزَلْنَا اِلَيْكُمْ كِتبًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ۝

“আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে রয়েছে তোমাদের (সবার) জন্যে উপদেশবার্তা। তোমরা কি বোঝ না?” (২১:১০)

اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْانَ اَمْ عَلى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا۝

“তারা কি কুরআনকে বুঝার জন্য গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।” (৪৭:২৪)?

اَفَلَمْ یَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ اَمْ جَآءَهُمْ مَّا لَمْ یَاْتِ اٰبَآءَهُمُ الْاَوَّلِیْنَ ۝ اَمْ لَمْ یَعْرِفُوْا رَسُوْلَهُمْ فَهُمْ لَہٗ مُنْكِرُوْنَ ۝ اَمْ یَقُوْلُوْنَ بِہٖ جِنَّۃٌ ؕ بَلْ جَآءَهُمْ بِالْحَقِّ وَ اَکْثَرُهُمْ لِلْحَقِّ کٰرِهُوْنَ ۝ وَ لَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ اَهْوَآءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ وَ مَنْ فِیْهِنَّ ؕ بَلْ اَتَیْنٰهُمْ بِذِکْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِکْرِهِمْ مُّعْرِضُوْنَ۝

“অতএব তারা কি এই কালাম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? না তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি? না তারা তাদের রাসূলকে চেনে না, ফলে তারা তাঁকে অস্বীকার করে? না তারা বলে যে, তিনি পাগল ? বরং তিনি তাদের কাছে সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে। সত্য যদি তাদের কাছে কামনা–বাসনার অনুসারী হত, তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। বরং আমি তাদেরকে দান করেছি উপদেশ, কিন্তু তারা তাদের উপদেশ অনুধাবন করে না।” (২৩:৬৮ – ৭১)

وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الجِنِّ وَالْاِنْسِ ز لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاۤ ز اُوْلٰٓئِكَ كَالْاَنْعٰمِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ ط اُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ۝

“আর আমি বহু জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।” (৭:১৭৯)

 

মানবজাতির প্রতি আল্লাহর নির্দেশনামা

মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মানুষের প্রতি নির্দেশাবলী জারী করেছেন। এগুলো আল্লাহর দ্বীনের মৌলিক ও অতীব জরুরী নির্দেশনা এবং শিক্ষণীয় বিষয় যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও উল্লেখিত হয়েছিল। এ নির্দেশনামায় মহাপাপ থেকে বেঁচে থাকার বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত যা মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ সুনিশ্চিত করে। যেমন, শিরক ও কুফর এবং অধার্মিকতা থেকে বেঁচে থাকা, মাতাপিতার প্রতি অসম্মান ও অশ্রদ্ধা পোষণ না করা, এবং খুন–যখম, জুলুম–অত্যাচার, ফেতনা–ফ্যাসাদ, চুরি–প্রতারণা, যেনা–ব্যভিচার, মিথ্যাচার–বেইনসাফি, গীবত–অপবাদ, হিংসা–বিদ্বেষ, হকদারের হক বিনষ্টকরণ, ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত না হওয়া। আল্লাহ্ মানুষকে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার তাগিদ দিয়েছেন যাতে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থকে। এতদ্সংক্রান্ত আয়াতগুলো নিম্নে পেশ করা হলো:

قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّکُمْ عَلَیْکُمْ اَلَّا تُشْرِکُوْا بِہٖ شَیْئًا وَبِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا ۚ  وَلَا تَقْتُلُوْۤا اَوْلَادَکُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍ ؕ نَحْنُ نَرْزُقُکُمْ وَاِیَّاهُمْ ۚ  وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۚ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالْحَقِّ ؕ ذٰلِکُمْ وَصّٰکُمْ بِہٖ لَعَلَّکُمْ تَعْقِلُوْنَ۝ وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّہٗ ۚ وَاَوْفُوا الْكَیْلَ وَالْمِیْزَانَ بِالْقِسْطِ ۚ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا ۚ وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰی ۚ وَبِعَہْدِ اللّٰهِ اَوْفُوْا ؕ ذٰلِکُمْ وَصّٰکُمْ بِہٖ لَعَلَّکُمْ تَذَكَرُوْنَ ۝ وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیْ مُسْتَقِیْمًا فَاتَّبِعُوْهُ ۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِکُمْ عَنْ سَبِیْلِہٖ ؕ ذٰلِکُمْ وَصّٰکُمْ بِہٖ لَعَلَّکُمْ تَتَّقُوْنَ۝

“আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা–মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ। এতীমদের ধনসম্পদের কাছেও যেয়ো না; কিন্তু উত্তম পন্থায় যে পর্যন্ত সে বয়ঃপ্রাপ্ত না হয়। ওজন ও মাপ পূর্ণ কর ন্যায় সহকারে। আমি কাউকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেই না। যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্নীয়ও হয়। আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও।” (৬:১৫১ – ১৫৩)

فَاعْلَمْ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِیْنَ وَالْمُؤْمِنٰتِ ؕ وَاللّٰهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَکُمْ وَ مَثْوٰىکُمْ ۝

“জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।” (৪৭:১৯)

اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُ بِالْعَدْلِ وَ الْاِحْسَانِ وَ اِیْتَآیِٔ ذِی الْقُرْبٰی وَ یَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْیِ ۚ یَعِظُکُمْ  لَعَلَّکُمْ  تَذَكَرُوْنَ ۝

“আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” (১৬:৯০)

وَ قَضٰی رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا ؕ اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا۝وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَۃِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرً ۝

“তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্বব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (১৭:২৩–২৪)

وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا ۝ إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا

“আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।” (১৭:২৬–২৭)

وَ اِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَآءَ رَحْمَۃٍ مِّنْ رَّبِّكَ تَرْجُوْهَا فَقُلْ لَّهُمْ قَوْلًا مَّیْسُوْرًا۝

“এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে (দুঃস্থ) বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল।” (১৭:২৮)

وَ لَا تَجْعَلْ یَدَكَ مَغْلُوْلَۃً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبْسُطْهَا کُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا۝

“তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ (কৃপণ) হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।” (১৭:২৯)

وَلَا تَقْتُلُوْۤا  اَوْلَادَکُمْ  خَشْیَۃَ  اِمْلَاقٍ ؕ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ  وَاِیَّاکُمْ ؕ     اِنَّ  قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْاً كَبِیْرًا۝

“দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ।” (১৭:৩১)

وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ كَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیْلًا۝

“আর ব্যভিচারের ধারে–কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (১৭:৩২)

وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالْحَقِّ ؕ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُوْمًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِیِّہٖ سُلْطٰنًا فَلَا یُسْرِفْ فِّی الْقَتْلِ ؕ اِنَّہٗ كَانَ مَنْصُوْرًا۝

“সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত।” (১৭:৩৩)

وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّہٗ ۪ص وَاَوْفُوْا بِالْعَہْدِ ۚ اِنَّ الْعَہْدَ كَانَ مَسْـُٔوْلًا۝

“আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাঙ্খা ছাড়া — যতক্ষণ না সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয় এবং অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (১৭:৩৪)

وَ اَوْفُوا الْكَیْلَ اِذَا كِلْتُمْ وَ زِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِیْمِ ؕ ذٰلِكَ خَیْرٌ وَّ اَحْسَنُ تَاْوِیْلًا۝

“মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ।” (১৭:৩৫)

وَلَا تَقْفُ مَا لَیْسَ لَكَ بِہٖ عِلْمٌ ؕ  اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ کُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ  مَسْـُٔوْلًا۝

“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (১৭:৩৬)

وَ لَا تَمْشِ فِی الْاَرْضِ مَرَحًا ۚ اِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْاَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا ۝

“পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।” (১৭:৩৭)

وَ لَا تَجْعَلْ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتُلْقٰی فِیْ جَهَنَّمَ مَلُوْمًا مَّدْحُوْرًا۝

“………. আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন।” (১৭:৩৯)

وَلَا تَجْعَلُوا اللّٰهَ عُرْضَۃً لِّاَیْمَانِکُمْ اَنْ تَبَرُّوْا وَتَتَّقُوْا وَتُصْلِحُوْا بَیْنَ النَّاسِ ؕ وَاللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۝

“আর নিজেদের শপথের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না মানুষের সাথে কোন আচার আচরণ থেকে পরহেযগারী থেকে এবং মানুষের মাঝে মীমাংসা করে দেয়া থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ সবকিছুই শুনেন ও জানেন।” (২:২২৪)

وَإِن كُنتُمْ عَلَىٰ سَفَرٍ وَلَمْ تَجِدُوا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوضَةٌ ۖ فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ

“আর তোমরা যদি প্রবাসে থাক এবং কোন লেখক না পাও তবে বন্ধকী বন্তু হস্তগত রাখা উচিত। যদি একে অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়, তার উচিত অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করা এবং স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় কর।” …… (২:২৮৩)

وَ لَا تَکْتُمُوْا الشَّهَادَۃَ ؕ وَمَنْ یَّکْتُمْهَا فَاِنَّہٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُہٗ ؕ وَاللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِیْمٌ ۝

“……….. তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা করা, আল্লাহ সে সম্পর্কে খুব জ্ঞাত।” (২:২৮৩)

اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُکُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهْلِهَا ۙ وَاِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ اَنْ تَحْکُمُوْا بِالْعَدْلِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُکُمْ بِہٖ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِیْعًۢا بَصِیْرًا ۝

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।” (৪:৫৮)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِیْرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ  اِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوْا وَلَا یَغْتَبْ بَّعْضُکُمْ بَعْضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمْ اَنْ یَّاْکُلَ لَحْمَ اَخِیْهِ مَیْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ ؕ وَاتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیْمٌ ۝

“মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (৪৯:১২)

خُذِ الْعَفْوَ وَ اْمُرْ بِالْعُرْفِ وَ اَعْرِضْ عَنِ  الْجٰهِلِیْنَ۝

“আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।” (৭:১৯৯)

  اَقِمِ الصَّلٰوۃَ  وَ اْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ انْهَ  عَنِ الْمُنْكَرِ وَ اصْبِرْ عَلٰی مَاۤ اَصَابَكَ ؕ اِنَّ  ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ  الْاُمُوْرِ ۝

“…… নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।” (৩১:১৭)

অধ্যায়সমূহ